Page: 237

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২৩৭

অক্ষয় ঠাকুর নাচে নাচে মহানন্দ।
মদন গোপাল হরি সবে মহানন্দ।।
তাহাদের পিছে পিছে নেচেছে তারক।
অই সে অদ্বৈত নাচে অন্তরে পুলক।।
নাচিতে নাচিতে মত্ত হ’ল দীনপাল।
ডেকে বলে পাগলের মুখ কেন লাল।।
হরি বলে হস্ত তুলে মুখ বিস্তারিল।
অমনি মুখেতে রক্ত উদ্গম হইল।।
তাহা দেখি সবে মিলে পাগলে ধরিল।
পাগলে মস্তকে করি নাচিতে লাগিল।।
মস্তকে থাকিয়া ক্ষণে ক্ষণে অঙ্গ ঝাঁকে।
ঝাঁকিতে হইয়া শূন্য চাঁদোয়ায় ঠেকে।।
শূন্য হ’তে পড়ে পুনঃ মাথার উপর।
এই ভাবে ছুটাছুটি করে বার বার।।
হরিপাল গিয়া শীঘ্র পাগলে ধরিল।
হরিপালের মস্তকে পাগল বসিল।।
লম্ফ দিয়া পাগল পড়িল ধরাতলে।
প্রেমাবেশে তথা হ’তে দৌড়াইয়া চলে।।
পিছে পিছে ধাইলেন অক্ষয় ঠাকুর।
হরিপাল কহে তবে যাও জয়পুর।।
তাহা শুনি দৌড়াইয়া চলিল তারক।
সঙ্গে সঙ্গে দৌড়িয়া যায় কত লোক।।
যতেক মতুয়া গণ চলিল ধাইয়া।
নামে গানে প্রেমে মত্ত নাচিয়া গাইয়া।।
দৌড়িয়া দৌড়িয়া কারু হ’ল ঘনশ্বাস।
মাধাই আবেশ হ’ল মদন বিশ্বাস।।
এক গোটা বাঁশ ধরি দক্ষিণ করেতে।
ভাঙ্গা এক হাঁড়ি ধরিলেন বাম হাতে।।
বলে হারে বেটা কোথা চলিলি ধাইয়া।
মাধারে ভাড়ায়ে কোথা যাবি পালাইয়া।।
কই তোর গোরা কই কই তোর নিতা।
কাঁধার আঘাতে তার ভেঙ্গে দিব মাথা।।
তাহা শুনি হরিপাল আগুয়ে দাঁড়ায়।
অই নিতা যায় বলি পাগলে দেখায়।।
তার সঙ্গে দেখাইল অক্ষয় ঠাকুরে।
অই সেই গোরা যায় কে ঠেকাবে ওরে।।
খাটিবে না জোর তোর নিতাইর ঠাই।
এসেছি আমরা তোর ভাঙ্গিব বড়াই।।
কামের কামনা মোরা করিয়াছি চূর্ণ।
পাপেরে তাড়িয়া দিনু না রাখিনু পুণ্য।।
আর কিরে মাধা তোর দস্যুত্ব রাখিব।
এই হরিনাম অস্ত্রে পাষণ্ড দলিব।।
জগৎ মাতাব বলি প্রতিজ্ঞা আছয়।
হইয়া জগৎ ছাড়া পালাবি কোথায়।।
মদন কহিছে ডেকে মাধাই আবেশে।
এত যদি দর্প তবে দাঁড়া কাছে এসে।।
দৌড়িলে দণ্ডিব তোরে দেখ দণ্ড হাতে।
দণ্ডের জীবন দণ্ড মাধার দণ্ডেতে।।
তাহা দেখি হরিপাল কহে পাগলেরে।
ঐ এল মদনা বেটা মাধারূপ ধ’রে।।
তাহা শুনি মহানন্দ ফিরিয়া দাঁড়ায়।
বলে মাধা হরি বল ধরি তোর পায়।।
মাধা বেশে মদনের অধরোষ্ঠ কম্প।
পাগলের সম্মুখে পড়িয়া দিল লম্ফ।।
দণ্ড ধরি এক বাড়ী পাগলকে হাকে।
হাঁড়ি ফেলাইয়া মারে পাগল মস্তকে।।
দণ্ড বাড়ী লাগিল না পাগলের গায়।
হাঁড়ির আঘাত লেগে হাঁড়ি ভেঙ্গে যায়।।
অক্ষয় ঠাকুর ধরে ভাঙ্গা হাঁড়ি কাঁধা।
লম্ফ দিয়া বলে তোর বাঁচা নাই মাধা।।
নিতাইয়ের অঙ্গে দণ্ড আহারে পাষণ্ড।
ছিণ্ডিব চক্রেতে তোর দু ভায়ের মুণ্ড।।
নিত্যানন্দ ভাবাবেশে কহে মহানন্দ।
চক্র ছাড়ি দে ওরে অক্ষয় প্রেমানন্দ।।
কোথা লাগে দণ্ড তোর হরি দণ্ডধারী।
ঘরে ঘরে মেগে খাবি প্রেমের ভিখারী।।
প্রেমাবেশে পিপাসে ধরিল আশা দণ্ড।
সেই দণ্ড তাহাও করিব আমি খণ্ড।।
তোর কি দণ্ডিতে হয় যেই তোরে দণ্ডে।
নামরস পশাও উহার মেরুদণ্ডে।।
সুধাখণ্ড দয়ারবি কর প্রকাশিত।
জ্ঞানান্যে হৃদয়াম্বুজে সিঞ্চ প্রেমামৃত।।
দাঁড়াল মদন মাধা যষ্ঠি দণ্ডবৎ।
নিম্নেতে দক্ষিণ হাত উর্দ্ধে বাম হাত।।
হস্তপদ টান লোম কেশ উর্দ্ধটান।
স্বেদ কম্প অশ্রু হর্ষ উত্তার নয়ন।।
তারকের হ’ল তথা জগাই আবেশ।
দন্তে ধরে এক গোছা তৃণ আর কেশ।।