Page: 107
শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১০৭
কভু দশরথ ঠাকুরকে ল’য়ে যান।
তিন চারি দিন তথা থাকেন ভগবান।।
কৃষ্ণ গোষ্ঠ নাম পদ সংকীর্তন হয়।
নদীয়াতে যেন শ্রীবাসের আঙ্গিনায়।।
মাতিল অনেক লোক প্রেমে উতরোল।
ঘাটে পথে যেতে খেতে শুতে হরিবোল।।
গ্রামের পাষণ্ডী যারা বাধ্য নাহি তায়।
কাছারিতে নায়েবের কাছে গিয়া কয়।।
কি মত এ গ্রামে আনিয়াছে দশরথ।
গ্রাম্য লোক নষ্ট হ’বে থাকিলে এ মত।।
মেয়ে পুরুষেতে বসি একপাতে খায়।
মেয়েদের এঁটে খায় পদধূলা লয়।।
পুরুষ ঢলিয়া পড়ে মেয়েদের গায়।
মেয়েরা ঢলিয়া পড়ে পুরুষের গায়।।
দিবানিশি হরিনামে পেয়েছে কি মধু।
রাত্রি ঘুম পড়া নাই এ কেমন সাধু।।
ওঢ়াকাঁদি হ’তে হরি ঠাকুরকে আনে।
সে ঠাকুর যেন কোন মোহিনী মন্ত্র জানে।।
বুঝিয়াছি ইহারা নিশ্চয় জানে যাদু।
হরি ব’লে যায় চ’লে সতী কুলবধূ।।
এ গ্রামেতে লেগেছে বাবু বড় হুলস্থূল।
গ্রাম্য নমঃশূদ্রদের গেল জাতি কুল।।
কশ্যপ মুনির বংশ গোত্রজ কাশ্যপ।
দশরথ হ’তে সেই মান্য হয় লোপ।।
ইহার বিচার কর আনিয়া কাছারি।
এই কাণ্ড আপনাকে দেখাইতে পারি।।
ঠাকুর আছেন দশরথের ভবনে।
সকল প্রত্যয় হবে দেখিলে নয়নে।।
রাত্রিকালে হুড়াহুড়ি শুনা যায় শব্দ।
ছয় সাত দিন মোরা হ’য়ে আছি স্তব্ধ।।
নায়েব বলিছে এবে যাওগে সকলে।
আমাকে লইয়া যেও কীর্তনের কালে।।
সূর্যদেব ডুবে গেল সন্ধ্যাকাল এল।
নাম গান কীর্তনেতে সকলে মাতিল।।
পুরুষ যতেক বসা পিড়ির উপরে।
মহাপ্রভু বসেছেন গৃহের ভিতরে।।
দরজার নিকটে খোল করতাল বাজে।
ঠাকুর আছেন বসি কীর্তনের মাঝে।।
রামাগণ অনেক ব’সেছে গৃহভরা।
মাঝে মাঝে হুলুধ্বনি দিতেছে তাহারা।।
কেহ বা প্রভুর অঙ্গে দিতেছে বাতাস।
ঠাকুরের ঠাই বসি পরম উল্লাস।।
নাম গানে যবে প্রেমবন্যা বয়ে যায়।
রামাগণে বামাস্বরে হুলুধ্বনি দেয়।।
গৃহে বসিয়াছে রামাগণ সারি সারি।
প্রভুপার্শ্বে বসিয়াছে মালাবতী নারী।।
কোন নারী ঠাকুরের চরণে লোটায়।
কোন নারী পদ ধরি গড়াগড়ি যায়।।
কোন নারী কেঁদেছে হা হরি জগন্নাথ।
শ্রীপদ ধোয়ায় কেহ ধরি অশ্রুপাত।।
হেনকালে গ্রামীরা নায়েবে ল’য়ে যায়।
বাড়ীর উপরে নিয়া তাহাকে বসায়।।
দুইভাগ করিয়া পীড়ার লোক সবে।
চৌকি পাতি সমাদরে বসায় নায়েবে।।
যে স্থান হইতে ঠাকুরকে দেখা যায়।
এমন স্থানেতে নিয়া নায়েবে বসায়।।
রামাগণ বাহ্যজ্ঞান হারা সবে ঘরে।
নায়েবে বসিয়া সেই ভাব দৃষ্টি করে।।
অজ্ঞান হইয়া কেহ প্রেমে গদগদ।
হা নাথ বলিয়া কেহ শিরে ধরে পদ।।
চতুর্দিকে নারী মালা মালাবতী বামে।
মৃদুস্বরে হরি বলে মত্ত হ’য়ে প্রেমে।।
মালাবতী ভেসেছেন নয়নের জলে।
স্কন্ধে হাত দিয়া হরি কেঁদোনা মা বলে।।
বদনে তাম্বুল চাবা চর্বণ যা ছিল।
কাশীসহ সেই চাবা ঠাকুর ফেলিল।।
মালাবতী হস্তপাতি ধরিল চর্বণ।
মস্তকে পরশ করি করিল ভক্ষণ।।
ভক্ত পদ রজ ভক্ত পদ ধৌত জল।
ভক্ত ভুক্ত শেষে এই তিন মহাবল।।
জগন্নাথ প্রসাদ কুক্কুর মুখ ভ্রষ্ট।
লভিতে বিরিঞ্চি বিষ্ণু শিবের অভীষ্ট।।
স্বয়ং ভগবান মুখ চর্বিত চর্বণ।
মালাবতী সতী তাহা করিল ভক্ষণ।।
শীলা যথা শত কুম্ভ জলে সিক্ত নয়।
প্রেমে দ্রবীভূত নয় পাষণ্ড হৃদয়।।
বিশেষ গ্রামী লোকের ছিল অনুরোধ।
তাহা দেখি নায়েবের উপজিল ক্রোধ।।
ডেকে বলে দশরথ ওরে বনগরু।
মজাইবি দেশ শুদ্ধ ক’রে নিলি শুরু।।