Page: 104

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১০৪
এতবলি যান চলি লক্ষ্মীপুর গ্রামে।
রহিলেন গিয়া বুদ্ধিমন্তের আশ্রমে।।
ঠাকুরের কথা তথা সকল শুনিল।
শুনিয়া অন্তরে বড় ভক্তি জনমিল।।
প্রাতেঃ উঠি চলিলেন ওঢ়াকাঁদি ধাম।
যষ্ঠিহাতে কষ্টেতে গমন অবিশ্রাম।।
ধীরে ধীরে চলিলেন বলবীর্যহীন।
চলে যায় মনে ভয় পালা সেইদিন।।
জ্বর আসিবার ভয়ে হরি হরি বলে।
হরিচাঁদ ব’লে ডাকে ভাসে অশ্রুজলে।।
হরি হরি বলি উতরিল ওঢ়াকাঁদি।
বস্ত্র গলে চক্ষু জলে দাঁড়াইল কাঁদি।।
ঠাকুর বলেন বাছা কি নাম তোমার।
দশরথ বলে আমি বড় দুরাচার।।
নাম মোর দশরথ পদ্মবিলা বাস।
প্রভু বলে তুমিত’ দশরথ বিশ্বাস।।
তুইত’ বিশ্বাস আমি বড় অবিশ্বাস।
তন্ত্রে মন্ত্রে শৌচাচারে না হয় বিশ্বাস।।
কেন বা আসিলি বাছা আমার নিকটে।
তুই শুদ্ধচারী মোর শৌচ নাই মোটে।।
তিনবেলা সন্ধ্যা কর আর স্নানাহ্নিক।
স্নান পূজা সন্ধ্যাহ্নিক মোর নাই ঠিক।।
কুকুরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেলে খাই।
বেদ বিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই।।
মোর ঠাই এলি বাছা কিসের কারণ।
কহ শুনি মনোকথা বুঝি তোর মন।।
প্রকাশিয়া বল শুনি ওরে দশরথ।
শুদ্ধাচারী সাধু তোর কিবা মনোরথ।।
কি জানি কি ওঢ়াকাঁদি না হয় প্রত্যয়।
কোথাকার হরি এল ওঢ়াকাঁদি গায়।।
নদীয়াতে গৌররূপে গোলোক-বল্লভ।
ওঢ়াকাঁদি জন্ম তার কিসে অসম্ভব।।
মীন হৈনু, কূর্ম হৈনু, বরাহ নৃসিংহ।
তা হ’তে কি হীন হৈনু ল’য়ে নরদেহ।।
মাতাকে কড়ার দিনু নদীয়া ভুবনে।
করিব মা শেষ লীলা ঐশান্য কোণে।।
এই সেই লীলা এই সেই অবতার।
ইহার উপরে পূর্ণ লীলা নাহি আর।।
মন ঠিক কর বাছা চিন্তা নাই আর।
পালিয়েছে পালা আর না হইবে জ্বর।।
শ্রীগুরু চরণচিন্তে ভব ব্যাধি নাশে।
ওঢ়াকাঁদি এলে তার জ্বর থাকে কিসে।।
দশরথ বলে প্রভু বুঝিনু এখন।
নিজ দাস জানি প্রভু ছলা কি কারণ।।
যুগে যুগে ভক্ত মন বুঝিয়া বেড়াও।
জেনে মন বুঝে মন ছলনা করাও।।
কর্ণকে ছলিতে প্রভু বৃদ্ধ বিপ্র বেশে।
পুত্র কেটে দিতে কও পারণা দিবসে।।
খাইবে মনুষ্য মাংস বলিল সেকালে।
ব্রাহ্মণে মানুষ খায় বুঝিতে নারিলে।।
দান ধর্মে রত কর্ণ নির্মল সুজন।
বুঝে না মনুষ্য মাংস খায় কি ব্রাহ্মণ।।
বুঝিতে কর্ণের মন কিবা বাকী ছিল।
স্বর্ণ দগ্ধ পুনঃ পুনঃ ঔজ্জ্বল্য বাড়িল।।
সূর্যবংশে রঘুরায় বুঝি তার মন।
হ’য়েছিলে দ্বিজ ব্যাঘ্র তোমরা দু’জন।।
তুমি হ’লে দ্বিজ, ব্যাঘ্র হ’ল পঞ্চানন।
দ্বিজসুতে খেতে ব্যাঘ্র করে আক্রমণ।।
দ্বিজ শিশু রূপে গেল রঘুরাজ আগে।
বলেছিল রক্ষা কর মোরে খায় বাঘে।।
রঘু বলে ওরে বাঘ বলিরে তোমাকে।
ছাড় ছাড় খেওনারে ব্রাহ্মণ বালকে।।
ব্যাঘ্র বলে যদি আমি রাজ মাংস পাই।
তাহ’লে দ্বিজের সুতে ছেড়ে দিয়ে যাই।।
রাজা বলে আমার অঙ্গের মাংস খাও।
শরণাগত বালকে ছেড়ে দিয়ে যাও।।
তাহা শুনি স্বীকার করিল ব্যাঘ্রবর।
রাজা দেন গাত্রমাংস ব্যাঘ্রে খাইবার।।
খাইল সকল মাংস অস্থিমাত্র সার।
হেনকালে পরিচয় দিল দিগম্বর।।
চেয়ে দেখ আমি ব্যাঘ্র নহে, পঞ্চানন।
মন বুঝিবারে দ্বিজশিশু নারায়ণ।।
বর দিয়া রঘুরাজে গেলে দুইজন।
অন্তর্যামী হ’য়ে কি বুঝিতে হয় মন।।
শ্রীরাম রাঘব নাম নাশিতে রাবণ।
রঘুনাথ হ’তে তার মঙ্গলাচরণ।।
বিশেষতঃ ভক্তগণে জানাইতে ভক্তি।
জগতের শিক্ষাহেতু এই সব যুক্তি।।
এই আমি মনে মনে ভাবি অনুক্ষণ।
গোপীদের মন বুঝা কোন প্রয়োজন।।