Page: 127

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১২৭
জ্যেষ্ঠ শ্রীউদয় বালা মেজে জয়চাঁদ।
শ্রীরামকুমার হরানন্দ ব্রজনাথ।।
কাঁদিয়া পড়িল এসে ঠাকুরের পায়।
কি হ’বে কি হ’বে প্রভু নাহিক উপায়।।
এক কাঠা ধান্য চিঁড়া দধি দুইখান।
মাত্র পাঁচসের চিনি গেল জাতি মান।।
মহাপ্রভু বলে তোর চিঁড়া দধি আন।
দেখিব কেমনে আজ যায় জাতি মান।।
চিঁড়া দধি চিনি আন আমি দেখি সব।
ইহা দিয়া করিব চিঁড়ার মহোৎসব।।
ঠাকুরের সম্মুখেতে চিঁড়া এনে দিল।
দধি চিনি চিঁড়া প্রভু সকল দেখিল।।
প্রভু বলে চিঁড়া লও সভার মধ্যেতে।
একমুষ্ঠি করি গিয়া দেও সব পাতে।।
প্রভু আজ্ঞামতে চিঁড়া দিল সব পাতে।
অর্ধ চিঁড়া ফুরাইল সব পাতে দিতে।।
চিনি পাঁচ সের সব পাতে পাতে দিলা।
সব পাতে দধি দিল এক এক মালা।।
সব পাতে সব দিল আজ্ঞা অনুসারে।
জ্ঞান হয় ত্রিভুবনে ফুরাইতে নারে।।
সব ভক্ত সেবা করে অতি কুতূহলে।
প্রেমানন্দে ভিড় দিয়া হরি হরি বলে।।
চিঁড়া দধি যখনেতে লইল মাখিয়া।
দশগুণ বৃদ্ধি হ’য়ে উঠিল ফুলিয়া।।
যার পাতে দিতে যায় সেই করে মানা।
চিনি দধি চিঁড়া খেয়ে ফুরা’তে পারে না।।
অলৌকিক ক্রিয়াতে বিস্মিত সর্বজনে।
খায় আর হরি হরি বলেছে বদনে।।
অশ্রুজলে সকলের বক্ষঃ ভেসে যায়।
উর্দ্ধ বাহু করি কেহ হরিধ্বনি দেয়।।
কেহ বলে হেনমতে কভু নাহি খাই।
কেহ বলে হেন ভোজ কভু হয় নাই।।
চিঁড়া মাত্র ষোল সের তার অর্ধ আছে।
দ্বৈগুণ্য ভোজন দেহ অবশ হ’য়েছে।।
এমন সুস্বাদ আর কভু খাই নাই।
মধুর হইতে সুমধুর স্বাদ পাই।।
কেহ বলে ওরে ভাই শুনি তাই শাস্ত্রে।
একহাঁড়ি দধি ছিল জটিলের হস্তে।।
সেই দধি কোটি কোটি ব্রাহ্মণেরা খায়।
দেবের দুর্লভ দধি স্বাদু অতিশয়।।
ব্রাহ্মণেরা খায় দধি সুধার সমান।
এত দধি দুইখান সে’ত একখান।।
কোটি ব্রাহ্মণেরা খায় যাহার দয়ায়।
সেই প্রভু মাচকাঁদি হ’লেন উদয়।।
চিঁড়াতে অক্ষয় দৃষ্টি সে প্রভু করিল।
এই সে কারণে চিঁড়া অক্ষয় হইল।।
কেহ বলে ওরে ভাই শুনেছি ভারতে।
যুধিষ্ঠির রাজসূয় যজ্ঞের কালেতে।।
রাজা দুর্যোধন ধন ভাণ্ডারেতে ছিল।
শত্রুতা করিয়া ধন বিলাইয়া দিল।।
তথাপি সে ধনাগার পরিপূর্ণ ধনে।
ধন ফুরাইতে নারে যার দয়াগুণে।।
সেই দয়াময় হরি বসিয়া সাক্ষাতে।
চিঁড়া দধি অফুরাণ তাঁহার গুণেতে।।
কেহ বলে ওরে ভাই আর কিবা চাও।
যার এ আশ্চর্য লীলা তার গুণ গাও।।
শ্রীউদয় বালা চারি ভাই সঙ্গে করি।
লোটা’য়ে পড়িল ঠাকুরের পদ ধরি।।
কেঁদে বলে ওহে প্রভু ব্রহ্ম সনাতন।
পঞ্চপাণ্ডবকে রক্ষা করিলে যেমন।।
ষাইট সহস্র শিষ্য ল’য়ে মুনিবর।
সন্ধ্যাহ্নিক করিতে গেলেন সরোবর।।
পঞ্চভাই কৃষ্ণ ঠাই জানাইল দৈন্য।
কৃষ্ণা ঠাই কৃষ্ণ গিয়া খাইল শাকান্ন।।
তৃপ্তস্মী বলিয়া জল খাইল নারায়ণ।
তব তৃপ্তে জগতৃপ্ত ত্রিলোকের জন।।
অদ্য তাত করলে তাত ওহে ভগবান।
রক্ষা কৈলে ওহে প্রভু বালাদের মান।।
প্রভু বলে সেই আমি ভাব যদি তাই।
সেই আমি যদি তোরা সেই পঞ্চ ভাই।।
এই পঞ্চ ভাই তোরা দ্বাপর লীলায়।
শেষে ভবানন্দ পুত্র আমি নদীয়ায়।।
যুগে যুগে ভক্ত তোরা হইলি আমার।
এবে তোরা পঞ্চ পুত্র শঙ্কর বালার।।
আর কথা দিয়া কিবা আছে প্রয়োজন।
অন্ন পাক করহ তণ্ডুল এক মণ।।
শাক তরকারী দিয়া করহ ব্যঞ্জন।
তাহাতে স্বচ্ছন্দে হইবে পরিবেশন।।
আশ্চর্য মানিয়া সব প্রভু ভক্তগণ।
আনন্দে করেছে সবে নাম সংকীর্তন।।