Page: 069

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৬৯

পরে লইলেন ভক্ত শ্রীরামলোচন।
কবি কহে হরি হরি বল সর্বজন।।


রাম লোচনের বাটী মহোৎসব ও চৈতন্যবালার দর্প চূর্ণ।

পয়ার।

রামলোচনের বাটী স্বজাতি ভোজন।
গ্রামবাসী সবে আসি করে আয়োজন।।
বামাগণে আসে সবে পাক করিবারে।
চৈতন্য প্রধান জ্ঞানী গ্রামের উপরে।।
সকলে রাখিল ভার তাহার উপর।
যাহাতে হইবে এই কার্য্যের সুসার।।
রামচাঁদ আর রামলোচন বিশ্বাস।
শ্রীনবদ্বীপেতে যেন রামাই শ্রীবাস।।
ভাই ভাই ঠিক যেন তেমতি মিলন।
সেই দিন সেই বাটী প্রভু আগমন।।
মহা সমারোহে হবে স্বজাতি ভোজন।
পাকশালে পাক করে যত বামাগণ।।
এমন সময় প্রভু ভক্তগণ সঙ্গে।
রামলোচনের বাটী উত্তরিল রঙ্গে।।
শ্রীরামলোচন হয় কার্য্যকরণালা।
কার্য্যদক্ষ কর্ত্তৃপক্ষ শ্রীচৈতন্য বালা।।
হুকুম ক’রেছে কার্য্য করিবার তরে।
যাকে যাহা ব’লেছেন সেই তাহা করে।।
প্রাণপণে খাটিতেছে নাহিক বিরাম।
বাটীর ভিতর হইতেছে ধুমধাম।।
কোন নারী কক্ষে কুম্ভ আনিতেছে বারি।
কেহ ঝাল বাটে কেহ কাটে তরকারি।।
কেহ ভারে ভারে ধৌত করিছে তণ্ডুল।
কেহ দেয় কেহ লয় ধুতেছে ডাউল।।
ঠাকুর আসিল জয় হরিবোল বলে।
ভক্তগণ সংকীর্ত্তন করে কুতূহলে।।
বাটীতে কাজের লোক যেখানে যে ছিল।
চতুর্দ্দিকে হরি হরি বলিতে লাগিল।।
সিংহনাদে ভক্তগণ বলে হরি হরি।
চতুর্দ্দিকে ঘাটে পথে হরি হরি হরি।।
অগণনা বামাগণে দিল হুলুধ্বনি।
স্বর্গ মর্ত্ত্য ভেদ করি ওঠে জয়ধ্বনি।।
ঠাকুর গেলেন রামলোচনের ঘরে।
নাম গান পদ হয় গৃহে বহির্দ্বারে।।
মেয়েরা যতেক সবে ছিল পাকশালে।
শুনে ধ্বনি সব ধনী ভাসে অশ্রুজলে।।
কিসের রান্নাবান্না কিসের হলুদবাটা।
নয়নজলে ভেসে যায় হলুদবাটা পাটা।।
কুলবধু ধাইতেছে হইয়া আকুল।
বাল্য বৃদ্ধ ধাইতেছে সব সমতুল।।
ঠাকুরে দেখিব বলে সকলের মন।
পাকশালে মেয়ে লোক নাহি একজন।।
সকলে বলেছে গিয়ে চৈতন্য বালায়।
অদ্য বুঝি জাতি কুল না থাকে বজায়।।
নিমন্ত্রিত লোক যত সব এল এল।
পাকশালে লোক নাই উপায় কি বল।।
তাহা শুনি ক্রোধ করি বালা মহাশয়।
তর্জ্জন গর্জ্জন করি মেয়েদের কয়।।
ঠাকুরে দেখিয়া কারু নাহি স্মৃতি বাক।
পাকশালে লোক নাই কে করিবে পাক।।
বালাজী করেন রাগ কেহ নাহি মানে।
তর্জ্জন গর্জ্জন করে শুনেও না শুনে।।
কেহ বলে শুন বলি বালা মহাশয়।
জাতি গেল মান গেল কই হবে উপায়।।
সামাজিক লোক সব হ’য়ে একত্তর।
সভা করি বসিলেন বাটীর ভিতর।।
তার মধ্যে সর্ব্ব শ্রেষ্ঠ বালা মহাশয়।
সবে মিলে পরামিশে করিলেন সায়।।
ঠাকুরের কাছে গিয়া করহ বারণ।
চুপ করে থাক, কেন করে সংকীর্ত্তন।।
কিসের বা হরিধ্বনি কিসের কীর্ত্তন।
চুপ করে না থাকেত তাড়াও এখন।।
সবে বলে কে বলিবে ঠাকুরের ঠাঁই।
নিজে যান বালাজী অন্যের সাধ্য নাই।।
ঠাকুরের নিকটেতে যায় বলিবারে।
বলিব বলিব ভাবে বলিতে না পারে।।
এক এক বার যায় ক্রোধ করি মনে।
এবার তাড়া’ব গিয়া হরিবোলাগণে।।
ধেয়ে ধেয়ে যায় বালা অতি ক্রোধ ভরে।
যেই ঠাকুরের মুখচন্দ্র দৃষ্টি করে।।
আর নাহি থাকে ক্রোধ হয় মহাশান্ত।
মৌণ হয়ে বসে যেন নৈষ্ঠিক মোহান্ত।।