Page: 187

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৮৭

দু’জনার প্রেমোৎসবে, হরি হরি বল সবে
কহে দীন কবি রসরাজ।।


হীরামন গোস্বামীর পদুমা ও কালীনগর লীলা

পয়ার

শ্রীহীরামন গোস্বামী পদুমা গ্রামেতে।
আসিলেন ফেলারাম জীবিত থাকিতে।।
বিকালে এল গোঁসাই বিশ্বাসের বাসে।
গোঁসাই দেখিতে লোক বহুতর আসে।।
পার্শ্ববর্তী লোক সব পুরুষ বা নারী।
আসে যায় সবে কয় বলে হরি হরি।।
কহিলেন ফেলারাম বিশ্বাস কুশাই।
কৃতার্থ হইনু অদ্য মোরা দুটি ভাই।।
ফেলারাম কহিলেন কুশাইর স্থানে।
গোঁসাই এসেছে কিছু লুঠ দেও এনে।।
আগমনে সংকীর্তন আরম্ভিল সবে।
যাবার বেলায় এরা লুঠ নিয়া যাবে।।
আনাইল বাতাসা হরির লুঠ দিতে।
রাখিল কীর্তন মাঝে আনন্দ করিতে।।
লেপন করিয়া ঠাই আসন সাজিয়ে।
তুলসী, কুসুম, আসনের পর দিয়ে।।
উঠিল পরমানন্দ কীর্তনের রোল।
ঘুরিয়া ফিরিয়া সবে বলে হরিবোল।।
কীর্তনের মাঝে বসি হাসিছে গোঁসাই।
ঝুঁকে পদ লুঠে প’ল স্মৃতি জ্ঞান নাই।।
স্বরূপের জ্যেষ্ঠ পুত্র কাঙ্গালী মণ্ডল।
গলে বস্ত্র করজোড়ে কহে স্তুতি বোল।।
আপনি যে উলঙ্গ উন্মত্ত নাম গানে।
হরি লুঠে পদ লাগে ভয় হয় মনে।।
কথা শুনি লুঠ পানে করে দৃষ্টিপাত।
পদটান দিতে বাধ্য হ’ল অকস্মাৎ।।
হীরামন বলে মোর হরি সর্বময়।
অনলে অনিলে জলে স্থলে শূন্যে রয়।।
বল শুনি তবে পদ রাখি কোনখানে।
তোরা পদ রাখ হরি নাই যে স্থানে।।
লুঠ হরি, পদ হরি, রাখিব কোথায়।
এত বলি দুটি পদ রাখিল মাথায়।।
ক্রমে মহাভাবে তনু মন শিহরিল।
চিত হ’য়ে কুষ্মাণ্ডের মত পড়ে গেল।।
কুম্ভকার চক্রাকার লাগিল ঘুরিতে।
এই পদ কোথা রাখি লাগিল বলিতে।।
পদ রাখিয়াছি আমি হরিলুঠ স্থানে।
লোকে মন্দ বলে কার্য মন্দ সে কারণে।।
হরি ছাড়া স্থান আমি পাইব কোথায়।
কোথায় রাখিব পদ না দেখি উপায়।।
সূক্ষ্ম জ্ঞান ভাব মোরে নাহি দিল হরে।
কি উপায় করি তোরা বলে দে আমারে।।
হরি ছাড়া স্থান তোরা দেখায়ে দে ভাই।
কোন স্থানে পদ রাখি ওঢ়াকাঁদি যাই।।
কাঙ্গালী হইয়া ভীত পড়িল কাঁদিয়ে।
ফেলারাম কুশাই কেন্দেছে দাঁড়াইয়ে।।
রায়চাঁদ রায় পুত্র কোদাই নামেতে।
পদ তলে প’ল ঢলে কাঁদিতে কাঁদিতে।।
সবে হরি হরি বলে করে কাঁদাকাঁদি।
হীরামন কহে ভক্ত হৃদি ওঢ়াকাঁদি।।
তুলসী কানন, পদ্ম বন সংকীর্তন।
সেই স্থানে হরি বিরাজিত সর্বক্ষণ।।
বিধির নির্মিত পদ বল কোথা রাখি।
আমি বোকা হরি ছাড়া স্থান নাহি দেখি।।
আমি বোকা আর বোকা ছিল বৃকোদর।
মল ত্যাগ না করিল দ্বাদশ বৎসর।।
নামাইয়ে পদ দুটি উঠে লম্ফ দিয়ে।
সংকীর্তন মাঝে লুঠ দিল লুটাইয়ে।।
প্রেমে মত্ত হ’য়ে হ’ল সেই নিশি ভোর।
মৃত্যুঞ্জয় সঙ্গে এল সে কালীনগর।।
তথা এসে বাল্য সেবা নিলেন গোঁসাই।
কহিছেন পুনঃ আমি পদুমায় যাই।।
প্রহরেক কালীনগরের বাড়ী বসে।
উলঙ্গ হইয়া জলে ঝাঁপ দিলে শেষে।।
কালীনগরের নদী পার হইলেন।
উত্তরাভিমুখে পদুমায় চলিলেন।।
তারক শ্রীমৃত্যুঞ্জয় দিলেন সাঁতার।
পিছে পিছে চলিলেন আনন্দ অপার।।
পিছে পিছে নেচে গেয়ে দুইজন চলে।
ঢেউ লাগে কালীনগরের নদীকূলে।।
পদুমায় চলিলেন ফেলারাম বাটী।
পশ্চাতে তারক মৃত্যুঞ্জয় এই দুটি।।