Page: 082

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৮২

প্রভুর নিকটে গিয়া উপনীত হ’ল।
তাহা দেখি প্রভু গিয়া গৃহে লুকাইল।।
সেইখানে তিলক সে কাহারে না দেখে।
হীরামনে তুলে এক গাছতলা রাখে।।
ভজন পোদ্দার বলে বাড়ী তোর কোথা।
মরা শব ফেলাইয়া যা’স কেন হেথা।।
তিলক মণ্ডল শুনি উঠিল নৌকায়।
ত্বরা করি খুলে তরী পালাইল ভয়।।
ভজন বলেছে কোথা যাস কুলাঙ্গার।
সবে কয় কোথা যায় শীঘ্র ওরে ধর।।
বড় কর্তা কৃষ্ণদাস অগ্রজ প্রভুর।
বলে ওরে ধরে আন যায় কতদূর।।
এত বলি বড়কর্তা ধাবমান হয়।
মহাপ্রভু এসে তথা অগ্রজে শান্তায়।।
প্রভু বলে দেখ দাদা হ’য়ে আগুয়ান।
একেবারে মরেছে কি? আছে ওর প্রাণ।।
বড়কর্তা দেখে গিয়া নাকে শ্বাস নাই।
কণ্ঠদেশে বামপার্শ্বে ল’ড়ে দেখে তাই।।
মহাপ্রভু এসে চটকার গাছতলা।
দেখে বলে এ দেখি সে হীরামন বালা।।
বসিলেন হীরামনে রাখিয়া সম্মুখে।
রহিলেন মহাপ্রভু উত্তরাভিমুখে।।
প্রভু কহে দেখে হে পোদ্দার মহাশয়।
প্রাণ আছে একেবারে মরা শ’ব নয়।।
বড়কর্তা বলে হরি ব্রজা মরে গেছে।
মরা যে বাঁ’চাতে সে ত’ নাই বেঁচে।।
মরা গরু বাঁচাইল তোর সঙ্গী ব্রজা।
পার যদি হও মরা বাঁচাবার ওঝা।।
রাউৎখামারের লোক মরা ফেলে যায়।
বালা গুষ্ঠি এত বৃদ্ধি পেয়েছে কোথায়।।
প্রভু হরিচাঁদ তবে কহেন অগ্রজে।
এরা যেন মরা ফেলে গেছে কি গরজে।।
একরাত্রে নির্জনেতে বলি হরি হরি।
এ রোগী চিকিৎসা আমি করিবারে পারি।।
কৃষ্ণদাস বলে কর পার যদি ভাই।
রাউৎখামার লোকের কোন দোষ নাই।।
যাও তথা, খাও তথা, তথা কর লভ্য।
তাহারা তোমার বাটী আনে কত দ্রব্য।।
সেই গ্রামে হরিবোলা মতুয়ার দল।
ভকত বাঁচাও ভাই ভক্তবৎসল।।
কিন্তু যদি এ মরা বাঁচাতে নার ভাই।
বালার বালাহী যাবে আর রক্ষা নাই।।
মাতুব্বর চ’তে বালার এত কি আস্পর্ধা।
কৃষ্ণদাস নাম বুঝি শোনে নাই গাধা।।
কার মরা এনে ফেলাইল কার বাড়ী।
বাঁচাতে পার’ত যশ হবে দেশ ভরি।।
যদি বাঁচাতে না পার ব’লে হরি হরি।
বালাদের নামে আমি করব ফৌজদারি।।
প্রভু কহে বড়কর্তা দেখ বিদ্যমান।
একেবারে মরে নাই দেহে আছে প্রাণ।।
নাসাগ্রে ঈষৎমাত্র বহিতেছে শ্বাস।
বাঁচিলে বাঁচিতে পারে হ’তেছে বিশ্বাস।।
কথোপকথনে হ’ল দিবা অবসান।
হেনকালে লক্ষ্মীমাতা এল সেই স্থান।।
মাতা বলে তবে কেন ক’রেছ বিলম্ব।
নিশ্চয় চৈতন্য বালা করেছে এ কর্ম।।
আপনার ঠাকুরালী তথায় বেড়েছে।
পরীক্ষা করার জন্য ইহা করে গেছে।।
প্রভু বলে যাহা হউক সবে যাহ ঘরে।
আমি দেখি চেষ্টা করি ঈশ্বর কি করে।।
সবে গেল প্রভু মাত্র রহিল একেলা।
মরা হীরামন ল’য়ে সেই গাছতলা।।
যামিনীর শেষ যামে সঞ্চারিল প্রাণ।
নীরোগ শরীর হ’ল পূর্ণ শক্তিমান।।
উঠিয়া চরণ ধরি বলে ওহে নাথ।
এ অধমে কৃপা করি কর আত্মসাৎ।।
যেদিন তোমার দেখা পাই মল্লকাঁদি।
পিঞ্জিরা রাউৎখামার পাখি ওঢ়াকাঁদি।।
ঠাকুর বলেন, আমি জানি তা সকল।
সে কথায় কাজ নাই হরি হরি বল।।
এমত আমার কর্ম রোগ ভোগ দিয়ে।
সংসার হইতে তোরে নিলাম উঠা’য়ে।।
তোর প্রতি আর কারু থাকিল না দাবি।
মায়াতীত হ’লি, এবে হরিগুণ গা’বি।।
হেথা হ’তে লুকাইয়া যারে বেদভিটে।
তথা হ’তে যাস কল্য অন্য নায় উঠে।।
এখানে থাকিলে তুই জনরব হ’বে।
প্রতিষ্ঠা বাড়িলে মোরে কেহ না ছাড়িবে।।
যুগে যুগে বাঁধা আছি আমি তোর ঠাই।
তোমা আমা একদেহ ভিন্ন ভেদ নাই।।