Page: 245

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২৪৫

সেই সব ভাগিদের সঙ্গেতে করিয়া।
ডোবা নৌকা যথা তথা উত্তরিল গিয়া।।
সেই খানে গাঁঠ বাঁধা নৌকা বার খান।
কেঁদে কহে হরিপাল বাওলির স্থান।।
কাছি বাঁধা খুঁটিগাড়া নোঙ্গর যে ছিল।
তাহা উধঘাটিয়া নৌকা মধ্য গাঙ্গে এল।।
গদাই বাওয়ালি অন্য লোক ল’য়ে ব’সে।
নৌকা উঠাইয়ে নিবে করে পরামিশে।।
হরিপাল বলে সেই বাওয়ালির ঠাই।
আমি মোর ডোবা নৌকা তুলে নিতে চাই।।
গদাই বলেছে নৌকা বাদায় ডুবিলে।
কোন বেটা নৌকা পাইয়াছে কোন কালে।।
কুম্ভীর জলেতে লোনা কাঙ্গট হাঙ্গর।
এই স্থান হ’তে নৌকা কে উঠাবে তোর।।
হরিপাল বলে যদি তুলে দাও নৌকা।
তুমি মোর ধর্মপিতা দিব কুড়ি টাকা।।
গদাই বলেছে তুমি কেন পিতা কও।
ইচ্ছা থাকে কুড়ি টাকা তুমি ল’য়ে যাও।।
তাহা শুনি হরিপাল নিরস্ত হইল।
নিজে নৌকায় এসে রাত্রিতে রহিল।।
বাবা হরিচাঁদ বলে ছাড়ে ঘন হাই।
শেষ রাত্রে চেঁচাইয়ে উঠিল গদাই।।
হেনকালে শব্দ উঠে নৌকা ঠেকাঠেকি।
জল শব্দ উঠে ঢেউ নৌকা ঢকঢকি।।
গদাই বাওয়ালি বলে সবে শুনে নেও।
উঠাও পালের নৌকা যদি ভাল চাও।।
এ নৌকা না উঠাইলে কারু বাঁচা নাই।
নতুবা সকল নৌকা ডুবিবে এ ঠাই।।
ব্যাঘ্রে চড়ি উগ্র এক মানুষ আসিয়ে।
প্রকাণ্ড শরীর তার কহে হুঙ্কারিয়ে।।
শীঘ্র করি এই তরী প্রভাতে উঠাও।
নৈলে ডুবাইব সব বাওয়ালির নাও।।
রাত্রি পোহাইল সবে করে ডাকাডাকি।
গদাই বাওয়ালি বলে তোরা আয় দেখি।।
জলে নক্র কে ডুবিবে কে বাঁধিবে কাছি।
হরিপাল বলে আমি নিজে ডুবিতেছি।।
ভাটার সময় ডুব দিল হরি বলে।
এক ডুবে কাছি বাঁধি উঠিলেন কূলে।।
হরিপাল বলে কাছি উপরে থাকুক।
ক্ষণেক বিলম্ব কর জোয়ার আসুক।।
বাবা হরিচাঁদ বলে উৎকণ্ঠিত প্রাণ।
ছয় জনে কাছি ধরি দিল এক টান।।
হাল দাঁড় বাঁধা গাছ নোঙ্গর সহিতে।
জাগিয়া উঠিল নৌকা ছই ছাপ্পরেতে।।
গদাই বাওয়ালি বলে কিছুকাল রও।
ভাটা হ’লে আপনি জাগিবে এই নাও।।
জল ফেলাইল সবে ভাটার সময়।
সেঁচা হ’য়ে পূর্ববৎ নৌকা ভেসে রয়।।
গদাই বাওয়ালি তার এ বার্ষিক আছে।
একটি মানুষ দেয় শার্দূলের কাছে।।
হরিপাল যবে নৌকা খুলিবারে চায়।
সেই দিন বাঘের বার্ষিক দিতে হয়।।
গদাই বাওয়ালি বলে হরিপাল শুন।
টাকা দিবা বলেছিলে দেহ টা এখন।।
হরিপাল বলে টাকা দিব কি কারণ।
নৌকা উঠাইয়া দিলে দেখিয়া স্বপন।।
শুনিয়া গদাই রাগ হ’ল অতিশয়।
মৌখিকেতে সাধুভাষা হরিপালে কয়।।
আশা ছিল হরিপাল দেশে ফিরে যাবে।
তারপর গদাই সে নৌকা তুলে নিবে।।
তাহা নাহি হ’ল আরো টাকা নাহি দেয়।
জানে প্রাণে মারিব যেমন দুরাশয়।।
গদাই বলেছে হরি ধর্মপুত্র তুমি।
চল বাছা চক দেখাইয়া আনি আমি।।
সাধুর তরণী কভু মারা নাহি যায়।
তোমা হ’তে এই কথা হইল প্রত্যয়।।
নৌকা পেলে গাছ পেলে বাপরে আমার।
আমার যা আছে তাহা সকলি তোমার।।
কতকগুলি গাছ কাঁটা আছে এই চকে।
মম সঙ্গে চল বাছা দিব তা তোমাকে।।
ধর্মপুত্র, তুমি, তোমা বড় ভালবাসি।
চল যাই তোমাকে দেখায়ে ল’য়ে আসি।।
এই গাছ দেশে ল’য়ে ওরে বাবা।
এই গাছ নামাইয়া সেই গাছ নিবা।।
এত বলি দুইজনে চড়ি ডিঙ্গিনায়।
হরিপালে লইয়া গদা বাদা মধ্যে যায়।।