Page: 111

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১১১

প্রভু বলে আমি হইয়াছি ফরিয়াদি।
ধর্মতঃ শপথ সত্য মম জবানবন্দী।।
আমার রাজ্যেতে মিথ্যা নাহি কহে কেহ।
আমার প্রমাণ ধর্ম বিচার করহ।।
মেয়েরা বলেছে এই ধর্মের কাছারী।
আমরা দেখিয়াছি গায় মারে দশ বাড়ী।।
রাণী কহে নায়েব সে বড় অত্যাচারী।
মোকর্দ্দমা জয় তব দিলাম এ ডিক্রি।।
এই শাস্তি হ’বে তার বংশের নির্মূল।
কুষ্ঠব্যাধি খসিবেক হস্তের আঙ্গুল।।
গৃহদাহ হইবে নায়েবী কার্য যা’বে।
কল্য কাছারীতে বসি সংবাদ পাইবে।।
এ সব সংবাদ পেয়ে করিবে রোদন।
পরশু করিবে বেটা গৃহেতে গমন।।
সবে বলে হয় শ্রীহরিচাঁদের জয়।
নাম গানে মাতিল কাছারী ভঙ্গ হয়।।
পরদিন বাটী হ’তে পৌছিল পত্র।
গৃহদাহ হইয়াছে ঘর নাহি মাত্র।।
দৈবাৎ মরেছে তার সুযোগ্য নন্দন।
শিরে করাঘাত করি করিছে রোদন।।
লোক সহ পত্র এল রাজ বাটী হ’তে।
বরখাস্ত হ’লে তুমি নায়েবী হইতে।।
কুষ্ঠ ব্যাধি হ’ল গায় চাকা চাকা দাগ।
বাড়ী চলে গেল করে নায়েবতী ত্যাগ।।
হইল গলিত কুষ্ঠ খসিল আঙ্গুল।
স্বধনে সবংশে দুষ্ট হইল নির্মূল।।
সাধু হিংস্র নায়েবের হ’ল সর্বনাশ।
গ্রামবাসী পাষণ্ডের লাগিল তারাস।।
সেই ভাবে সকলে রহিল মনোল্লাসে।
নাম গানে নিশি ভোর হ’ল ভাবাবেশে।।
কহিছে তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।
সাধুদ্বেষী যেই তার মুণ্ডে হেন বাজ।।


মহাপ্রভুর জোনাসুর কুঠি যাত্রা।

দীর্ঘ ত্রিপদী।

হাকিম হুকুম যাহা, প্রতক্ষ্যে ফলিল তাহা
নায়েব চলিয়া গেল বাড়ী।
গৃহদাহ বার্তা এল, কার্যেতে জবাব হ’ল
ভয় প্রাণ কাঁপে থরহরি।।
বিপক্ষ গ্রামীরা যত, রাগে হ’ল জ্ঞান হ’ত
বলে এত জুতা মারি পিঠি।
এত দিল জরিমানা, তবু কীর্তন ছাড়ে না
লাফালাফি ক’রে ভাঙ্গে মাটি।।
যত সব জাতিনাশা, নাহিক অন্য ব্যবসা
কিসে চলে খায় ব’সে ব’সে।
কেহ অন্ন বস্ত্রহীন, বালক যুবা প্রবীণ
কি কৌশলে সবে এসে মিশে।।
নায়েব দিল লাঞ্ছনা, বিশ টাকা জরিমানা
কার্য গেল চলে গেল বাটী।
যত সব দুষ্ট খল, জুটিয়া পাষণ্ড দল
শেষে যায় জোনাসুর কুঠি।।
নজর দিয়া সবাই, ডিক সাহেবের ঠাই
করে এক কেতা দরখাস্ত।
সাহেবের কাছে গিয়ে, একে একে দাঁড়াইয়ে
বাচনিক বলিল সমস্ত।।
পাষণ্ডী মুখ নিঃসৃত, যত আ’সে কহে তত
ভাল মন্দ নাহি যে বিচার।
যতসব ভাল ক্রিয়ে, সেই সকল ত্যজিয়ে
কহে যত কুৎসিত আচার।।
সাহেব শ্রবণ করে, বলে তাদের গোচরে
যেই নারী কীর্তনেতে নাচে।
কীর্তনের প্রেমাবেশে, যেই নারী মিশে এসে
তাহাদের কেহ কি জেনেছে।।
কহে পাষণ্ডীগণ, তাহাদের আত্মজন
অই কার্য বড় ভালবাসে।
সাহেব কহিছে হারে, তাহারা যে কার্য করে
মোর মনে মন্দ নাহি আসে।।
সাহেব কহিছে বল, না কহিস মিথ্যা ছল
কুকার্য কি করে কোন জনে।
নাচে গায় নিরবধি, তার মধ্যে কাঁদে যদি
কুপ্রবৃত্তি জন্মিবে কেমনে।।
সাহেব কহিছে আমি, দেখিব কেমন আদমি
যাহ হাম পেয়াদা পাঠাই।
পাষণ্ডীরা গৃহে গেল, সাহেব লোক পাঠা’ল
উপনীত দশরথ ঠাই।।
পদ্মবিলা গ্রামে বাস, শ্রীরামতনু বিশ্বাস
বুদ্ধিমান অতি বিচক্ষণ।
কাছারী কুঠি মোকামে, রাজদ্বারে কিংবা গ্রামে
পরগণে মানে সর্বজন।।