Page: 099

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৯৯

দেখি ঠাকুরানী পড়ে পদে লোটাইয়া।
মৃত্যুঞ্জয় পড়িলেন চরণ ধরিয়া।।
জানকী পতিতা পদে কাঁদিয়া কাঁদিয়া।
প্রেম-বন্যা উথলিয়া চলিল বহিয়া।।
কাশীশ্বরী সবে তোলে ধরিয়া ধরিয়া।
ঠাকুর বলেন সবে লহ উঠাইয়া।।
সকলে বসিল এসে ঠাকুরের ঠাই।
মহাপ্রভু পদধরি কাঁদিছে সবাই।।
এ সময়ে মৃত্যুঞ্জয় প্রেমেতে মাতিয়া।
হরি হরি হরি বলে নাচিয়া নাচিয়া।।
মহাপ্রভু বলে আয় আয় মৃত্যুঞ্জয়।
আমরা এখানে তুই নাচিস কোথায়।।
এত শুনি মৃত্যুঞ্জয় নৃত্য সম্বরিল।
শ্রীহরির শ্রীপদে শ্রীপাদ লোটাইল।।
ক্রমে ক্রমে সকলেই প্রেম সম্বরিল।
ফুলের বাগান দিকে নজর পড়িল।।
সন্ধ্যাগ্রে দেখিছে ফুল শাখা পরিপূর্ণ।
এবে দেখে ফুল নাই শাখা সব শূন্য।।
ফুল ছিল বাগানেতে ঘেরা পরিপাটী।
এবে দেখে মাঝে মাঝে দুটি কি একটি।।
এসে গৃহে মৃত্যুঞ্জয় কহিছেন বাণী।
ধন্য মাতা ধন্য পিতা ধন্য মোর ভগ্নী।।
মাতা মোর রত্নগর্ভা যে গর্ভে ভগিনী।
হেন গর্ভে অগ্রে আমি তাহে ধন্য মানি।।
যে গৃহে অনাথ নাথ গৃহ ধন্য মানি।
যে গৃহে তোমাকে সেবে ধন্য সে গৃহিণী।।
তব পাদপদ্মে প্রভু এই ভিক্ষা চাই।
জনমে জনমে তোমা এইরূপে পাই।।
ঠাকুর বলেন বাছা তুইরে সাধক।
জনমে জনমে তুই আমার সেবক।।
যাবচ্চন্দ্র দিবাকর জনমে জনমে।
তব প্রেমে বাধ্য আমি তোমার আশ্রমে।।
মৃত্যুঞ্জয় বলে প্রভু আর নাহি চাই।
অহৈতুকী ভক্তি যেন জন্মে জন্মে পাই।।
জানকী আরোপ মনোরম্য ফুলসাজ।
কহিছেন তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।


মৃত্যুঞ্জয়ের কালিনগর বসতি।

পয়ার।

মল্লকাঁদি গ্রাম্য জমি হয়ে গেল জলা।
উর্বরা যতেক জমি হইল অফলা।।
গ্রাম মাঝে কৃষিকার্য করিত যাহারা।
নানারূপ বাণিজ্যাদি করিল তাহারা।।
হরিচাঁদ বলে শুন ওরে মৃত্যুঞ্জয়।
এ দেশে অজন্মা হ’ল কি হবে উপায়।।
সকলে বাণিজ্য করি হইল ব্যাপারী।
তুমিত বেড়াও শুধু বলে হরি হরি।।
জননী তোমার হয় পরমা বৈষ্ণবী।
কিসে হবে মাতৃসেবা মনে মনে ভাবি।।
গৃহস্থের গৃহকর্ম রক্ষা সুবিহিত।
কর্মক্ষেত্র গৃহকার্য করাই উচিত।।
ভার্যা তব সাধ্বী সতী অতি পতিব্রতা।
কার্য কিছু না করিলে খেতে পাবে কোথা।।
তুমি যাও মধুমতি নদীর ওপার।
দিনকতক থাক গিয়া বাছারে আমার।।
থাকগে চণ্ডীচরণ মল্লিকের বাড়ী।
জমি রাখ ধান্য পাবে কৃষিকার্য করি।।
মম অন্তরঙ্গ ভক্ত হবে সে দেশেতে।
তোমারে করিবে ভক্তি একাগ্র মনেতে।।
হরিনাম সংকীর্তন কর দিবা রাত্রি।
তাহা হলে সবে তোমা করিবেক ভক্তি।।
কোকিলা নামিনী রাম সুন্দরের কন্যা।
পদুমা নিবাসী দেবী নারীকুল ধন্যা।।
রামসুন্দরের ভার্যা তিনকড়ি মাতা।
সে বৃদ্ধা পরমা ধন্যা সতী পতিব্রতা।।
গিয়াছিল ক্ষেত্রে জগন্নাথ দরশনে।
জগন্নাথ রূপ তার লাগিল নয়নে।।
জগবন্ধু বলি সদা করিত রোদন।
দেশে এল জগবন্ধু করি দরশন।।
ভোর রাত্রি শুকতারা করি দরশন।
তখন হইত প্রেম ভাব উদ্দীপন।।
সূর্যোদয় অষ্ট সাত্বিক ভাবের উদয়।
স্বেদ পুলকাশ্রু কম্প রৌদ্র বীর ভয়।।
কাঁদিতে কাঁদিতে বৃদ্ধা হয়েন উন্মত্তা।
উত্তার নয়ন হন ধরাতে লুণ্ঠিতা।।
প্রভাতে উদিত হ’ল তরুণ তপন।
দেখেন জগবন্ধুর শ্রীচন্দ্র বদন।।