Page: 072

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৭২

ঠাকুর দাসের তিন পুত্র গুণাকর।
জ্যেষ্ঠ রাম কুমার মধ্যম বংশীধর।।
কনিষ্ঠ গোলোকচন্দ্র ভক্ত চূড়ামণি।
যার ঘোর হুহুঙ্কারে কম্পিতা মেদিনী।।
শ্রীরামকুমার সংসারের মধ্যে কর্ত্তা।
সত্যবাদী জিতেন্দ্রীয় মিষ্টভাষী বক্তা।।
গায় কৃষ্ণ বলে কৃষ্ণ করে মহাজনী।
বাণিজ্য করেন আর নৌকার চালানী।।
বংশীধর বংশধর অতি শিষ্টাচারী।
সত্যবাদী জিতেন্দ্রীয় ধর্ম্ম অধিকারী।।
কভু নাই অনাচার সংসারে সংসারী।
সবে মানে রাজাস্থানে সত্য দরবারী।।
সদা পরহিতে রত গৃহকার্য্য করে।
রাজা ডাকে রাত্রে যান রাজ দরবারে।।
কনিষ্ঠ গোলোকচন্দ্র হইল গোঁসাই।
গৃহকার্য্যে রত ছিল এই তিন ভাই।।
গোলোক উন্মত্ত চিত্ত ঠাকুর ভাবিয়া।
উপাধি হইল শেষে পাগল বলিয়া।।
কৃষিকার্য্য করিতেন গোস্বামী গোলোক।
ধান্যক্ষেত্র কার্য্যে ছিল বড়ই পারক।।
হলধর দিয়া চাষে আইলে বসিয়া।
নির্জ্জনে বসিয়া জমি দেখিত চাহিয়া।।
জমিমধ্যে কোন স্থান নিম্ন যদি রয়।
উচ্চস্থান মাটি এনে সে নিম্ন পুরায়।।
উঁচু নিচু না রাখিত জমির মাঝেতে।
সমতল ধান্যক্ষেত্র করিত স্বহস্তে।।
যে জমির ধান্য কাটে আঠার কিষাণে।
তিনি তাই কাটিতেন একা একদিনে।।
বিষয় কার্যেতে ছিল এমত নিযুক্ত।
এবে শুন যেভাবে হইল প্রভুভক্ত।।
কণ্ঠদেশ ফুলিয়া ক্রমশঃ হ’ল ভারী।
শয্যাগত রহিলেন হ’য়ে অনাহারী।।
নাসারন্ধ্রে ঘনশ্বাস বাক্য নাহি সরে।
দুগ্ধ পান আদি বন্ধ হ’ল একেবারে।।
রাউৎখামার রামচাঁদ মহাশয়।
ভক্তশ্রেষ্ঠ ঠাকুর নিকটে আসে যায়।।
রোগযুক্ত রোগী যত রামচাঁদে ধরে।
ঠাকুরের নামেতে রাখিয়া রোগ সারে।।
গোলোকের জ্যেষ্ঠ রামকুমার বিশ্বাস।
দশরথ নিকটেতে করিল প্রকাশ।।
গোস্বামীর খুল্লতাত জয়কৃষ্ণ নাম।
তার পুত্র সহস্রলোচন গুণধাম।।
সাধুসঙ্গ সদামতি হৃদয় আনন্দ।
তাহার কুমার দশরথ মহানন্দ।।
শ্রীরামকুমার কহে দশরথ ঠাঁই।
চল বাপ রামচাঁদে আনিবারে যাই।।
গোলোকে দেখিয়া আর স্থির নহে মন।
ঠিক যেন গোলোকের নিকট মরণ।।
শুনেছি রামচাঁদের অপার মহিমে।
রোগ সারে হরিচাঁদ ঠাকুরের নামে।।
বড় বড় রোগে রোগী তার কাছে যায়।
যাওয়া মাত্র রোগমুক্ত যদি দয়া হয়।।
দশরথ দিল মত চল তবে যাই।
খুল্লতাত রোগ সারে এই ভিক্ষা চাই।।
ত্বরা যায় রামচাঁদ ঠাকুরে আনিতে।
উপনীত ত্বরান্বিত রাউৎখামারেতে।।
বালাবাড়ী গেলে মাত্র সর্ব্বজনে কয়।
হেথা বৈস সে ঠাকুর আসিবে হেথায়।।
গিরিধর বালা আছে জ্বরে অচেতন।
রামচাঁদে আনিবারে যাইব এখন।।
পরিশ্রম করি কেন তোমরা যাইবা।
আমরা আনিলে হেথা বসিয়া পাইবা।।
বলিতে বলিতে লোক আনিবারে গেল।
রামচাঁদ ঠাকুরেকে সত্বরে আনিল।।
রামচাঁদ ঠাঁই রামকুমার বলেছে।
ভাই মোর গোলোক সে আছে কিনা আছে।।
বড় দায় ঠেকে আসিয়াছি দৌড়াদৌড়ি।
দয়া করি যেতে হ’বে নারিকেলবাড়ী।।
তাহা শুনি রামচাঁদ না করিল বাক্।
বাবা হরিচাঁদ বলে ছেড়ে দিল ডাক।।
হরিচাঁদ হরিচাঁদ বলে ডাক ছাড়ে।
হুঙ্কারিয়ে দুই হাতে গিরিধরে ঝাড়ে।।
ডাকে বাবা হরিচাঁদে করি করজোড়।
সজোরে গিরির পৃষ্ঠে মারিল চাপড়।।
মুহূর্ত্তেক মধ্যে ব্যাধি আরোগ্য হইল।
রোগমুক্ত গিরিবালা উঠিয়া বসিল।।
রোগমুক্ত হ’ল যদি গিরিধর বালা।
ঝাড়িতে লাগিল রামকুমারের গলা।।
বাবা হরিচাঁদ বলে ঘন ডাক ছাড়ে।
রামকুমারের গলা রামচাঁদ ঝাড়ে।।