Page: 102
শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১০২
ঠাকুরানী ক্রোধ ক’রে, মোদের গোঁসাইজীরে
খাওয়াইছে গোময়ের গোলা।।
সেই গোলা উদ্বমন, হইতেছে সর্বক্ষণ
ভেদ হইতেছে সেই গোলা।
গলিত ঘর্ম শরীর, হ’তেছে ঠাকুরানীর
উদর বেদনা অঙ্গজ্বালা।।
মৃত্যুঞ্জয় শুনে তাই, গিয়া জননীর ঠাই
বলে মাতা কহ সমাচার।
শুনিয়া সুভদ্রা ধনী, কাতরে কহিছে বাণী
বলে বাবা কি বলিব আর।।
এসেছিল সে গোলোক, মাধুর্যভাবের লোক
জলন্ত পাবক প্রায় আজ।
আগে ক’রে দণ্ডবৎ, শেষে দিল পায়ে হাত
আমি বলি কি করিস কাজ।।
লইতে পায়ের ধূলা, খাইল গোময় গোলা
ভাব ধরে হরি হরি বোলা।
দেখি তোর কত ভক্তি, ধূলাতে কতই আর্তি
খা দেখি এ গোময়ের গোলা।।
দিলাম গোময় গুলি, খাইল তিনটি অঞ্জলি
জ্বলে মম অস্থি চর্ম মেদ।
হস্তপদ চক্ষু জ্বালা, সেই গোময়ের গোলা
হইতেছে বমি আর ভেদ।।
ওরে বাপ মৃত্যুঞ্জয়, পাগল গেল কোথায়
সে না এলে আমি মরি প্রাণে।
করেছি যেমন কাজ, আমার মুণ্ডেতে বাজ
মরি বাঁচি দেখা তারে এনে।।
নির্মল প্রেমের সাধু, আমি তারে শুধু শুধু
করিয়াছি নিন্দন ও ভর্ৎসন।
সাধু নিন্দা মহাপাপ, ভুঞ্জিতেছি সেই পাপ
করি তার চরণ বন্দন।।
কথাশুনি মৃত্যুঞ্জয়, দ্রুত অন্বেষণে যায়
কোথা সেই গোলোক গোঁসাই।
পদুমায় দেখা পেয়ে, পদে দণ্ডবৎ হ’য়ে
জানাইল গোঁসাইর ঠাই।।
গোস্বামী গোলোক গিয়ে, নিকটে উদয় হ’য়ে
সুভদ্রাকে দেখা দিয়া কয়।
শুনগো মা ঠাকুরানী, আমি কিছু নাহি জানি
সব হরিচাঁদের ইচ্ছায়।।
বৈষ্ণবী কহিছে বাপ, আমার হ’য়েছে পাপ
সকলই ত’ প্রভুর ইচ্ছায়।
ভাগবতে বাক্য শুনি, আছে মহাপ্রভু বাণী
মহাপাপ বৈষ্ণব নিন্দায়।।
বৈষ্ণব নিন্দুক জন, মিথ্যা এ সাধন ভজন
হরি তারে নাহি ফিরে চায়।
জনমে জনমে তার, নাহি পাপের উদ্ধার
বল মম কি হবে উপায়।।
দেরে বাপ পদতরী, আমার হৃদয়পরি
তরীর বৈষ্ণব অপরাধে।
ক্ষম মম অপরাধ, তুলে গোস্বামীর পদ
বৈষ্ণবী ধরিল নিজ হৃদে।।
সব জ্বালা দূরে গেল, বৈষ্ণবী ভাল হইল
হরি ব’লে চক্ষে বহে নীর।
কহিছেন কাঁদি কাঁদি, ধন্য ধন্য ওঢ়াকাঁদি
শুদ্ধ হ’ল আমার শরীর।।
হরিচাঁদ ভক্ত যারা, পতিত পাবন তারা
বিষ্ণু অবতার বিষ্ণু অংশ।
বীর রসে ধীরোত্তম, সবে বিষ্ণু পরাক্রম
বিষ্ণু তেজ সব বিষ্ণু বংশ।।
যেমন শ্রীগৌরচন্দ্র, আর প্রভু নিত্যানন্দ
ভক্তবৃন্দ সেই অবতার।
হৃদয় শোধন করি, বলাইল হরি হরি
এহেন দয়াল নাহি আর।।
সেই প্রেম পেয়েছিল, তাহা জীবে পাসরিল
ভুলিল প্রেমের মধুরত্ব।
ত্যজিয়া অমৃত ফল, জীব গেল রসাতল
বিষ ফলে হইল প্রমত্ত।।
খণ্ডাইতে কর্ম বন্ধ, সেই প্রভু হরিশ্চন্দ্র
এবে হ’ল যশোমন্ত সুত।
হরিচাঁদ নাম ধরি, ওঢ়াকাঁদি অবতরী
নাম প্রচারিল প্রেম যুত।।
তার যত ভক্তগণ, তারা ভুবন পাবন
ব্রহ্মাণ্ড তারিতে শক্তি ধরে।
আমি’ত অবিশ্বাসিনী, শ্রীহরি ভক্ত দ্বেষিণী
শোধিল আমার কলেবরে।।
গোলোক সুভদ্রাখ্যান, সুধার সমুদ্রবান
পান কর প্রাণ বাঞ্ছাতরী।
কহিছে তারকচন্দ্র, মহানন্দের আনন্দ
সাধু সব পিয় কর্ণভরি।।