Page: 196

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৯৬
পথ হ’তে আগুলিল গোস্বামী গোলোক।
শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত রচিল তারক।।
শ্রীমত্তারকের বিবাহ
পয়ার
তারকের বিবাহ করিতে ইচ্ছা নাই।
বিবাহ করিতে হবে কহেন গোঁসাই।।
অনেকে অনেক কহে বিয়া করিবারে।
আজীবন তারকের প্রতিজ্ঞা অন্তরে।।
বিবাহ করিতে প্রভু বল কি কারণ।
না করিব বিবাহ করেছি এই পণ।।
প্রভু কন যদি এই ভবে আসিলাম।
ভাবি মনে এক খেলা খেলিয়া গেলাম।।
চতুর্বিধ ধর্ম মধ্যে প্রধান গার্হস্থ্য।
গৃহস্থ ধার্মিক কর্ম অতি সুপ্রশস্ত।।
লোকে কহে ভ্রমি বারো ঘরে বসি তের।
এবার গৃহস্থ ধর্ম যোগে যত পার।।
তারক বলেন হরি বিবাহ করিব।
গৃহিণী গ্রহণ কৈলে পাশ-বদ্ধ হ’ব।।
অর্থ লোভে নারী লোভে কামাসক্ত হ’য়ে।
তব নাম প্রেম সব যাইব ভুলিয়ে।।
প্রভু কন মম বাক্যে বিবাহ করিলে।
নাম প্রেম বৃদ্ধি হ’বে মম বাক্য বলে।।
আমারে আদর করি করে পাপ কর্ম।
আমার ইচ্ছায় সেই হয় মহাধর্ম।।
মোরে অনাদর করি করে মহাধর্ম।
আমার ইচ্ছায় সেই হয় পাপকর্ম।।
এ বড় নিগূঢ় তত্ত্ব প্রভু মুখ বাক্য।
তদ্রুপ আমার বাক্য হৃদে কর ঐক্য।।
যদি অর্থ নারী লোভে মোরে ভুলে যাবি।
তবু মম দয়া বলে আমাকে পাইবি।।
তারক কহিছে মোর অর্থ কিছু নাই।
কেনা বেচা করি দিন আনি দিন খাই।।
প্রভু হরিচাঁদ কহে তাতে কেন ভাব।
যত অর্থ লাগে তাহা আমি তোরে দিব।।
বিবাহ করিতে প্রভু কন বার বার।
তারক বলেন যেই ইচ্ছা আপনার।।
আসিলেন মৃত্যুঞ্জয় সূর্যনারায়ণ।
প্রভু দু’জনারে কহে সব বিবরণ।।
তোমরা দু’জনে যাও সম্বন্ধ করিতে।
একেবারে চলে যাও ভাঙ্গুড়া গ্রামেতে।।
অগ্রে যাও গঙ্গারামপুর গ্রাম মাঝ।
যে মেয়ে শুনিবে কথা ক’র সেই কাজ।।
তারক চলিল দু’জনারে সঙ্গে ল’য়ে।
গঙ্গারামপুর গ্রামে উত্তরিল গিয়ে।।
সনাতন পাটনি সে দেখিতে পাইল।
সমাদর করি তার বাটী ল’য়ে গেল।।
বলে দয়া করি হেথা করুণ ভোজন।
সনাতন করিল পাকের আয়োজন।।
সেই গ্রামে শ্রীগোবিন্দ নামে ভট্টাচার্য।
তার বাটী হইতেছে তুলটাদি কার্য।।
একমাস পুঁথি হ’ল অদ্য উদযাপন।
এই বাড়ী পুঁথি হবে কহে সনাতন।।
সেই বাড়ী চলিলেন পুঁথি শুনিবারে।
চারি জন এক ঠাই বসে একত্তরে।।
পুঁথি কহে কথক বসিয়া ব্যাসাসনে।
মহাপ্রভু হরিচাঁদ বসে সেই খানে।।
মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস স্বচক্ষে দেখে তাই।
সেই পাঠ সাঙ্গ হ’লে আর দেখা নাই।।
মধ্যাহ্ন ভোজন করি ভাঙ্গুড়া আইল।
কৃষ্ণমোহনের বাড়ী উপনীত হ’ল।।
বলিলেন মৃত্যুঞ্জয় কৃষ্ণমোহনেরে।
এক মেয়ে চাহি মোরা এ ছেলের তরে।।
কহেন কৃষ্ণমোহন আছে এক মেয়ে।
ছেলের লবে না মন সে মেয়ে দেখিয়ে।।
কৃষ্ণ বর্ণা মেয়ে তত শ্রীমতিও নয়।
সে মেয়ে লন যদি তবে দেওয়া যায়।।
মৃত্যুঞ্জয় বলে মোরা শ্রীমতি না চাই।
কথা যদি শুনে তবে মেয়ে ল’য়ে যাই।।
আসিবার কালে ব’লে দিলেন ঠাকুর।
মেয়ে দেখিবারে যাও গঙ্গারামপুর।।
মেয়ে দেখি তথা হ’তে ভাঙ্গুড়া যাইও।
যেই মেয়ে কথা শুনে সে মেয়ে আনিও।।
কৃষ্ণমোহন বলে আমি সাথে সাথে যা’ব।
কি লইয়া যা’বে তথা সম্বন্ধের ভাব।।
বাতাসা লইতে হ’বে সে বাড়ী যাইতে।
তারক বলিল কপর্দক নাই সাথে।।
সোয়াসের বাতাসা লাগিবে পাঁচ আনা।
অবাক হইয়া বসি র’ল তিনজনা।।