Page: 051

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৫১
প্রথমে গার্হস্থ্য ধর্ম্ম তৈলের দোকান।
বাণিজ্য প্রণালী শিক্ষা সবে কৈল দান।।
হাতে করে কাম মনে মুখে করে নাম।
রসরাজ করে তার চরণে প্রণাম।।
নিষ্কাম বা আত্মসমর্পণ।
পয়ার।
এইমত ঠাকুরের হইল প্রকাশ।
পরে এসে ওঢ়াকাঁদি করিলেন বাস।।
জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রভুর যে শ্রীগুরুচরণ।
তাহার অনুজ নাম শ্রীউমাচরণ।।
বাস কৈল ওঢ়াকাঁদি আমভিটা খ্যাত।
পুরাতন ভিটা ছিল না ছিল বসত।।
ঠাকুরের পুত্র কন্যা কিছু না জন্মিতে।
অলৌকিক লীলা সব করেন ক্রমেতে।।
আমভিটা ঘর করি মহাপ্রভু কয়।
দেখি কার্য্য না করে কি খেতে পাওয়া যায়।।
দিবারাত্রি খাটি কেহ না পারে আটাতে।
অন্নহীন যায় দিন ভ্রমে পথে পথে।।
কর্ম্ম ক্ষেত্রে কর্ম্ম করে আশা হয় হানি।
দোকান পাতিয়া লভ্য না পায় দোকানী।।
অর্থ লোভে কার্য্যক্ষেত্রে জীবন কাটায়।
আত্মস্বার্থ খাটাইয়া লভ্য কই পায়।।
কেহ না করিয়া কার্য্য রাজ্যপ্রাপ্ত হয়।
কোটি লোকে দাস হ’য়ে পড়ে তার পায়।।
সুখদুঃখ সংসারের যত বাহ্য কার্য্য।
যে করায় তারে কেহ নাহি করে গ্রাহ্য।।
যখন গৌরাঙ্গ প্রভু লীলা প্রকাশিল।
কি কার্য্য করিল সবে কেবা খেতে দিল।।
মুনি ঋষি যোগী ন্যাসী তপস্যা করিত।
কহ দেখি কে কোথায় না খেয়ে মরিত।।
বহু জীব মীন পাখী কীট পতঙ্গম।
আত্মস্বার্থ কর্ম্মত্যাগী নিষ্কাম নিয়ম।।
আজ হতে কাজ কর্ম্ম সব ত্যাজিলাম।
পবিত্র চরিত্র নামে রুচি রাখিলাম।।
যদ্যপি আমরা নহে সে কাজের কাজি।
পাই কিনা পাই খেতে ব’সে থেকে বুঝি।।
এত বলি মহাপ্রভু নামধ্বনি দিল।
ভক্তগণে হরি বলি নাচিতে লাগিল।।
এ ভবসংসারে প্রভু বৃথা দিন যায়।
রসনা-বাসনা পাদ-পদ্ম মধু পায়।।
বৈশ্য দস্যুর প্রস্তাব।
পয়ার।
নবরূপে লীলা জীবশিক্ষার কারণ।
শিখাইল জীবগণে আত্মসমর্পণ।।
বসিতেন মহাপ্রভু ভক্তগণ ল’য়ে।
কেহ এসে নিয়া যেত নিমন্ত্রণ দিয়ে।।
পথে যেতে ভক্তগণ নামগান করে।
কত লোক কাঁদিতেন প্রভুপদ ধরে।।
কেহ বা দাঁড়া’ত পথে হস্ত প্রসারিয়া।
বাঞ্ছা পুরাইত তার গৃহেতে যাইয়া।।
দধি দুগ্ধ ঘৃত অন্ন পায়স পিষ্টক।
ভক্তমনোনীত দ্রব্য যত আবশ্যক।।
কোন দিন মহাপ্রভু ভক্তগণ সঙ্গে।
থাকিতেন সুধাময় কৃষ্ণকথা রঙ্গে।।
নাম গান প্রেম কথা সর্ব্বদা আনন্দ।
ডাকিয়া হাকিয়া বলে বল রে গোবিন্দ।।
একদিন হরিচাঁদ বসিয়া বিরলে।
নিষ্কাম প্রবন্ধে পুরাতন কথা বলে।।
শুন শুন ভক্তগণ কথা পুরাতন।
রাঢ় দেশে ছিল এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ।।
ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী দোহে বড়ই দুঃখিত।
ব্রাহ্মণ সে দস্যু, জ্ঞান নাহি হিতাহিত।।
বনমধ্যে গিয়া চুরি ডাকাইতি করে।
ধন সব লুটে লয় লোকে মরে ডরে।।
রাজা টের পেল দুরিত ব্রাহ্মণ।
দস্যুবৃত্তি করি করে ধন উপার্জ্জন।।
মহারাজ একদিন মহাক্রোধ করি।
লোক দিয়া লুঠিল সে ব্রাহ্মণের বাড়ী।।
নিযুক্ত করিল গ্রামে চারিটি সিপাই।
কোন খানে ব্রাহ্মণে যেতে সাধ্য নাই।।
ভিখারী হইয়া ভিক্ষা করিবারে যায়।
দস্যু বলি কেহ তারে ভিক্ষা নাহি দেয়।।
এখানে তাহাকে কেহ ভয় নাহি করে।
নির্ভয় হইল সবে দস্যু মরে ডরে।।
ব্রাহ্মণের ঘরে আর নাহি মিলে অন্ন।
দূর দূর করে সবে গেলে ভিক্ষা জন্য।।