Page: 094

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৯৪
বাকবন্ধ করিয়া থাকিবা ছয়মাস।
মারিলেও কিছু নাহি করিও প্রকাশ।।
রাত্রিতে থাকিও এক গৃহস্থ আলয়।
বাহিরে থাকিও এক কন্থা দিয়া গায়।।
একমাত্র ডোর আর একটি কপিন।
খুলিও না পরিয়া থাকিবা রাত্রিদিন।।
যে ডোর কপিন কন্থা করিবা ধারণ।
অন্য বস্ত্র কন্থা না পরিবা কদাচন।।
ছয়মাস গত হ’লে দিবসে বেড়াইও।
ভাবের ভাবুক হ’লে তার বাড়ী যেও।।
নিশিতে থাকিয়া তার সঙ্গে বল কথা।
তাহা ভিন্ন অন্য কথা না কহিও কোথা।।
দশরথ বলে যাহা ‘চাই দিলে তাই’।
প্রভু বলে ‘আমি তোর বাসনা পুরাই’।।
তোর যে ভাবনা আছে বহুদিন হ’তে।
ভাবিলে ভাবনা সিদ্ধি পারিলে ভাবিতে।।
যে যাহা ভাবনা করে ঠাকুরের স্থান।
অবশ্য অভীষ্ট পূর্ণ করে ভগবান।।
মোর ঠাই যেই ইচ্ছা করে সেই জন।
আমি তা জানিতে পারি সকল কারণ।।
যে যাহা প্রার্থনা করে এসে মম ঠাই।
সেই গীত আমি তার সাথে সাথে গাই।।
কর্মকর্তা ফলভোগে না হ’য়ে কি যায়।
সুকর্ম দুষ্কর্ম ফল অবশ্যই হয়।।
তা না হ’লে ঈশ্বরের ব্যবস্থা থাকেনা।
কিন্তু দৈবে সাধুসঙ্গ পায় যেই জনা।।
তার কাটে কর্মসূত্র সাধুর কৃপায়।
কর্মপাশ মুক্ত সেই দৈব ভাগ্যে হয়।।
নিঃস্বার্থ ভাবেতে যেই পর উপকারী।
অকামনা শুদ্ধ প্রেম তারে ব্যাখ্যা করি।।
আত্মসুখে কর্ম করে তাকে বলি কাম।
পরসুখে কর্ম করে ধরে প্রেম নাম।।
মম কষ্ট ভেবে মম সুখের নিমিত্তে।
তব ইচ্ছা সদা পর উপকার অর্থে।।
শ্লোক
আলোচ্য সর্ব্বশাস্ত্রাণি বিচার্য চ পুনঃ পুন।
ইদমের সুনিস্পন্নং ধ্যেয়ো নারায়ণঃ সদা।।
পয়ার।
ভাগবত তুমি তাহা জানিলাম সত্য।
তোমার প্রেমেতে আমি হইনু বিক্রীত।।
সর্বত্যাগী সর্বরোগী সর্বভোগী যেই।
মাধুর্যের পাত্র মহাভাগবত সেই।।
সর্ব ত্যাগ করে বাছা পরিলে কৌপিন।
সর্ব ত্যাগ সর্বভোগী হ’লে উদাসীন।।
কি ব্যাখ্যা করিব তোরে নাহি বলাবল।
কি ফল ব্যাখ্যিব তোরে নাহি ফলাফল।।
শুনিয়া পড়িল সাধু দণ্ডবৎ করি।
শ্রী হরি বলিয়া অম্নি করিল শ্রীহরি।।
দশরথ বলে আমি বড়ই জঘন্য।
তব বাক্য সত্য আমি আজ হ’তে ধন্য।।
অযাচক বৃত্তি ভিক্ষা প্রবৃত্ত হইল।
দেশে দেশে অইভাবে ভ্রমিতে লাগিল।।
ভ্রমণ করেন ঠাকুরের আজ্ঞামত।
সেভাবে জীবিকা রক্ষা করে অবিরত।।
ছেঁড়া কাঁথা গায় ডোর কৌপিন পরিয়া।
ছেঁড়াকানি মস্তকেতে চিবরী বান্ধিয়া।।
বাক বন্ধ অন্তরে জপিত হরিবোল।
ভিক্ষা করিতেন করে করি কমুন্ডল।।
মল্লকাঁদি ছিলেন বিশ্বাস মৃত্যুঞ্জয়।
মল্লকাঁদি ছেড়ে কালী নগরে উদয়।।
মাঝে মাঝে ঠাকুর আসেন মল্লকাঁদি।
অনুক্ষণ মৃত্যুঞ্জয় যান ওঢ়াকাঁদি।।
একদিন ঠাকুর বলেন মৃত্যুঞ্জয়।
করগে কালীনগরে বসতি আশ্রয়।।
তাহাতে ত্যাজিয়া মল্লকাঁদির বাসর।
ভিটা ছাড়ি করে বাড়ী সে কালীনগর।।
দৈবযোগে একদিন সেই ভদ্রাসনে।
দশরথ উপনীত দিবা অবসানে।।
মৃত্যুঞ্জয় দশরথ সূর্যনারায়ণ।
তার মধ্যে হইলাম আমি একজন।।
কহিতেছে দশরথ হরষিত মনে।
কল্য বাছা আমারে যে মেরেছে যবনে।।
মৃত্যুঞ্জয় জিজ্ঞাসিল কেমনে মারিল।
হাসিতে হাসিতে সাধু কহিতে লাগিল।।
ঠাকুরের কথা আছে কথা না কহিব।
অযাচক বৃত্তি দ্বারা জীবন রাখিব।।