Page: 054

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৫৪
লীলাজীর মন হ’ল দস্যু ব্রাহ্মণেরে।
দিয়াছিনু মন্ত্র দেখে যাই সে কি করে।।
এতেক ভাবিয়া সাধু বাহুড়ী চলিল।
দস্যু শিষ্য বাটী এসে উপনীত হ’ল।।
দূরে থেকে লীলাজীকে করি দরশন।
উর্দ্ধবাহু করি নৃত্য করে’ছে ব্রাহ্মণ।।
ক্ষণে কক্ষবাদ্য ক্ষণে করে দন্ডবৎ।
লীলাজী চরণে নত হ’ল দন্ডবৎ।।
লীলাজীকে স্কন্ধে করি নাচিতে নাচিতে।
হরি হরি বলি ল’য়ে চলিল বাটিতে।।
রাজ ভেট সামগ্রী যতেক ছিল ঘরে।
ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী তাতে গুরু সেবা করে।।
গ্রাম্য লোকে করে সুখে জয় জয় ধ্বনি।
খাও খাও লও লও এই মাত্র শুনি।।
ব্রাহ্মণের প্রেম দেখি বৈষ্ণব সকল।
গ্রাম্য লোক সঙ্গে মিশে বলে হরিবল।।
নগরবাসিনী রামাগণে বলে হরি।
সাধুসেবা জন্য আনে চা’ল তরকারী।।
সাধুসেবা মহোৎসব তাহাতে হইল।
দ্রব্যাদি উদ্বৃর্ত্ত আরো কতোই রহিল।।
সদাগরদত্ত সহস্রেক মুদ্রা ছিল।
লীলাজী চরণে দস্যু সব এনে দিল।।
লীলাজী বলিল সব দিলে যে আমায়।
খাইতে পরিতে বাপু তোর কি উপায়।।
বিপ্র বলে এতদিন দেখেছি খাইয়া।
খাইয়া ফুরাতে নারি আপনার দয়া।।
যে ধন আমারে প্রভু করেছেন দান।
ত্রিভুবনে ধন নাই তাহার সমান।।
সত্যভামা ব্রতকালে দান নিল মুনি।
উদ্ধব লিখিয়া দিল নাম চিন্তামণি।।
সে ধনমিশ্রিত রস যে বা করে পান।
সুস্বাদ নাহিক আর সে সুধা সমান।।
দয়া করি সেই সুধা খেতে দিলে মোরে।
পেট ভরে খেলে সুধা আরো ক্ষুধা বাড়ে।।
হেন যদি জ্ঞান করি আমি বড় দীন।
উচ্চ শৃঙ্গে টেনে তুলে তোমার কপিন।।
ভবগৃহে তব ভাবশয্যায় শয়ন।
নিদ্রা দেবী চৌকি দেন থাকিয়া চেতন।।
তব আশীর্ব্বাদে মোর বাস বহির্ব্বাস।
বাসে বাসে দেশে দেশে গৌরদেশে বাস।
রাজদূতে দণ্ড দিত ঘোর চোর জেনে।
দূত রাজাভেট দেয় রাজলক্ষ্মী সনে।।
তোমার মহিমা প্রভু জানিল সকলে।
কল্য চোর অদ্য সাধু তব কৃপা বলে।।
তব মন্ত্র বল এবে হইল প্রকাশ।
ব্রহ্মপদ হ’তে উচ্চপদ কৃষ্ণদাস।।
এ সব বৈভব দেখে মনে হয় হাসি।
ভক্তি সহ মুক্তি দেবী হইয়াছে দাসী।।
এত শুনি লীলাজীউ ধরি দিল কোল।
প্রেমানন্দে সাধুগণে বলে হরিবোল।।
গুরু কহে এবে কর তীর্থ পর্য্যটন।
দ্বিজ কহে তীর্থ-রাজ তব শ্রীচরণ।।
গুরু কহে সব লোকে করে গিয়া তীর্থ।
গয়া ধামে পিণ্ড দিলে ত্রিকুল পবিত্র।।
শিষ্য বলে কর্ণে মন্ত্র দিয়াছে যে মাত্র।
তদবধি কোটি কুল স্বর্গে করে নৃত্য।।
পতিতপাবন যত বৈষ্ণবসমাজ।
গেল দিন কহে দীন কবি-রসরাজ।।
শাপভ্রষ্টা বাহ্মণীর টিকটিকি রূপ ধারণ ও মোক্ষণ।
পয়ার।
গুরু সঙ্গে শিষ্য কহে মধুর বচন।
হেনকালে শুন এক আশ্চর্য ঘটন।।
দৈবে চাল হ’তে এক টিকটিকি পড়ি।
গর্ভিণী অবস্থা গেল পেট ফেটে মরি।।
টিকটিকি মরে গুরু সাক্ষাতে পড়িয়া।
দ্বিজ কৃষ্ণদাস কাঁদে গড়াগড়ি দিয়া।।
গুরুর সম্মুখে কেন জীব হত্যা হ’ল।
পেট ফেটে গড়াগড়ি কত কষ্টে ম’ল।।
তাহাতে এতেক কষ্ট টিকটিকি পেল।
কি হ’ল কি হ’ল বলে কাঁদিতে লাগিল।।
এত কষ্টে গুরু হে জ্যোষ্ঠির মৃত্যু হয়।
দেখে দুঃখে বুক ফাটে প্রাণ বাহিরায়।।
হরি হরি বলি দ্বিজ কাঁদিতে লাগিল।
ভগ্ন ডিম্ব হ’তে ছানা বাহির হইল।।
গুরু কহে ছানা বাঁচে আর কাঁদ বৃথা।
বিপ্র বলে কষ্ট পেল এই মম ব্যথা।।