Page: 149

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৪৯
সবে মিলে পাগলের বিক্রম দেখিয়া।
ভ্রান্তিতে গিয়াছে সবে সংজ্ঞা হারাইয়া।।
সিংহ নাদ সিংহবীর্য গর্জিছে পাগল।
জয় হরি বল মন গৌর হরি বল।।
মদনের ভগিনী মহিমা নাম ধরে।
তার কণ্ঠস্বর যেন অমৃত নিক্ষরে।।
পাগল উন্মত্ত হ’য়ে করে হরিনাম।
বেড়াপাক কীর্তন যেমন ক্ষেত্রধাম।।
দলে দলে মহাপ্রভু নাচিত যেমন।
তেমনি গোলোকচন্দ্র করিছে ভ্রমণ।।
এক এক বার যবে দিতেছেন লম্ফ।
তিন চারি বাড়ী কাঁপে যেন ভূমিকম্প।।
পাগলের প্রতি কার্তিকের বড় আর্তি।
দৈবেতে পাগলের দেখিল কপি মূর্তি।।
লম্ফ দিয়া দশ বার হাত উর্দ্ধ হয়।
লাঙ্গুল ঠেকিল গিয়া কার্তিকের গায়।।
শূন্য মার্গে রাম রাম রাম রাম বলে।
অতি ভীমকায়, লম্বা পুচ্ছ, পিছে ঝুলে।।
অক্রুর রামকুমার ডেকেছে কার্ত্তিক।
কি দেখিনু কি হইল নাহি পাই ঠিক।।
তোমরা জানহ শাস্ত্রগ্রন্থ রামায়ণ।
দেখ এসে পাগলের লক্ষণ কেমন।।
ঘরে থাক কেন সবে বাহিরে এসনা।
একা আমি দেখিলাম তোরা দেখিলি না।।
অক্রুর রামকুমার বাহিরে আসিল।
কপি মূর্তি দেখি তথা মূর্ছিত হইল।।
দেখে মোহপ্রাপ্ত হৈলি কহিছে পাগল।
ধ’রে তুলে বলে তোরা বল হরিবোল।।
শম্ভুনাথে বলে কি দেখিলি শম্ভুনাথ।
শম্ভু কহে লেজ দেখি দশ বার হাত।।
পাগল বলিছে কারু নাহি দিব ফাঁকি।
দেখাইব যাহা আছে দেখাবার বাকী।।
যা গ্রামের শ্যামা রামা সবে ডেকে আন।
সকলে দেখুক আমি বানর প্রধান।।
চূড়ামণি পুত্র রামমোহন সুমতি।
ঠাকুরের প্রিয় ভক্ত মাতা তোলাবতী।।
পাগল কহিছে ডেকে সবে তোরা আয়।
হইয়াছে বেশী বেলা স্নানের সময়।।
চলিল সকল ভক্ত হরিধ্বনি দিয়ে।
পাগলের জয় জয় সকলে বলিয়ে।।
অগ্রে চলিলেন সব মতুয়ারগণ।
আর সব পিছে চলে করি সংকীর্তন।।
পাছের লোকের সঙ্গে চলিল গোঁসাই।
ক্ষণে দেখে সর্ব অগ্রে করে পাগলাই।।
হরিনাম ধ্বনি উঠে গগন মণ্ডলে।
পাগল বলিল সবে নাম গিয়া জলে।।
জলকেলি করিতে সকলে এলি জুটে।
সবে নাম ঘাটে আমি যাইব অঘাটে।।
পাগল পশ্চিম দিকে যায় ঘাট ছাড়ি।
শম্ভুনাথ সাথে সাথে যায় দৌড়াদৌড়ি।।
শম্ভুনাথ দৌড়ে যায় দেখিয়া কার্ত্তিক।
পিছে পিছে দৌড়ে যায় হহিয়া বিদিক।।
অক্রুর রামকুমার তাহা দেখি ধায়।
পাগল মারিল লম্ফ লেজ দেখা যায়।।
লম্ফ দিয়া পাগল জলের মধ্যে পড়ি।
জল ফেলাফেলি করে আছাড়ী পাছাড়ী।।
পূর্বঘাটে সকলে করিছে জলকেলি।
পশ্চিমে পাগল করে জল ফেলাফেলি।।
জল ছিটাছিটি যেন ঘন মেঘ বৃষ্টি।
পাগলের প্রতি কার নাহি চলে দৃষ্টি।।
হেনকালে মধ্যে জলে মকর উঠিল।
পাগল মকর ধরি মাথায় লইল।।
জলের মধ্যেতে দৃষ্টি করে চারিজনে।
পাগল জলের পরে বসি যোগাসনে।।
জল হ’তে উঠে জল বৃষ্টি যেন হয়।
কেবা বরিষণ করে কে জল উঠায়।।
মকর মস্তকে ছিল পড়িল জলেতে।
পাগল বসিল গিয়া মকর পৃষ্ঠেতে।।
দেখে পাগলের নাই পূর্বের আকৃতি।
মকরের পৃষ্ঠে বসে শ্বেত বর্ণা সতী।।
পাগল জল তরঙ্গে ভাসিয়া বেড়ায়।
ভাসিতে ভাসিতে শেষে এল কিনারায়।।
মাত্র এক মকর ভাসিয়া রহে জলে।
বৃষ্টি ধারা অনুক্রমে মকর ডুবিলে।।
দেখিতে দেখিতে পুনঃ মকর ভাসিল।
গঙ্গা এসে মকরের পৃষ্ঠেতে বসিল।।
দেখিয়া পাগলচাঁদ ধাইয়া চলিল।
গঙ্গার চরণ ধরি মস্তকে করিল।।
গঙ্গাদেবী ধরিয়া পাগলে করে কোলে।
সিংহনাদে পাগল ডেকেছে মা মা বলে।।