Page: 166

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৬৬

হেনকালে হুঙ্কারিয়া পাগল দাঁড়ায়।
গোবিন্দ মাঝির বাড়ী দৌড়াইয়া যায়।।
তিনখানা গামছা করিয়া একত্তর।
গামছা ধরিয়া রাখে পেটের উপরে।।
থালা এক পার্শ্বে রাখে পেটের বাহির।
বলে অঙ্গ বেদনায় হ’য়েছি অস্থির।।
তারকেরে কহে থালে জল ঢালিবারে।
দেখি তায় ব্যাথা মোর শীতল নি করে।।
তখন তারকচন্দ্র বলে হরিবোল।
থালার উপরে ঢালে চারি ঘটি জল।।
চারি ঘটি পরিমাণ দশসের জল।
থালার উপর শুষ্ক হইল সকল।।
বেদনায় যাতনায় অগ্নিতাপ উঠে।
সেই তাপে জল সব শুষ্ক হ’য়ে’ পেটে।।
গোস্বামীর বক্ষঃস্থল সাপুটে ধরিল।
তারক সে গামছা উঠায়ে চিপাড়িল।।
জলবিন্দু না পড়িল গামছা হইতে।
মৃতপ্রায় পাগলেরে রাখিল শয্যাতে।।
বলিল গোবিন্দ মাঝি উপায় কি হবে।
গোস্বামী মরিলে বল মরা কে ফেলা’বে।।
তারক কহিছে ওরে হারাম জালিয়া।
মরিলে কি তোর বাড়ী যাবরে ফেলিয়া।।
তোর বাড়ী লীলা সাঙ্গ করা অসম্ভব।
ম’লে কি দেহ তোরে স্পর্শ করতে দিব।।
তোর এই বাড়ী ভরে কে করে প্রস্রাপ।
গোস্বামী কহেন তোর বাক্য হ’ল পাপ।।
এতবলি গোস্বামী উঠিল ক্রোধভরে।
দৌড়াইয়া গেল গোলোক মাঝির ঘরে।।
কহিছে গোলোক মাঝি আমার বাটীতে।
থাকুক গোস্বামী মোরা থাকিব সেবাতে।।
দিবা গেল রাত্রি গেল হইল প্রভাত।
গোস্বামী বলেন যাব তারকের সাথ।।
জয়পুর ঘাট আমি বড় ভালবাসি।
ইচ্ছা হয় নবগঙ্গা নদী মাঝে পশি।।
মনের যে কষ্ট মোর সব হবে দূর।
এখন অবশ্য আমি যাব জয়পুর।।
তারকের পানে চাহি কহিছে গোলোক।
তুমি যদি পুত্র মোর হইতে তারক।।
তুমি যদি হইতে আমার পুত্রধন।
তা’হলে অনেক কার্য হইত সাধন।।
আমি আর তোমারে যে বলিব না দাদা।
তারক বলিয়া আমি ডাকিব সর্বদা।।
গোস্বামী কহে তারক আর কিবা চাও।
মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হোক তুমি পুত্র হও।।
তারক তারক বলি ডাকে বার বার।
এর মধ্যে দাদা বলে ডাকে আর বার।।
উহু উহু করি তবে উঠিল গোঁসাই।
ডাকিব তারক বলে তাহা মনে নাই।।
ভাবি যে তারক বলে ডাকিব সর্বদা।
মনে ভাবি পুত্র ভাব মুখে আসে দাদা।।
ভুলক্রমে যাহা কহি তাতে নাহি লাজ।
আমার আসন্ন কালে কর পুত্র কাজ।।
হেনকালে সূর্যনারায়ণ কেঁদে কয়।
আসন্ন সময় যদি ভাব মহাশয়।।
পুত্র আছে নিবারণ নারিকেল বাড়ী।
এ সময় কি জন্য তাহারে এলে ছাড়ি।।
দশরথ মহানন্দ আছে বর্তমানে।
পিতা হ’তে অধিক তাহারা সবে মানে।।
সেই দেশে জ্ঞাতি বন্ধু আছয় প্রচুর।
তাহা ছাড়ি কি জন্য যাবেন জয়পুর।।
গোঁসাই বলেন মোর জ্ঞাতিবন্ধু নাই।
মনের মানুষ যেই তার সঙ্গে যাই।।
গৃহিণী থাকিলে হয় গৃহস্থ তাহারা।
কেবা কার পুত্র হয় কেবা কার দারা।।
পুত্র বটে নিবারণ ভালোবাসি মনে।
মোর পুত্র আমি তাহা বলিতে পারিনে।।
আছে মহানন্দ দশরথ দু’টি ভাই।
এ সময় যাই যদি তাহাদের ঠাই।।
মহানন্দ আছে সেই একা কি করিবে।
এত উপদ্রব একা কেমনে সহিবে।।
তাই মনে ভাবি সবে না বুঝিবে ইহা।
জয়পুর যাইতে সেহেতু মনে স্পৃহা।।
হরিচাঁদ তরাইবে এই ভব সিন্ধু।
হরি মাতা পিতা ভ্রাতা পুত্র জ্ঞাতি বন্ধু।।
বাসনা দেখিতে বড় তারকের মুখ।
জয়পুর গেলে আমি পাই বড় সুখ।।
এত বলি খেপাচাঁদ উঠিল খেপিয়া।
কিসের বেদনা মোর গিয়াছে সারিয়া।।