Page: 089

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৮৯
বেথুড়িয়া ঘৃতকাঁদি বিল খাল যত।
কতক হাঁটিয়া পার সাঁতরেতে কত।।
জপিতে গাইতে হরে কৃষ্ণ রাম নাম।
উপনীত ওঢ়াকাঁদি প্রভুর শ্রীধাম।।
বীররসে রাগাত্মিকা ভাবের উদয়।
দেখি প্রভু হীরামনে ক্রোড়েতে বসায়।।
হীরামনে পুকুরের ঘাটে ল’য়ে পরে।
শ্রীকরেতে শ্রীনাথ শ্রীঅঙ্গ ধৌত করে।।
কর্দম শৈবাল অঙ্গে লেগে রহিয়াছে।
কমল-কণ্টক অঙ্গ ক্ষত করিয়াছে।।
ধৌত করি হস্ত ধরি গৃহেতে লইল।
কর্পূর মিশ্রিত তৈল অঙ্গে মাখাইল।।
ঠাকুর জিজ্ঞাসা করে ওরে হীরামন।
কেমনে করিলি সহ্য যবন পীড়ন।।
এতকষ্ট দিল দুষ্ট পাপিষ্ঠ যবন।
এত মান্য নেড়েরে করিলি কি কারণ।।
ঘৃণা কি হ’ল না কিছু ওরে বাছাধন।
কচ্ছপের কাঁচা মাংস করিতে ভোজন।।
হীরামন বলে মন সকলইত জান।
জেনে শুনে তবে আর জিজ্ঞাসিলে কেন।।
সকলে কেবল কহে ফকির ফকির।
হক আল্লা বলে নেড়ে ছাড়িল জিগির।।
আমি ভাবি হক আল্লা বলিল মুখেতে।
হক ছাড়া না হক সে করিবে কি মতে।।
পোড়াইয়া দিল অঙ্গ তাহা করি সহ্য।
তবু ভাবি এই বুঝি করে হক কার্য।।
পোড়া অস্ত্র ধরে গ্রীবা মেরুদণ্ড পর।
তবু আমি ভাবি এত আল্লার নফর।।
আল্লার ফকির বলে আগে মানিলাম।
ঠক মানিলাম শুনে হক আল্লা নাম।।
আল্লা রূপা রাধা আল্লা কৃষ্ণ আহ্লাদিনী।
প্রণয় বিকৃতি রাধা কৃষ্ণ প্রণয়নী।।
"কামবীজ কৃষ্ণ" "কাম গায়ত্রী রাধিকা"।
কৃষ্ণমন্ত্রবীজ রাধা প্রধানা নায়িকা।।
কৃষ্ণ বীজ কলিম রহিম বীজ শক্তি।
"ক" কারে "ল" কার "ই" কার চন্দ্রবিন্দু যুক্তি।।
"ক" "ল" "ই" বিন্দু আর বিসর্গ অনুস্বার।
"ম" কারে অনুস্বার ইহা কৈলে একতর।।
তাতে হয় কৃষ্ণবীজ বীজরূপা রাধা।
কলিম শক্তির বীজ শ্রীকৃষ্ণ আরাধা।।
শ্লোক।
রাধাকৃষ্ণ প্রণয়বিকৃতিহলাদিনী শক্তি হ্রস্বা।
দেকাত্মনবিপি ভূবি পুরা দেহভেদং
গতৌ তৌ, চৈতন্যাখ্যং প্রকটমধুনা,
রাধাভাবদ্যুতি সুবলিতং নৌমি কৃষ্ণস্বরূপম্।।
পয়ার।
সেই’ত হলাদিনী শক্তি সবাকার হক।
সেই হক তুমি হরি সবার জনক।।
যার মনে যেই মত সেই পথে ধায়।
যেভাবে যেভাবে ডাকে, ডাকে হে তোমায়।।
তাহাতেই মানিলাম তুমি আল্লা হক।
তোমাকে ডাকিল ভাবি তোমার সেবক।।
তাই ভাবি মানিয়া অমান্য কিসে করি।
যাহা কহে তাহা করি থাকি ধৈর্য ধরি।।
এ বুঝি হকের কার্য হয় ফকিরের।
তাই ভেবে কাঁচা মাংস খাই কচ্ছপের।।
প্রভু কহে তবে কেন মারিলিরে বাপ।
মানিয়া না মানিলে ত’ হতে পারে পাপ।।
হীরামন বলে পাপ পুণ্য নাহি জানি।
আমি জানি তুমি হর্তা কর্তা রঘুমণি।।
সে বলে যে পাগলারে খাওয়ারে হারাম।
তার বাক্য শুনে মনে জাগে সীতারাম।।
হারাম শুনিয়া রসনায় বাড়ে ক্ষুদা।
দিল মাংস খাইলাম সুধাধিক সুধা।।
পিটমোড়া দিয়া টেনে বাঁধে দুই কর।
বাঁধিয়া মারিল গোঁজা নখের ভিতর।।
এই মত শাস্তি দিল যবনের বেটা।
নখতলে বিঁধাইল খেজুরের কাঁটা।।
তথাপি ভাবিনু যেই বলে আল্লা হক।
সে মেরেছে এতে নয় খ’সে যাবে নখ।।
বেকী দা পোড়ায়ে যবে আনে পুনর্বার।
এ দেহে তখনে সহ্য না হইল আর।।
এ সময় তোমাকে দেখিনু গদাধর।
গদা ধরি দাঁড়াইলা মস্তক উপর।।
ক্রোধে কাঁপে ওষ্ঠাধর আজ্ঞা দিলে মোরে।
মার ফকিরেরে মার চৈতন্য বালারে।।
তব শ্রীমুখের আজ্ঞা যদি পায় হীরে।
ব্রহ্মাণ্ড ডুবা’তে পারে গোষ্পদের নীরে।।