Page: 073

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৭৩

দোহাই ওঢ়াকাঁদির বাবা হরিচাঁদ।
গলা ঝাড়ে ডাক ছাড়ে যেন সিংহনাদ।।
দণ্ডমাত্র রামকুমারের গলা ঝাড়ি।
বলে আমি যাইব না নারিকেলবাড়ী।।
তোমরা গৃহেতে যাও আমি গৃহে যাই।
দেখ গিয়ে গোলোকের গলা ফুলা নাই।।
রামচাঁদ যাহা যাহা বলে দিয়াছিল।
বাটীতে আসিয়া সত্য তাহাই দেখিল।।
সেই সব প্রকাশিল বাটীতে আসিয়া।
গোলোক উন্মত্ত হ’ল সে কথা শুনিয়া।।
প্রভুকে দেখিবো বলে ওঢ়াকাঁদি যায়।
লোটাইয়া পড়ে গিয়ে ঠাকুরের পায়।।
প্রভু বলে এতদিন কেন নাহি আলি।
ব্যাধিযুক্ত হ’য়ে কেন এতকষ্ট পা’লি।।
এতদিন পরে যদি এলি মম ঠাঁই।
যাও বাপ গৃহে যাও আর ভয় নাই।।
শুনিয়া গোলোক প্রেমে কম্পিত হইল।
অনিমিষ নেত্রে রূপ দেখিতে লাগিল।।
শঙ্খ চক্র গদাপদ্ম চতুর্ভুজধারী।
পরিধান পীতাম্বর মুকুন্দমূরারী।।
রূপ দেখি ঝোরে আঁখি ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস।
বলে আমি আর না করিব গৃহবাস।।
গোলোক বলেন আমি কার বাড়ী যা’ব।
চরণে নফর হ’য়ে পড়িয়া রহিব।।
প্রভু বলে ঘরে যাও ওরে বাছাধন।
চিরদিন মোরে বলে থাকে যেন মন।।
গোলকে বলেন হরি চিনেছি তোমায়।
চিরদাস বিক্রিত হইনু তব পায়।।
প্রভু বলে বিকাইলি পাইলাম তোরে।
কর গিয়া গৃহকার্য যাব তোর ঘরে।।
গোলোক চলিল ঘরে প্রভুর কথায়।
সময় সময় ওঢ়াকাঁদি আসে যায়।।
মাসান্তর পক্ষান্তর সপ্তাহ অন্তরে।
মাঝে মাঝে যাইত প্রভুকে দেখিবারে।।
দশরথ মহানন্দ মাতিল তাহাতে।
গ্রাম্য লোক প্রমত্ত হইল সেই মতে।।
হরিচাঁদ গোলোকের ভাব প্রেমবশে।
যাতায়াত করে প্রভু গোলোকের বাসে।।
এইভাবে হরিবোলা হইল গোলোক।
হরি হরি বল সাধু কহিছে তারক।।

বদন ঠাকুরের উপাখ্যান।

পয়ার।

গোলোক পাগল হ’ল ঠাকুরের ভক্ত।
ভক্তিভাবে আত্মহারা সদাই উন্মত্ত।।
গাঢ় অনুরাগ অষ্ট সাত্ত্বিক বিকার।
নাহি মানে বেদবিধি বীর অবতার।।
বীরেতে বীরত্ব যেন তুল্য হনুমান।
ধীর রসে শ্রীঅদ্বৈত শক্তি অধিষ্ঠান।।
উন্মত্ত স্বভাব সদা নাহি ছুটে কভু।
শয়নে স্বপনে ভাবে হরিচাঁদ বিভু।।
অনুক্ষণ আসে প্রভু গোলোকের ঠাঁই।
ক্রমে প্রেমে ভাবাবিষ্ট বদন গোঁসাই।।
গোলোকের খুল্লতাত ‘গোঁসাই’ বদন।
সেই যে বদন হরেকৃষ্ণের নন্দন।।
হইল অসাধ্য ব্যাধি উদরে বেদনা।
অহরহ বেদনায় বিষম যাতনা।।
আয়ুর্ব্বেদ নিদান মতের চিকিৎসক।
খন্ডজ্ঞানী মুষ্টিযোগী সুমন্ত্র পারক।।
অনেকে দেখিল রোগ আরোগ্য না হয়।
অবশেষে দেখিলেন এক মহাশয়।।
তিনি এসে বলিলেন বেদনা সারিব।
উদরেতে ফোঁটা দিয়া ঘা বান’য়ে দিব।।
গাছড়ার রসদ্বারা দিল ষোল ফোঁটা।
চর্ম ঠোসা পড়ে শেষে ঘা হ’ল ষোলোটা।।
মাসেক পর্য্যন্ত সেই করে মুষ্টিযোগ।
নিদারুণ জ্বালা হ’ল নাহি সারে রোগ।।
একেত’ ঘায়ের ব্যথা ব্যথা পুরাতন।
উভয় ব্যথার জ্বালা নাহি নিবারণ।।
ক্রমে বৃদ্ধি বেদনাতে অস্থিচর্ম্মসার।
অদ্য কিংবা কল্য মৃত্যু এরূপ আকার।।
কেহ বলে চিকিৎসার নাহি প্রয়োজন।
কেহ বলে বৈদ্যনাথ প্রতি দেহ মন।।
কেহ বলে আর কিছু নাহি হরি বল।
কেহ বলে বাঁচ যদি ওঢ়াকাঁদি চল।।
জগত জীবন তিনি জগতের কর্ত্তা।
মরিলে বাঁচাতে পারে সবে কহে বার্ত্তা।।
আত্ম স্বার্থ সমর্পণ করহ তাহায়।
চল যাই ওঢ়াকাঁদি ঠাকুর কি কয়।।