Page: 078

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৭৮
গোলোক মাতিল আর মাতিল বদন।
নারিকেলবাড়ী ধন্য তাদের কারণ।।
ঠাকুর পাইয়া হ’ল জগতে আনন্দ।
মাতিয়াছে দশরথ আর মহানন্দ।।
ইহা দেখি দ্রবীভূত নহে মম মন।
যেমন মানুষ আমি হ’য়েছে তেমন।।
জ্ঞান হয় ওঢ়াকাঁদি স্বয়ং অবতার।
তিনি বিনে পতিতের বন্ধু নাহি আর।।
রাউৎখামার হ’ল প্রেমের বাজার।
প্রেমের পাথারে সবে দিয়েছে সাঁতার।।
ওঢ়াকাঁদি হতে প্রেমবন্যা উথলিল।
আমি বিনে জগতের সকলে ডুবিল।।
মরিলে ঠাকুর দেখে পরকাল পাব।
শেষে বিষ খেয়ে আমি আত্মঘাতী হ’ব।।
বিষ কিনে লইলেন কাপড়ে বাঁধিয়া।
এ বিষ খাইব ঠাকুরের কাছে গিয়া।।
বিষ ল’য়ে ওঢ়াকাঁদি উপনীত হ’ল।
প্রভুর নিকটে গিয়া কাতরে বসিল।।
প্রভু বলে মৃত্যুঞ্জয় এলি ওঢ়াকাঁদি।
পরিধান কাপড়েতে কি আনিলি বাঁধি।।
অমনি বিস্ময়াম্বিত হ’ল মৃত্যুঞ্জয়।
মুখপানে চেয়ে র’ল কথা নাহি কয়।।
বসন টানিয়া প্রভু বিষ খসাইল।
বাহির করিয়া নিজে বিষ পান কৈল।।
এলি এই বিষ খেয়ে মরিবার তরে।
ওঢ়াকাঁদি এলে কিরে বিষে লোক মরে।।
এই বিষ খেয়ে বাছা মরিতে কি তুমি।
এইত’ বিষ খেলাম মরিত’ না আমি।।
মৃত্যুঞ্জয় মনে মনে ভাবিতে লাগিল।
ফাঁকি দিয়ে বেণে বেটা বিষ নাহি দিল।।
বিষ না দিয়ে বণিক দিয়েছে সে কুড়।
বিষ নহে এতে কেন মরিবে ঠাকুর।।
পুনঃভাবে এই বিষে ঠাকুর মরিলে।
প্রহ্লাদ ম’ল না কেন অগ্নি বিষানলে।।
বিষপানে মরিল না ভোলা বিশ্বনাথ।
কালীয় শ্রীকৃষ্ণ অঙ্গে কৈল দন্তাঘাত।।
হইলে সামান্য লোক হইত নিপাত।
নিশ্চয় বুঝিনু ইনি প্রভু জগন্নাথ।।
বিষপানে মরিতেন মানব হইলে।
আমার মনের কথা কেমনে জানিলে।।
আমি যে এনেছি বিষ গোপন করিয়া।
কেহ নাহি জানে আনি কাপড়ে বাঁধিয়া।।
গোপনে রেখেছি কিসে পাইল সন্ধান।
অন্তর্যামী ইনিত স্বয়ং ভগবান।।
প্রভু কয় মৃত্যুঞ্জয় শুনরে বচন।
বিষ খেয়ে মরে যে সে মানুষ কেমন।।
নিজ দেহ প্রতি যার দয়ামায়া নাই।
সে ভালো বাসিবে পরে বিশ্বাস না পাই।।
মৃত্যুঞ্জয় কহে প্রভু তোমার সাক্ষাতে।
মরিব বিষের বিষে ভয় কি তাহাতে।।
প্রভু বলে যদি তোর মরিবার ইচ্ছে।
মরিলি ত’ ভাল ক’রে মর মোর কাছে।।
পড়ে পদে মনোখেদে বলে মৃত্যুঞ্জয়।
দোষ ক্ষমা করি প্রভু রেখ রাঙ্গা পায়।।
দীন দয়াময় দয়া কর একবার।
আমিও তোমার প্রভু এ দেহ তোমার।।
প্রভু বলে যদি মোরে দেহ দিলি ধরি।
ব্যাধিমুক্ত হলি তুই ব’ল হরি হরি।।
শ্রীনাথ শ্রীমুখ বাক্য যখন বলিল।
ব্যাধিমুক্ত মৃত্যুঞ্জয় নাচিতে লাগিল।।
মৃত্যুঞ্জয় ধরি হরি চরণ যুগল।
বলে হরি বল হরি বল হরি বল।।
মৃত্যুঞ্জয় পাইল প্রভুর শ্রীচরণ।
কহিছে তারক হরি বল সর্বজন।।
শ্রীহীরামন পাগলের উপাখ্যান।
পয়ার।
মৃত্যুঞ্জয় হরিবোলা হ’ল ভাগ্যক্রমে।
যাতায়াত করে প্রভু মল্লকাঁদি গ্রামে।।
মৃত্যুঞ্জয় ভবনে আসেন হরিচাঁদ।
সস্ত্রীক সেবেন হরিচাঁদের শ্রীপদ।।
দুই চারি দিন বাটী থাকেন নির্জনে।
হরিচাঁদ গুণ গায় শয়নে স্বপনে।।
হরিচাঁদে না দেখিলে প্রাণ উঠে কাঁদি।
ঠাকুরে দেখিতে যেত ক্ষেত্র ওঢ়াকাঁদি।।
ঠাকুরের পাদপদ্ম দরশন করে।
কভু মল্লকাঁদি গ্রামে আনে নিজ ঘরে।।
মৃত্যুঞ্জয়ের রমণী কাশীশ্বরী নাম।
সাধ্বী সতী পতিব্রতা জপে হরিনাম।।