Page: 153

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৫৩
হু হু শব্দ করি অগ্নি জ্বলে অবিরাম।
রাই করে সোর শব্দ পুড়িয়া মলেম।।
গৃহ মধ্যে গিয়া বলে পাগল গোঁসাই।
শুয়ে থাক রাই তোর কোন চিন্তা নাই।।
বাহির হইয়া রাই দেখে অকস্মাৎ।
আগুন হ’য়েছে উর্দ্ধ আট দশ হাত।।
যে খানের আগুন নির্বাণ সেখানেতে।
ঘর বেড়া কিছু না পুড়িল আগুনেতে।।
পাগল কহিল রাইচরণের তরে।
যাও যদি ওঢ়াকাঁদি এস সমিভ্যরে।।
তাহা শুনি ভাসে রাই প্রেমের তরঙ্গে।
প্রভাতে চলিল রাই পাগলের সঙ্গে।।
পাগল আসিয়া বাসুড়িয়া গ্রামে রয়।
রাইচরণকে কহে যাও নিজালয়।।
কাছারী হইতে এক পেয়াদা আসিয়া।
রাইচরণকে নিল কাছারী ধরিয়া।।
নায়েব কহেন কেন গাছ কেটেছিস।
গ্রামীরা জুঠিয়া সবে করিছে নালিশ।।
আগুন জ্বালালি কেন ঘরের বেড়ায়।
তুই পুড়ে যা’স মোর গ্রাম পুড়ে যায়।।
রাই কহে আমি এর কিছুই না জানি।
ভাবের পাগল এক তার কথা শুনি।।
সেই কহে তালগাছ কাটিবার তরে।
গাছ কাটিয়াছি তার বাক্য অনুসারে।।
গাছের বাগুয়া পাতা ঘরের পিছনে।
রাখিয়া ছিলাম পোতা বেড়ার সংলগ্নে।।
রাত্রিযোগে ছিনু আমি ঘরেতে শুইয়া।
পাগল আসিয়া দেয় আগুন জ্বালিয়া।।
ডাগুয়া পুড়িয়া তার পাতা পুড়ে গেল।
আট দশ হাত অগ্নি উর্দ্ধেতে উঠিল।।
চালের উপর দিয়া অগ্নি বায়ুলায়।
আগুন দেখিয়া আমি করি হায় হায়।।
ভয় নাই কহে মোর পাগল গোঁসাই।
তাল পাতা পুড়ে গেল ঘর পুড়ে নাই।।
বাবু কহে পাগলের কার্যে দোষ নাই।
ঈশ্বরের তুল্য ব্যাক্তি পাগল গোঁসাই।।
তোমার নাহিক দোষ যাও নিজ ঘরে।
পাগলে কহিও যেন দয়া থাকে মোরে।।
কর্মকর্তা হরি পাগলের ঠাকুরালী।
এত দিনে শত্রু মুখে প’ল চুনকালি।।
পাগলে ভাবিয়া রাই উঠে কাঁদি কাঁদি।
চারিদিন পরে যাত্রা কৈল ওঢ়াকাঁদি।।
দেখিয়া ঠাকুর রাইচরণে জিজ্ঞাসে।
অদ্য বাছা ওঢ়াকাঁদি এসে কই মানসে।।
রাই কহে শ্রীচরণ দর্শন আশায়।
মহাপ্রভু বলে বৎস! তাহা বুঝি নয়।।
মোর প্রতি ভক্তি তোর আছে ত’ নিশ্চয়।
এবে আলি গোলোকেরে দেখিতে আশায়।।
যেই ভক্ত সেই আমি গ্রন্থে লেখে স্পষ্ট।
গোলোকে সেবিলে আমি আরো বেশী তুষ্ট।।
বাড়ী ছিল তালগাছ কেটেছিস নাকি।
আগুনে পুড়িস নাই শুনে হইনু সুখী।।
যাহা হোক তাহা হোক আমার সৌভাগ্য।
হ’য়েছে তোমার বাড়ী রাজসূয় যজ্ঞ।।
যা করে গোলোক আমি করি সেই কাজ।
পয়ার প্রবন্ধে কহে কবি রসরাজ।।
গোস্বামীর দক্ষিণ দেশ ভ্রমণ, বৈবুনিয়ার ঘাট বান্ধা।
পয়ার।
কিছুদিন ওঢ়াকাঁদি করিয়া বিশ্রাম।
পাগল চলিল পুনঃ গঙ্গাচর্ণা গ্রাম।।
যাওয়া মাত্র রাইচরণকে ডেকে কয়।
বইবুনে যাইব আমার সঙ্গে আয়।।
অমনি চলিল রাই পাগল সঙ্গেতে।
চলিলেন পাগলামী করিতে করিতে।।
জয় হরি বল মন গৌর হরি বল।
রাম জয় ধ্বনি করি চলিল পাগল।।
ধ্বনি শুনি লোক সব হইল চমকিত।
মাঠিভাঙ্গা হাটখোলা হৈল উপনীত।।
গোপাল বিশ্বাস উমাচরণ বিশ্বাস।।
পাগলকে দেখে মনে বাড়িল উল্লাস।।
উথলিল প্রেম বন্যা করিছে রোদন।
পাগলকে করিলেন অর্চনা বন্দন।।
জয় হরি গৌর হরি বলে বার বার।
সিংহের গর্জনসম দিতেছে হুঙ্কার।।
গোপাল বিশ্বাস উমাচরণ কহিছে।
এই বাজারেতে এক দারগা এসেছে।।
কোন এক মকর্দমা আসামী ধরিতে।
নরহত্যা আসামীর আস্কারা করিতে।।