Page: 033

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৩৩
ইহারা সকলে মাত্র গৃহাশ্রমী হয়।
গৃহত্যাগী শেষে হয় গোস্বামীরা ছয়।।
ঢাকিয়া রসিক ধর্ম গৃহধর্ম দিয়া।
অবনীতে অবতীর্ণ শ্রীহরি আসিয়া।।
গৃহধর্ম লভিবেক যজিবে যাজন।
অন্তরঙ্গ রসিক হইবে সেই জন।।
পূর্বে যার যেই পথ আছে জানাজানি।
এদানি লইবে তারে সেই পথে টানি।।
বিশ্বনাথে বাঁচাইয়া হরিচাঁদ নিল।
সেই বিশ্বনাথ শেষে দরবেশ হ’ল।।
করেছেন কত লীলা পৌগণ্ড সময়।
লিখিতে অসাধ্য মোর পুঁথি বেড়ে যায়।।
কিছুদিন পরে হ’ল গোচারণ সায়।
বিবাহ করিল প্রভু কৈশোর সময়।।
ঠাকুরের জন্ম অগ্রে পরে যে সময়।
রামকান্ত আসিতেন মোহান্ত আলয়।।
বৈরাগী ব্রাহ্মণ আদি অতিথি আসিত।
কারু না কহিত প্রভু নিজ মনোনীত।।
নিন্দা কি বন্দনা কারু কিছু না করিত।
রামকান্ত এলে গিয়া পদে লোটাইত।।
কিছু অন্তরেতে রামকান্তে ল’য়ে যেত।
দুই প্রভু একাসনে নির্জনে বসিত।।
রামকান্তে বলিতেন তুমি মম গুরু।
যুগে যুগে তুমি মোর বাঞ্ছাকল্পতরু।।
এইভাবে রামকান্তে করিতেন স্তুতি।
কথোপকথনে কাটাতেন দিবারাতি।।
প্রভু সব মনোবৃত্তি কান্তে জানাইল।
মধুময় শ্রীহরি চরিত্র হরিবল।।
অথ লক্ষ্মীমাতার জন্ম, বিবাহ ও যশোমন্ত ঠাকুরের তিরোভাব।
পয়ার
জিকাবাড়ী নিবাসী লোচন প্রামাণিক।
একমাত্র কন্যা ভালবাসে প্রাণাধিক।।
বৈকুণ্ঠের লক্ষ্মী যিনি সত্যে বেদবতী।
অম্বরীষ কন্যা যিনি দ্বাপরে শ্রীমতি।।
বিষ্ণুপদ সেবানন্দ ক্ষীরোদ বাসিনী।
ত্রেতাযুগে সীতা সতী দ্বাপরে রুক্মিনী।।
বিষ্ণুপ্রিয়া নাম ধরে গৌরাঙ্গ গৃহিণী।
কলিতে হ’লেন তিনি লোচন নন্দিনী।।
যে কালে জন্মিল মাতা লোচনের ঘরে।
ভূমিষ্ঠ হ’লেন যবে সূতিকা আগারে।।
কি লিখিব কি লিখিব ভেবেছি বসিয়া।
শান্তিদেবী পদ ভাবি নয়ন মুদিয়া।।
অন্তর হইতে এক নারী বাহিরিল।
সেই নারী লক্ষ্মীমার ধাত্রী যেন ছিল।।
আমি যেন দেখিলাম বিভীষিকা প্রায়।
ধ্যানে কি স্বপনে দেখি বোঝা নাহি যায়।।
দেখিলাম শান্তিমার শান্তিময়ী পদ।
রাঙা চরণেতে ফুটিয়াছে কোকনদ।।
ধাত্রী দেখে কোকনদ উড়িয়া আসিল।
শান্তিমার শ্রীচরণে প’ড়ে লুটাইল।।
প্রসবিনী ফুলনাড়ি যবে প্রসবিল।
এক ফুল তথা হতে পদে লুকাইল।।
ইহা শুনিলাম যেন প্রলাপের প্রায়।
সজ্ঞানেতে লিখিলাম ধাত্রী যাহা কয়।।
ধাত্রী বলে প্রসূতিরে বলি মা তোমায়।
তোমার এ কন্যা মা সামান্যা কভু নয়।।
ধাত্রী কহিলেন লোচনের গৃহিণীরে।
লোচন-গৃহিণী কয় লোচনের তরে।।
শুনিয়া লোচন সব করিল প্রত্যয়।
এ মেয়ের যোগ্য বর পাইব কোথায়।।
নির্জনে বসিয়া করে ঈশ্বরের ধ্যান।
এই কন্যা কাহাকে করিব সম্প্রদান।।
বহু চিন্তা মনে মনে করিতে লাগিল।
এদিকেতে লক্ষ্মীমাতা বলিষ্ঠা হইল।।
বাল্যকালে যখনেতে করিতেন খেলা।
বালিকাগণের সঙ্গে করিতেন মেলা।।
আয় গো ভগিনী মোরা খেলিব সকলে।
সর্বমঙ্গলার পূজা করি সবে মিলে।।
সতীর বেদনা যানে সেই মাতা সতী।
পঞ্চতপা হইয়া পাইল পশুপতি।।
কল্য শাস্ত্র শুনিয়াছি বাবার গোচরে।
জগন্মাতা জন্ম নিয়াছিল গিরিপুরে।।
বাল্যকালে করিলেন তপস্যা আরম্ভ।
শিবপূজা করিলেন সদা অবলম্ব।।
তপস্যার ফলে পতি পায় কৃত্তিবাস।
সতীমার পূর্ণ হ’ল মনো অভিলাষ।।