Page: 037

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৩৭
গ্রন্থ কারের অনুনয়।
ত্রিপদী
গোস্বামীর অনুমতি, বন্দি মাতা সরস্বতী
মুঢ় মতি আমি অভাজন।
শক্তিময়ী দিয়া শক্তি, আমা দ্বারা কর উক্তি
পঞ্চাশ বর্ণ স্বর ব্যঞ্জন।।
নাহি মোর বর্ণ জ্ঞান, নাহি সূক্ষ্মানুসন্ধান
সাহসিনু লিখিতে পুস্তক।
যদ্যপি জ্ঞানবিহীন, তবু মম শুভদিন
লিখিতে এ হাতের সার্থক।।
হৃদিপদ্ম প্রস্ফুটিত, মন বড় আনন্দিত
রচিতে হরি চরিত্র লীলা।
এই মঙ্গলাচরণ, ভব বন্ধন মোচন
শুনিতে মঙ্গল সুশৃঙ্খলা।।
কৃষ্ণসারচর্ম দলে, কুঠার বাঁধিয়া গলে
অই দলে জুড়ি দুই হাত।
দন্তে তৃণ ধরি কেঁদে, সাধু বৈষ্ণবের পদে
কোটি কোটি করি দণ্ডবৎ।।
হরি কথা লীলামৃত, কে বলিতে পারে কত
যে যত বা করেন প্রকাশ।
মুনিগণে লেখে যত, ধ্যান অনুযায়ী মত
বেদব্যাস কবি কৃষ্ণদাস।।
লেখে যদি শূলপাণি, বাণী যদি বলে বাণী
তবু বাণী অবধি না হয়।
আমি যে সাহস করি, লিখিতে কলম ধরি
সাধু গুরু বৈষ্ণব কৃপায়।।
কার্য অতি দুরারোধ্য, লিখিতে নাহিক সাধ্য
হেন সাধ্য যেন তেন মতে।
লিখি লীলা গুহ্য বাহ্য, গ্রন্থকার মনোধার্য
পূজ্য হোক ভক্ত সমাজেতে।।
বেদব্যাস মহামুনি, যত লিখিলেন তিনি
চারিবেদ আঠার পুরাণ।
শাস্ত্র লেখে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম, গ্রন্থ লেখে লক্ষ লক্ষ
দেখিল যাহা করিয়া ধ্যান।।
একদা বদরিকাশ্রমে, ব্যাসমুনি ছিল ঘুমে
হেনকালে আসি দুই পাখী।
বদরী শাখা উপরে, দুই পাখী শব্দ করে
ব্যসদেব মেলিলেন আঁখি।।
শাখে বসি দুই শুকে, একটি কহিছে সুখে
অবিরত ত্রয়োস্ত্রিংশৎ।
অন্যটির মুখে বাণী, শুনিতেছে ব্যাসমুনি
উঠে ধ্বনি পঞ্চাশৎ।।
বাণী শুনি অকস্মাৎ, ব্যাস করে দৃষ্টিপাত
পাখী কেন সংস্কৃত কহে।
তাহা শুনিয়া বিস্ময়, সত্যবতীর তনয়
কিঞ্চিৎ ধ্যানস্থ হ’য়ে রহে।।
ধ্যানেতে হইল জ্ঞাত, উভয় পাখীর তত্ত্ব
ত্রয়োস্ত্রিংশৎ যে করে প্রকাশ।
অইটি বাল্মীকি মুনি, দেখেছেন ব্যাস মুনি
পঞ্চ পঞ্চাশৎ কহে ব্যাস।।
পাখী কহে সংস্কৃত, ইহার কারণ অর্থ
জানিবারে পুনঃ করে ধ্যান।
বাল্মীকি কহিছে বাণী, রচি রামায়ণ খানি
করিয়াছি নামের বাখান।।
ধর্ম অর্থ পাপ পুণ্য, ব্যবস্থা হয়েছে ধন্য
প্রথম পুরুষ রামলীলে।
বৈকুণ্ঠ নায়ক হরি, যৈছে অবতারকারী
বর্নিলাম স্বয়ং হরি বলে।।
স্বয়ং কৃষ্ণলীলা সার, শুদ্ধ মানুষাবতার
তাঁর তত্ত্ব তাঁর প্রাপ্তি কিসে।
তাহা আমি লিখি নাই, ধ্যানেতে ও নাহি পাই
তুমি তাহা লেখ অবশেষে।।
ব্যাস কহে শুক পাখী, আমি যে ভারত লিখি
বৈকুণ্ঠ পতির সব লীলা।
বাসুদেব যদুবংশ, নারায়ণ কৃষ্ণ অংশ
লিখি তার ঐশ্বর্যের খেলা।।
লিখিবারে তার মর্ম, ব্যাখ্যা করিয়াছি ব্রহ্ম
স্বয়ং কৃষ্ণ মাধুর্যের সার।
কোন প্রেমে তারে পাই, আমি তাহা লিখি নাই
তুমি তাহা করহে প্রচার।।
গ্রন্থ হ’বে ভাগবত, সাধুজন মনোমত
ব্রজভাব মাধুর্যের ধার্য।
গ্রন্থ হ’বে পরচার, ভক্তিরস তত্ত্বসার
রসিক ভকত শিরোধার্য।।
শুনি ব্যাস ভাবে মনে, ব্যাস কহে ব্যাস স্থানে
এরা দুই শুক শ্যাম শুক।
এরা কহে রচিবারে, এ রচনা রচিবারে
এবে আমি না হ’ব ইচ্ছুক।।