Page: 024

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২৪

সে কারনে না জানাই বৈষ্ণব সমাজে ।
মড়া পুত্র গোপনে রাখিনু মাঝে ।।
হইল বৈষ্ণব সেবা আনন্দ হৃদয় ।
এবে আনিলাম ছেলে বৈষ্ণব সভায় ।।
মৃত পুত্র লয়ে নাচে আনন্দিত মন ।
বালকের মুখে হল জল উদ্গিরন।।
বালকের মৃত দেহে সঞ্চারে জীবন ।
ধন্য ধন্য করি হরি বলে সাধুজন ।।
অন্নপূর্ণা বাঞ্ছাপূর্ণ পুত্র নিল কোলে ।
রচিল রসনা মৃত্যুঞ্জয় কৃপা বলে ।।


মোহমুদগরোপখ্যান।

পয়ার

পুনঃ বৈষ্ণবেরা বসিলেন একঠাই ।
বলে ধন্য যশোমন্ত হেন দেখি নাই ।।
মোহ মুদ্গরের বাটি শ্রীকৃষ্ণ অর্জুন ।
কৃষ্ণভক্তি বুঝিবারে গেলেন দুজন ।।
ব্রাহ্মণ বেশেতে গিয়া উপনীত অতিথি ।
মুদ্গরে ডাকিয়া বলে আমরা অতিথি ।।
অতিথিরে দিল সাধু পাক করিবারে ।
তিন পুত্র পাঠাইল পরিচর্যা তরে ।।
জ্যেষ্ঠ পুত্র গিয়াছিল জল আনিবারে ।
অকস্মাৎ সেই পুত্র খাইল কুম্ভিরে ।।
মধ্যম সন্তান গেল কাষ্ঠ আনিবারে ।
বন মাঝে ব্যাঘ্র ধরি মারিল তাহারে ।।
কনিষ্ঠ সন্তান গেল আনিবারে পাত্র ।
কালসর্প তাঁর শিরে করিল আঘাত ।।
পুত্রের বিলম্ব দেখি মুদ্গর চলিল ।
সাপে বাঘে কুমিরে মেরেছে দেখে এল ।।
এই ভাবে তিন পুত্র মড়ে গেল তাঁর ।
নিজে এনে দ্রব্য দিল অতিথি সেবার ।।
মুদ্গরের নারী আর পুত্রবধু তিন ।
নহে তারা শোকাতুরা বিকারবিহীন ।।
ছদ্মবেশে কৃষ্ণ বলে শুন মহাশয় ।
কাষ্ঠ পাতা আনতে গেল তাহার কোথায় ।।
মুদ্গর কহিছে তারা মহা ভাগ্যবান ।
অতিথি সেবাতে তারা ত্যজিয়াছে প্রান ।।
কৃষ্ণ বলে ম’ল তব তিনটি নন্দন ।
পুত্র শোকে মুদ্গর কাঁদনা কি কারন ।।
মুদ্গর কহিছে কেন করিব রোদন ।
পুত্র ম’ল ভাল হ’ল ঘুচিল বন্ধন ।।
মায়ার বন্ধন কেটে দিলেন গোবিন্দ ।
নির্বিঘ্নে বলিব হরি করিব আনন্দ ।।
কৃষ্ণ বলে শীঘ্র যাও ডেকে আন ঘরে ।
অতিথি সেবাতে কবে কার পুত্র মড়ে ।।
যারে নিল কুম্ভীরেতে উপজিল আসি ।
কৃষ্ণ অগ্রে এনে দিল জলের কলসী ।।
এই মত তিন পুত্র হ’ল উপনীত ।
হরি পদ ধরি সব ধূলায় লুণ্ঠিত ।।
পরিচয় দিয়া হরি করিল গমন ।
অভিমন্যু শোক পার্থ কৈল সম্বরণ ।।
মুদ্গরের পুত্র দিল গোলোক গোঁসাই ।
যশোমন্ত বৈরাগীর আজ হ’ল তাই ।।
আর সাধু বলে শুন বৈষ্ণবের গন ।
কৃষ্ণলীলা সুধাধার মধুর বর্ষণ ।।
অম্বরীষ গৃহে ছিল একটি নন্দন ।
দশ বর্ষ পরমায়ূ ছিল নিরূপণ ।।
সংক্ষেপে বলিব এবে তাঁর বিবরন ।
সূতিকা আগারে যবে ছিল সে নন্দন ।।
অদৃষ্ট লিখন যবে লেখে পদ্মাসন ।
দাসী গিয়া ধরিল সে বিধির চরণ।।
দাসী বলে ওহে বিধি কি লিখিয়া যাও ।
বালকের আয়ু কত মম ঠাই কও ।।
অনেক স্তবেতে বিধি সন্তুষ্ট হইল ।
দশ বর্ষ পরমায়ূ দাসীকে বলিল ।।
দাসী জানাইল রাজরানীর গোচরে ।
রানী জানাইল তাহা মহারাজ তরে ।।
অল্প আয়ু জানি নাহি দিল লিখিবারে ।
মনে মনে চিন্তা করে রাজার কুমার ।।
ভাবে আমি রাজকূলে একটি কুমার ।।
পিতা না করেন যত্ন মোরে লেখাবার ।।
রাজপুত্র জিজ্ঞাসিল পিতৃদেব স্থলে ।
কেন পিতা মোরে নাহি দেন পাঠশালে ।।
রাজা বলিলেন সেই বালকের ঠাই ।
দশবর্ষ আয়ু আছে বাছা লেখাব’টি ছাই ।।
দশবর্ষ পরমায়ূ তোমার যে ছিল ।
নয় বর্ষ এই তার গত হয়ে গেল ।।
রাজপুত্র বলে পিতা আর শুনিব কি ।
এখনতো মরনের একবর্ষ বাকি ।।