Page: 075

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৭৫
সেই স্থানে আছে এক হিজলের গাছ।
পূর্ব মুখ বসিলেন গাছ করি পাছ।।
ঠাকুর বলেন তোর ক্ষুধা লাগে নাই।
বলে হরি বল হরি চল হরি খাই।।
সেখানে দেখিল প্রভু একটি সুড়ঙ্গ।
সুড়ঙ্গ হইতে বের হইল ভুজঙ্গ।।
ঠাকুর বলেন তোর হরিনাম শুনে।
ভুজঙ্গ বাহির হয়ে চলে গেল বনে।।
ভুজঙ্গের মুখে লাল দেখ দৃষ্টি করি।
অবশ্য ভুজঙ্গ কোন ধনের অধিকারী।।
হরি বল হরি বল কহিছে বদন।
বল হরি গর্তে হরি আছে হরিধন।।
ঠাকুর বলেন তবে কররে খনন।
হরি হরি বলি মাটি কাটিল বদন।।
দুই চাপ মাটি ফেলে তাহার তলায়।
পাইল ধনের ঘড়া কালুব্যাধ প্রায়।।
ঠাকুর বলেন ধন আনরে বদন।
এই ধন লয়ে গৃহে করহ গমন।।
বহুদিন বেদনায় ভুগিলি বদন।
করিতে নারিলি বাছা অর্থ উপার্জ্জন।।
সংসারের কার্য্য কিছু করিতে না পার।
এই ধন লয়ে সংসারের কার্য্য কর।।
তোর হরি নামেতে প্রহরী তুষ্ট হ’ল।
নিশ্চয় বুঝিনু ধন তোরে দিয়া গেল।।
বদন বলেন হরি হরি বল মুখে।
আমি কি করেছি ধন দিবে সে আমাকে।।
কেন হরি মোরে হরি দেহ এই ধন।
তুচ্ছ হরি ধন হরি দিয়া বুঝ মন।।
ওরে হরি ধনে হরি নাহি প্রয়োজন।
তুচ্ছ হরি ধনে হরি নাহি লয় মন।।
হরি লক্ষ্মী হরিণাক্ষী দৃষ্টি করে যারে।
হরি বল হরি ধন থাকে তার ঘরে।।
হরি বল বিমলা কমলা যার দাসী।
হরি বল যে পদ সেবিকা দিবানিশি।।
হরি বল যেই ধন বিরিঞ্চি-বাঞ্ছিত।
হরি বল সেই ধনে করনা বঞ্চিত।।
হরি বল সেই ধন করহ অর্পণ।
হরি বল সেই ধন তব শ্রীচরণ।।
হরি বল কত আমি দেখেছি খাটিয়া।
হরি বল দেখিয়াছি ধন উপার্জ্জিয়া।।
হরি বল হেন ঘড়া পূর্ণ ছিল ঘরে।
হরি বল সেই ধন কেবা রক্ষা করে।।
হরি বল কোথা ধন আমি বা কোথায়।
হরি বল খাই নাই মরি বেদনায়।।
হরি বল ক্ষিতি অর্থলোভে কতলোক।
হরি বল খুন করি খাটিছে ফাটক।।
হরি বল হরিবিনে শান্তি নাহি মনে।
হরি বল কিবা হয় ধনে আর জনে।।
হরি বল এ ধনে আমার কার্য্য নাই।
হরি বল ধন হরি চল হরি যাই।
হরি বলে অর্থ যদি অনর্থ কেবল।
হরি ধন হরি লবে চল হরি বল।।
হরিকে ডাকেন হরি আর অজগর।
হরিধন হরিব না মোরা যাই ঘর।।
শুনি অজগর তবে বাহুড়ি আসিল।
ঠাকুরে প্রণাম করি সুড়ঙ্গে পশিল।।
প্রভু সঙ্গে বদন থাকেন একতর।
কভু ঠাকুরের বাড়ী কভু ভক্তঘর।।
কোন কোন লোক যদি হয় ব্যাধিযুক্ত।
ঠাকুরের কাছে আসে হতে ব্যাধিমুক্ত।।
কারু কারু আজ্ঞা দেন মুষ্টিযোগ করে।
কারু বলে লয়ে যাও বদন ঠাকুরে।।
ঠাকুর বলেন তবে বদন ঠাকুরে।
যেই তুমি সেই আমি একই শরীরে।।
মনুষ্য জীবন মৃত্যু একই সমান।
তুইরে বদন মম ধন মন প্রাণ।।
তোর দেহ নিলাম আমার ইচ্ছামতে।
তোর ইচ্ছা যাহা হয় মোর ইচ্ছা তাতে।।
ঠাকুরের আজ্ঞা শুনি বদন উঠিল।
ঘুরে ফিরে নাচে যেন মত্ত মাতোয়াল।।
চরণ চঞ্চল চিত্ত স্থির নাহি রয়।
হরি হরি হরি বলে দৌড়িয়া বেড়ায়।।
হরি বলি যায় চলি নামে করি ভর।
মুখ ফিরে যায় বাম স্কন্ধের উপর।।
মহাবেগে চলে যান সিংহের সমান।
হরিনাম ক্ষান্ত নাই আড়ল পয়ান।।
ক্ষণেক বিপথে যান ক্ষণে পথে আসে।
ভুজঙ্গ গমন যেন বক্রভাবে বিষে।।
অলসেতে চলি প্রভু করিত শয়ন।
ঈষৎ আবেশে নিদ্রা চৈতন্য জীবন।।