Page: 122

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১২২
গুরুদেব গোবিন্দ যাইয়া সেই ঘরে।
বলে বুধ এখানে বসা’বি আমারে।।
মেয়েছেলে কত লোক বসিয়াছে ঘরে।
আমি না বসিব এই ঠাকুর গোচরে।।
চূড়ামণি বলে যত আছ বাজে লোক।
বাহিরিতে যাও বৃদ্ধা যুবা কি বালক।।
কেহ না থাকিও আর উত্তরের ঘরে।
মাত্র দুই প্রভু থাকিবেন একত্তরে।।
শুনিয়া সকল লোক আইল নামিয়া।
ঠাকুরের শয্যাপরে গুরু বৈসে গিয়া।।
মহাপ্রভু বুদ্ধিমন্তে ডাক দিয়া বলে।
কাহাকে আনিলি মোর অঙ্গ যায় জ্বলে।।
পাল বলে গাত্র জ্বলে কিসের কারণ।
বুধাইরে কহে পাখা করহ ব্যজন।।
সাধু গুরু দেখিলে মহৎ সুখে দোলে।
আমি গুরু মোরে দেখে অঙ্গ যায় জ্বলে।।
নেরে বাছা ঠাকুরকে নিবি কোনখানে।
বুদ্ধিমন্ত বলে উঠে আসুন আপনে।।
দক্ষিণ ঘরেতে দিল গুরুদেব স্থান।
সেই ঘরে গুরু তবে করিল প্রস্থান।।
গ্রামবাসী যতলোক পুরুষ বা মেয়ে।
প্রভু দরশনে সবে চলিলেন ধেয়ে।।
কেহ হরি বলে কহে করে সেবা কার্য।
পুলকিত অঙ্গ সব জ্ঞান নাহি বাহ্য।।
দক্ষিণের ঘরে গুরু একা মাত্র রয়।
যেই আসে সেই বলে ঠাকুর কোথায়।।
কেহ গিয়ে উঁকি মারে দক্ষিণের ঘরে।
ঠাকুরে না দেখে দুঃখে সবে আ’সে ফিরে।।
বুদ্ধিমন্ত গুরুদেবে ভক্তি আদি করে।
পাক করিবারে দিল দক্ষিণের ঘরে।।
পাক জন্য যত কিছু দ্রব্য এনে দিল।
জল ছিটাইয়া সব দ্রব্য ঘরে নিল।।
পুনঃ পুনঃ ধৌত করি পাক পাত্র আদি।
শুষ্ককাষ্ঠে দিল জল ছিটাইতে বিধি।।
এক মেয়ে সেই কাষ্ঠে জল ছিটাইল।
পরে গুরু শুষ্ককাষ্ঠ পরশ করিল।।
পুনর্বার জল দিল গুরুদেব তায়।
পাক আরম্ভিল কাষ্ঠে অগ্নি না জ্বলয়।।
গুরু বলে নিত্য নিত্য আমি পাক করি।
শুষ্ক কাষ্ঠ উপরে সিঞ্চণ করি বারী।।
এমত কাষ্ঠত আমি পাই নাই কভু।
ঘৃতাদি ঢেলেছি কাষ্ঠ নাহি জ্বলে তবু।।
ধুমায় লোহিত চক্ষু পাক করিবারে।
এত কষ্ট পাই তোরা দেখিলি না মোরে।।
চূড়ামণি রাগ করে মেয়েদের প্রতি।
গুরুদেবে তোরা কেন না করিস ভক্তি।।
মেয়েরা বলেছে কাষ্ঠ শুকনা আছিল।
নিজে গুরু জল দিয়া কাষ্ঠ ভিজাইল।।
বুদ্ধিমন্ত চূড়ামণি প্রভুকে জানা’লে।
পাক করে গুরুদেব অগ্নি নাহি জ্বলে।।
প্রভু বলে তোর গুরু কায়স্থের ছেলে।
নমঃশুদ্র ভেবে মোরে অবজ্ঞা করিলে।।
ঘৃণা মহাপাপ স্পর্শে পালের হৃদয়।
সেই পাপে অগ্নিতাপ হীনতেজ হয়।।
ব্রহ্মতেজ বিষ্ণুতেজ অগ্নিতেজ জ্বলে।
সব তেজ নষ্ট হয় আমাকে নিন্দিলে।।
গুরুকে না চিনে বেটা করে গুরুগিরি।
অহংকারী গুরুকার্যে নহে অধিকারী।।
হেন অহংকারী লোক যথা আইসে যায়।
অগ্নিদগ্ধ নৈলে সেই স্থান শুদ্ধ নয়।।
পাকান্তে করুক সেবা তাতে ক্ষতি নাই।
অর্থলোভে গুরুগিরি এমন গোঁসাই।।
এই বাক্য মহাপ্রভু যখনে বলিল।
অবিলম্বে পাক কার্য সমাধা হইল।।
সেবায় বসিল বহু কষ্টে পাক করে।
দ্বার রুদ্ধ করি সেবা করিলেন পরে।।
সবে বলে দ্বার রুদ্ধ কর কি কারণ।
গুরু বলে না করিও ভোগ দরশন।।
দৈবে যদি কুক্কুরে আসিয়া সেবা দেখে।
কুক্কুর উচ্ছিষ্ট তাহা সেবা করিবে কে।।
বিশেষতঃ শ্রীকৃষ্ণ নৈবিদ্য তাহা নয়।
প্রসাদ না হ’লে অন্ন বৈষ্ণবে কি খায়।।
সেবা করি গুরু বৈসে আসনের পর।
হেথা প্রভুসেবা কার্যে মেয়েরা তৎপর।।
অন্ন লয়ে মেয়ে সব দিলেন প্রভুরে।
ভোজন করেন প্রভু উত্তরের ঘরে।।
একটি কুক্কুর দৈবে আসিল তথায়।
প্রভুর ভোজন পানে একদৃষ্টে চায়।।
জিহ্বা লক্ লক্ করি কাঁপিতে লাগিল।
গৃহ হ’তে প্রভু সেই কুক্কুরে দেখিল।।