Page: 087

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৮৭

হারে রে পাগলা কেন কর পাগলাই।
তোরে সারিবারে এল লক্ষ্মীকালা সাঁই।।
রুলাঘাতে করিব যে পাগলাই দূর।
দেখিব কেমন তুই পাইলি ঠাকুর।।
মম বাক্য না রাখিস করিস বাড়াবাড়ি।
পাগলামি করিলে মারিব রুলের বাড়ী।।
সারিবি কি না সারিবি বলরে এখন।
শুনিবি কি না শুনিবি আমার বচন।।
দৃকপাত তাতে নাহি করে হীরামন।
ঝুঁকে ঝুঁকে করে হরিনাম সংকীর্তন।।
প্রেমোন্মত্ত হীরামন উঠিয়া দাঁড়ায়।
ফকিরের পানে হীরে ফিরে ফিরে চায়।।
ফকির কহিছে তুই আয় হীরামন।
বাহিরে আসিয়া বাছা লওরে আসন।।
তাহা শুনি হীরামন উঠিয়া দাঁড়ায়।
আসন পাতিয়া এসে বসিল তথায়।।
ফকির তখন রুল হস্তেতে করিয়া।
মাটিতে আঘাত করে হক আল্লা বলিয়া।।
পুনঃ পুনঃ করে রুল মাটিতে আঘাত।
হীরামন তাতে নাহি করে দৃষ্টিপাত।।
ফকির বলেন তুই এসেছিস কেরে।
হকের বাজারে মোরে পরিচয় দেরে।।
কথা শুনি হীরামন চাহে একদৃষ্টে।
ফকির রুলের বাড়ী মারে তার পৃষ্ঠে।।
তাহাতেও হীরামন কিছুই না বলে।
পুনশ্চঃ আঘাত করে বাহুসন্ধি স্থলে।।
তাহাতেও হীরামন মৃদু মৃদু হাসে।
স্থির হ’য়ে থাকে সাধু আসনেতে বসে।।
ফকির সে হীরামনে ওঠ ওঠ কয়।
অমনি সে হীরামন উঠিয়া দাঁড়ায়।।
ফকির যখনে বলে বয় বয় বয়।
হীরামন আসনে বসেন সে সময়।।
ফকির বলেন তবে সবারে ডাকিয়া।
দেখ সবে গেছে এর পাগল সারিয়া।।
যাহা কহি তাহা করে ব্যাধিমুক্ত হ’ল।
বিদায় করহ মোরে বিপদ ঘুচিল।।
তা শুনি চৈতন্য বালা ফকিরকে কয়।
অদ্য থাক কল্য মোরা করিব বিদায়।।
সংসারে কার্য হীরে করিবে যখন।
তোমাকে বিদায় মোরা করিব তখন।।
ফকির বলিল হীরে দণ্ডবৎ কর।
আসন ছাড়িয়া বাছা উঠে যারে ঘরে।।
পরদিন ফকিরকে বলে সব বালা।
পাগল সেরেছে নাকি দেখ লক্ষ্মীকালা।।
হীরামনে ডাক দিয়া আনহ প্রত্যক্ষে।
আরোগ্য হ’য়েছে কিনা দেখহ পরীক্ষে।।
হীরামনে ডাক দিয়া তখনে আনিল।
আসন উপরে হীরামন বার দিল।।
ফকির বলেছে বাছা কহ শুনি কথা।
হেট মুণ্ডে রহে সাধু নাহি তুলে মাথা।।
মাথা নাহি তুলে সাধু শ্বাস ছাড়ে দীর্ঘ।
সবে বলে কই হ’ল রোগের আরোগ্য।।
রুষিয়া উঠিল তবে ফকির বর্বর।
বড়শী পোড়ায়ে ধরে গ্রীবার উপর।।
সারিয়া না সারিস করিস অপযশ।
এরূপে যাতনা দেয় সপ্তম দিবস।।
ফকিরকে কহে সবে যদি নাহি পার।
তবে আর কেন মিছে পরিশ্রম কর।।
ফকির একথা শুনি দড়ি পাকাইল।
পিটমোড়া দিয়ে হীরামনকে বাঁধিল।।
দল কাটা বেকী অস্ত্র পোড়ায়ে আগুনে।
গ্রীবার উপরে অম্নি ধরিল তখনে।।
কিছু নাহি কহে হীরামন মৃদু হাসে।
ফকির কহিছে ইহা সহে কই মানুষে।।
ইহাকে সারিতে আমি হইলাম ত্যাক্ত।
সারা বড় কষ্ট হ’ল দৃষ্টি বড় শক্ত।।
ইহাকে যে ধরেছে করিব তারে ধ্বংস।
খাওয়াইতে হবে কাঁচা কচ্ছপের মাংস।।
চেষ্টা করি কাঠা আন আর আন ঢালো।
তারে খাওয়াইব এবে যে এসে ধরিল।।
আনিয়া কচ্ছপ মাংস তাহাকে খাওয়ায়।
হাত পেতে এনে মাংস গ্রাসে গ্রাসে খায়।।
তবু হীরামন নাহি হয়েন সদ্ভাব।
ফকির বলেছে এযে বড় অসম্ভব।।
পুনঃ পৃষ্ঠমোড়া দিয়া দুবাহু বাঁধিল।
হস্তদ্বয় বাঁধি তার একত্র করিল।।
সূক্ষ্ম তন্তু দিয়া তার বাঁধিল যে কর।
দুই দুই আঙ্গুল করিয়া একতর।।
ওঝা বলে ছেড়ে যাবি কিনা যাবি বোঝ।
এত বলি আঙ্গুলির মধ্যে মারে গোঁজ।।