Page: 070

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৭০

সভাসৎ লোক যত দেখিয়া বিস্ময়।
বলে একি হ’ল বল বালা মহাশয়।।
বড় ক্রোধ করি যাও তাড়াবার তরে।
চুপ করে ফিরে এস বাক্য নাহি সরে।।
দুই তিন বার গেলে হ’য়ে ক্রোধমন।
বলিতে না পার কিছু কিসের কারণ।।
বাণীসূত তুল্য বক্তা বাক্‌যুদ্ধে জয়।
কেন নাহি বাক্য আস্ফালন বা কোথায়।।
বালা মহাশয় বলে তাই ভাবি মনে।
বলা কথা কেন যেন বলিতে পারিনে।।
আমাকে ভুলায় হেন নাহিক ভুবনে।
নিশ্চয় ঠাকুর কি মোহিনী মন্ত্র জানে।।
তাহা শুনি সব লোকে হাসিয়া উঠিল।
কেহ বলে মাতুব্বরের মাতুব্বরি গেল।।
যে মত শ্রীকৃষ্ণ যায় হিত বুঝাইতে।
দুর্য্যোধনে বলে যুধিষ্ঠিরে ভাগ দিতে।।
দুর্য্যোধন নাহি মানে কৃষ্ণ ফিরে যায়।
তার বাড়ী পঞ্চাশ ব্যঞ্জন নাহি খায়।।
একত্রিত শত ভাই দুষ্ট দুর্য্যোধন।
রজ্জু পাকাইল কৃষ্ণে করিতে বন্ধন।।
ভগবান বিশ্বরূপ ধারণ করিল।
কে করে বন্ধন সবে মোহপ্রাপ্ত হ’ল।।
পরে কৃষ্ণ চলিলেন বিদুরের ঘরে।
বিদুরের পুরাতন ক্ষুদ সেবা করে।।
চৈতন্য পাইয়া বলে রাজা দুর্য্যোধন।
কি মোহিনী মন্ত্র জানে দেবকী নন্দন।।
সেই দিন অপমান হ’ল শত ভাই।
কেহ বলে বালাজীর কি হইয়াছে তাই।।
কেহ বলে বালাজী হইয়াছে পাগল।
কেহ বলে বালাজীকে দুর্য্যোধনই বল।।
রামচাঁদ উপনীত ঠাকুরের ঠাঁই।
দণ্ডবৎ করি বলে কি হবে গোঁসাই।।
যত বামা দেখে তোমা না হইল রান্না।
ঠাকুর বলেন পাকঘরে অন্নপূর্ণা।।
ঘর ছাড়ি মহাপ্রভু এসে বাহিরেতে।
মেয়েদের বলিলেন পাকঘরে যেতে।।
দয়ার নিধান হরি প্রাঙ্গণে আসিল।
ভক্তগণ ল’য়ে সভা করিয়া বসিল।।
সভায় বসিয়া হরি ডাকদিয়া কয়।
কোনজন শ্রীচৈতন্য বালা মহাশয়।।
এ গ্রামেতে এতদিন আমি আসি যাই।
এগ্রামের কে কর্তা ব্যক্তি চেনা শুনা নাই।।
সবে বলে অই ব’সে শ্রীচৈতন্য বালা।
প্রভু বলে আবশ্যক দুটা কথা বলা।।
সবে দেখাইয়া দিল বসিয়া সভায়।
অই সেই শ্রীচৈতন্য বালা মহাশয়।।
প্রভু বলে মহাশয় কহ দেখি শুনি।
বলিয়াছ আমি কি মোহিনী মন্ত্র জানি।।
তুমি হও বড় জ্ঞানী সুধাই তোমারে।
শুনেছ মোহিনী মন্ত্র মন্ত্র বলে কারে।।
শুনিয়া কহিছে বাণী বালা মহাশয়।
মুখেতে সরল ভাষা ক্রোধিত হৃদয়।।
আমি এই পরগণে সবে যাহা বলি।
মোর কাছে সবে থাকে হ’য়ে কৃতাঞ্জলি।।
আমি যাই ক্রোধভরে তাড়াইয়া দিতে।
শ্রীমুখ দেখিয়া কিছু না পারি বলিতে।।
সভামধ্যে কথা বলি লক্ষজন মাঝে।
রাজ দরবারে কিংবা স্বজাতি সমাজে।।
কাহার নিকট কিছু শঙ্কা নাহি করি।
আপনার কাছে কিছু বলিতে না পারি।।
তাহাতে এমন আমি মনে অনুমানি।
আপনার যেন জানা আছে কি মোহিনী।।
বাণীনাথ কহে বাণী মৃদু মৃদু হাসি।
মোহিনী হইতে চাহে বৈষ্ণবের দাসী।।
হরিবোলা সাধুদের ভক্তি অকামনা।
তন্ত্র মন্ত্র নাহি জানে ব্রজ উপাসনা।।
বিশুদ্ধ চরিত্র প্রেমে হরি হরি বলে।
অন্য তন্ত্র মন্ত্র এরা বাম পদে ঠেলে।।
শুদ্ধাচার কৃষ্ণমন্ত্র ভক্তে জপ করে।
অন্য মন্ত্র জপ, তপ, পাপ গণ্য করে।।
মোহিনী গণিকা কামবিলাসী পৈশাচী।
তার মন্ত্র হরিভক্তে স্পর্শিলে অশুচি।।
হিংসাবুদ্ধি যারা তারা মিথ্যাভাষী সবে।
সব সভা, জিনে এই মন্ত্রের প্রভাবে।।
পরগণা মধ্যে তুমি বালা মহাশয়।
কোটি জনে কথা মানে তুমি একা জয়।।
ভক্তিশূন্য রসশূন্য ভাষ অপভাষ।
তথাপি সভার মধ্যে পাও বড় যশ।।
অপকথা কও তবু লোকে মানে কেন।
নিশ্চয় মোহিনী মন্ত্র তোমরাই জান।।