Page: 168

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৬৮
এই রূপে যখন যে দ্রব্য চাহিবেন।
দিবা রাত্রি কাছে থাকি সকলে দিবেন।।
এইরূপে সবে থাক গোঁসাই সেবায়।
রাত্রিকালে চারিজন সর্বক্ষণ রয়।।
চিন্তামণি সরস্বতী তারক সাধনা।
দিবারাত্রি সর্বকাল রহে চারিজনা।।
কেহ আসে কেহ যায় কেহ উঠে বসে।
কেহ নিদ্রাবশীভুতা চক্ষের নিমিষে।।
বারশ ছিয়াশী সাল ঊনত্রিশে বৈশাখ।
সকলকে বলে তোরা হরি বলে ডাক।।
প্রভু বলে মোরে যদি ভালই বাসিস।
আজ তোরা মোর কাছে কেহ না আসিস।।
বৈকাল বেলায় দেড় প্রহর থাকিতে।
সকলকে তুষিলেন সুমিষ্ট বাক্যতে।।
আমার এ ঘর ছাড়ি অন্য স্থানে যাও।
দূরে নহে নিকটে নিকটে সবে রও।।
তাহা শুনি চারিজন রহে স্থানান্তরে।
তাহার নিকটে রহে গোস্বামী যে ঘরে।।
দক্ষিণের ঘর পরিষ্কার পরিপাটী।
পশ্চিম দক্ষিণ দিকে বেড়া আঁটাআঁটি।।
নূতন নির্মাণ ঘর দেখিতে সুন্দর।
গোঁসাই দেখিয়া বলে এ ঘর আমার।।
তোমার যে বড় ঘর ও ঘরে না যাব।
এই ঘরে থেকে আমি ঠাকুর দেখিব।।
সেই ঘরে গোস্বামীর শয্যা করে দিয়া।
উত্তরের বেড়া দিল চাটাই ঘেরিয়া।।
এগারই তারিখে জয়পুর আসিলা।
সেই দিন রহিলেন আম্রবৃক্ষ তলা।।
বারই বৈশাখ দিনে সে ঘরে প্রবেশে।
শুশ্রূষা করেন সবে মনের হরিষে।।
বেদনা যখন উঠে হয়েন অস্থির।
দুঃখেতে সবার চক্ষে ঝরে অশ্রুনীর।।
পাগল বলিল সবে ঘর হ’তে যাও।
যদি মোরে ভালোবাস মোর কথা লও।।
ঘরের বাহিরে গেল যত নরনারী।
গুণ গুণ রবে সবে বলে হরি হরি।।
কেহ বা নিকটে যায় গোস্বামী দেখিতে।
হস্ত তুলে মানা করে নিকটে যাইতে।।
উত্তরের বেড়ে বেড়া ঠেলিয়া চাটাই।
হরি বলে ভূমি তলে পড়িল গোঁসাই।।
সীতানাথ তাহা দেখি ডাক দিয়া কয়।
পাগল ঢলিয়া পল এস কে কোথায়।।
অমনি তারক গিয়া দৌড়িয়া ধরিল।
জ্ঞানশূন্য অচৈতন্য কোলেতে করিল।।
সান্ত্বনা করিব বলে ধরিল যতনে।
অতি ধীরে কোলে করি আনিল প্রাঙ্গণে।।
সীতানাথের জননী বলিল তখনে।
অচেতন পাগল দেখনা তুমি কেনে।।
পাগলেরে হরি নাম করাও শ্রবণ।
এ বার গোঁসাই বুঝি ত্যাজিল জীবন।।
যার যা উচিৎ তাহা করহ এখন।
উচ্চৈঃস্বরে হরিনাম কর সর্বজন।।
হেনকালে গোস্বামী দিলেন অঙ্গঝাঁকি।
হস্ত পদ লোম কেশ উঠিল চমকি।।
গোস্বামীর মুখ হ’তে উঠে এক জ্যোতি।
চিকমিক ঠিক যেন বিদ্যুতের ভাতি।।
তারকের মুখে বুকে লাগিল সে জ্যোতি।
আর শূন্যে উঠে মহানন্দ দেহে স্থিতি।।
গোপাল নামেতে একজন লোক আসি।
কাষ্ঠ করে হৃষ্ট মনে হ’ল রাশি রাশি।।
তাহা দেখে সাধনা সে বলিল অভীষ্ট।
কি কারণে তোমরা করেছ এত কাষ্ঠ।।
গোস্বামীর অগ্নিকাষ্ঠ করা বড় দায়।
এ কার্য করিতে মম মনে লাগে ভয়।।
বেদনায় গোস্বামীর জ্বলে গেছে দেহ।
একরূপ গোস্বামীর তাতে হ’ল দাহ।।
ল’য়েছে অগ্নির শেক ব্যথায় অস্থির।
তাতে আর এক দাহ হ’য়েছে শরীর।।
ঠাকুরের লীলাসাঙ্গ হ’ল যে অবধি।
সে দারুণ আগুনে পুড়েছে নিরবধি।।
পোড়া দেহ পুনঃ কেন করিবা দাহন।
নব গঙ্গা জলে দেহ, দেহ বিসর্জন।।
গঙ্গার কামনা পূর্ণ গোস্বামীর আশা।
গঙ্গার শীতল উভয়ের ভালোবাসা।।
মনে বলে এর যদি কর বিপর্যয়।
তোমার বিপদ হ’বে জানিও নিশ্চয়।।
কেহ বলে পরোয়ানা এসেছে থানায়।
জলে কদাচার কিছু করা নাহি যায়।।
জলেতে প্রস্রাব কেহ করিবারে নারে।
মলত্যাগ করিলে চালান দেয় ধরে।।