Page: 222

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২২২
সিংহের শাবক ইহা ধরিল শৃগালে।
সিংহ হ’য়ে ভয় হ’ল শৃগালের পালে।।
তব শক্তি ধৈর্য ডুরি বোঝা যে দিনেতে।
দিলেন ভবানী দিদি মোর মস্তকেতে।।
সেই হতে হারিয়াছি পূর্ব বুদ্ধি বল।
সে জন্য ছাড়িনু লাঠি নিল দুষ্ট খল।।
হেনকালে দয়ারাম ছেড়ে দিল গরু।
গরু রাখিবারে গেল বাঞ্ছাকল্পতরু।।
বলিলেন ভবানীরে বাড়ী মধ্যে যাও।
তুমি গিয়া খাও জয়চাঁদে খাওয়াও।।
আমি এই পালানেতে গরু চরাইব।
তোমরা খাইয়া এস বিদায় করিব।।
তাহা শুনি জয়চাঁদ বাড়ী মধ্যে গিয়ে।
ঠাকুর নিকটে পুনঃ আসিলেন খেয়ে।।
ঠাকুর বলেন তোরা আর কি করিবি।
এইত দেখিলি মোরে আর কি দেখিবি।।
নয়ন মুদিয়া মোরে চিন্তিবি যখনে।
অমনি আমার দেখা পাইবি তখনে।।
যে লাঠি নিয়াছে কাজ নাহি সে লাঠিতে।
আমি এই লাঠি দেই রাখিস সঙ্গেতে।।
কারো সঙ্গে কখন না করিও জুলুম।
মালেকে যাইতে রণে দিলে সে হুকুম।।
অস্ত্র শস্ত্র না নিয়ে এ লাঠি নিয়ে যেও।
বিপক্ষেরে ঐ লাঠি ঘুরায়ে দেখাইও।।
যা হ’বার হইবেক ভয় করিও না।
এই লাঠি সর্বজয়ী রণে হারিবে না।।
এই লাঠি অগ্রভাগ এইটুকু ফাঁড়া।
সুতা দিয়া বাঁধিয়া আগায় দিও জোড়া।।
প্রভুর শ্রীপদধূলি লইয়া মাথায়।
কাঁদিতে কাঁদিতে সাধু নিজ দেশে যায়।।
গৃহে আসি সেই লাঠি সুতায় বাঁধিল।
সযতনে তৈল জল মর্দন করিল।।
জয়চাঁদ মনে চিন্তা করে অনুক্ষণ।
নয়ন মুদিলে হরি দিবেন দর্শন।।
না দেখিলে সেইরূপ প্রত্যয় না হয়।
পরীক্ষা করিতে ধ্যানে বসিল সন্ধ্যায়।।
কত পাপ করিয়াছি নাহি লেখা জোখা।
দয়া করি প্রভু কি আমাকে দিবে দেখা।।
এত ভাবি জয়চাঁদ আরোপে বসিল।
নয়ন মুদিয়া রূপ চিন্তিতে লাগিল।।
করুণা নিধান হরি বুঝি ভক্ত মন।
জয় চাঁদে দয়া করি দিলেন দর্শন।।
কি সৌভাগ্য জয়চাঁদ হরি দেখা দিল।
রসরাজ বলে সবে হরি হরি বল।।
জয়চাঁদের যুদ্ধ জয়।
পয়ার।
জয়চাঁদ হ’তে আছে আর এক কার্য।
ঠাকুর মহিমা সেই বড়ই আশ্চর্য।।
কাছারীতে নতুন এক নায়েব আসিল।
ভূস্বামীর ভালবাসা নায়েব হইল।।
চৌগাছি নিবাসী বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস।
সুচরিত্র প্রবল প্রতাপে হ’ল যশ।।
নায়েবের নিজ জমিদারী ল’য়ে গোল।
বিপক্ষ পক্ষের সঙ্গে বাঁধিল কোন্দল।।
বিপক্ষে প্রধান জমিদার একজন।
মহা হুলুস্থল হ’ল বেঁধে গেল রণ।।
যে দিন হইবে যুদ্ধ তিনদিন অগ্রে।
বড় চিন্তাযুক্ত বাবু কিবা আছে ভাগ্যে।।
জয়চাঁদে কহে কেঁদে হইয়া কাতর।
বলে ওহে জয়চাঁদ কি হইবে মোর।।
তিনদিন পরে এই যুদ্ধ দিতে হবে।
যুদ্ধে না পারিলে মম বাড়ী লুঠে নিবে।।
সিপাহী লইয়া তুমি মম বাড়ী যাও।
এ বিপদ হ’তে তুমি আমাকে বাঁচাও।।
মোর দেশে সিপাহী আছে ত’ ভাল ভাল।
তবু মোর শান্তি নাই চিন্তা নাহি গেল।।
তাহা শুনি জয়চাঁদ করিল স্বীকার।
যা করেন হরিচাঁদ করিব সমর।।
আটজন সিপাহী লইয়া জয়চাঁদ।
যাত্রা করে জয়চাঁদ স্মরি হরিচাঁদ।।
চৌগাছি দিনের মধ্যে উতরিল গিয়া।
তিনদিন পরে রণ হইবে ভাবিয়া।।
নিরস্ত আছয়ে সে সিপাহী নয় জন।
অপর সিপাহী আর নাহি একজন।।
দুই দিন পরে রণ জনরব আছে।
দেশীয় সিপাহীগণ কেহ না এসেছে।।
একদিন অগ্রে বিপক্ষেরা দিল হানা।
রণোন্মত্ত কেহ কার নাহি শুনে মানা।।