Page: 164

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৬৪

গোলোকে ডাকিয়া বলে দেবী শান্তিমাতা।
মরিতে চাহিলি এবে শীত গেল কোথা।।
গোলোক চরণে পড়ি বলেছে ভারতী।
জনমে জনমে যেন পদে থাকে মতি।।
হরিচাঁদ লীলাকথা সুধাধিক সুধা।
রচিল তারক পুষ্করিণী ঘাট বাঁধা।।


শ্রীমৎ গোলোক গোস্বামীর মানবলীলা সম্বরণ।

পয়ার।

পাগলের পেটে ছিল দুরন্ত বেদনা।
সময় সময় হ’ত একান্ত যাতনা।।
ফুফুরা নিবাসী শ্রী ঈশ্বর অধিকারী।
পাগলের যাওয়া আসা ছিল সেই বাড়ী।।
চৈত্রমাসে সে বাড়ীতে গোস্বামী আসিয়া।
অধিকারী মহাশয় সঙ্গেতে মিলিয়া।।
সেই দিন অধিকারী বাটীতে ছিলেন।
উভয় মিলিয়া নদীকূলে আসিলেন।।
মধুমতী নদীকূলে ঘাট একখান।
পাগল করিত এসে সেই ঘাটে স্নান।।
অধিকারী মহাশয় মাতিলেন মতে।
বড় আর্তি হ’ল তার পাগলের সাথে।।
হরিচাঁদ প্রভু মোর ঈশ্বরাবতাংশ।
ঈশ্বরাধিকারী প্রভু পিতৃগুরুবংশ।।
প্রভু হরিচাঁদ হ’ন বাঞ্ছাকল্পতরু।
অধিকারী মহাশয় প্রভু-পিতৃগুরু।।
মতুয়া হইয়া গেল বলি হরিবোল।
নিজ পরিবার সহ মাতিল সকল।।
পূর্বাপর বংশ তাঁর সকল মহৎ।
ওঢ়াকাঁদি মুখ হ’য়ে করে দণ্ডবৎ।।
তাহার রমণী পাগলেরে বড় মানে।
ভক্তিযুক্ত চিত্ত সদা প্রাণতুল্য জানে।।
ঈশ্বরচন্দ্রের পুত্র শ্রীরাইচরণ।
জ্যেষ্ঠা কন্যা দেবীরাণী শ্যামলা বরণ।।
পুত্র কন্যা পরিবার সবে পুলকিত।
হরি হরি বলিতে শরীর রোমাঞ্চিত।।
দিবানিশি প্রেমোন্মত্ত বলে হরিবোল।
পাগলের জন্যে যেন হইল পাগল।।
পাগলে দেখিলে গললগ্নী কৃতবাসে।
হরি বলে নাচে গায় পরম হরিষে।।
অধিকারী ঠাকুরানীর কোলেতে বসিয়া।
মাই খায় পাগল ডাকেন মা বলিয়া।।
একদিন ঠাকুরানী সঙ্গেতে পাগল।
নদীকূলে ঘাটে বসে বলে হরিবোল।।
পাগল বলেছে মাগো হেন মনে লয়।
এই ঘাটে বসে যেন হ’য়ে যাই লয়।।
আর দিন অধিকারী সঙ্গেতে আসিল।
নদীকূলে সেই ঘাটে পাগল বসিল।।
পাগল বলেছে হ’ব এই ঘাটে লয়।
মনে ভাবি গঙ্গাদেবী লয় কিনা লয়।।
বলা কহা করি অধিকারীর সঙ্গেতে।
বলে আর ইচ্ছা নাই এদেশে থাকিতে।।
সময় সময় মোর উঠে যে বেদনা।
অসহ্য হয়ে উঠে বেদনা যাতনা।।
বেদনায় এ শরীরে নাহি সহে টান।
মনে বলে এইবার ত্যজিব পরাণ।।
এ সব বারতা তথা বলা কহা করি।
পরদিন পাগল চলিল নিজ বাড়ী।।
বাড়ী গিয়া জনে জনে বলিল সবারে।
পশ্চিমে যাইব আমি ভেবেছি অন্তরে।।
নবগঙ্গা নদী আমি বড় ভালোবাসি।
এইবার যা’ব ফিরে আসি কিনা আসি।।
মধুমতী পূর্বাপর প্রতি ঘরে ঘরে।
ভালোবাসা যত ছিল বলিল সবারে।।
সাতই বৈশাখ দিন ফুফুরা আসিয়া।
অধিকারী ঠাকুরকে বাড়ী না দেখিয়া।।
রাই দেবযানী আর মাতা ঠাকুরানী।
সবাকারে পাগল বলিল মিষ্ট বাণী।।
মনে মনে করিয়াছিলাম এই ধার্য।
এই ঘাটে আমি করিতাম এক কার্য।।
তাহা না হইল অধিকারী বাড়ী নাই।
তোমাদের কষ্ট হবে পশ্চিমেতে যাই।।
সকলে লইয়া নিশি বাঞ্চিলেন প্রেমে।
নিশি ভোর করিল মাতিয়া হরিনামে।।
তারাইল কবিগান করিল তারক।
সেই স্থানে উপনীত গোস্বামী গোলোক।।
মেলা মিলিয়াছে তারাইলের বাজারে।
সদলে তারক এল গান গাইবারে।।
একপালা হইয়াছে সাতই বৈশাখে।
আর একপালা হবে নয়ই তারিখে।।