Page: 188

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৮৮

সাদরে আসনে হীরামনে বসাইলে।
শ্রীচরণ পাখলিল দু’নয়ন জলে।।
মুক্তকেশী হ’য়ে ফেলারামের রমণী।
কেশদ্বারা পাদপদ্ম মুছালেন তিনি।।
গোস্বামীকে তৈল মাখে আট দশ জনে।
স্নান করাইল পুকুরের জল এনে।।
বসাইল ঘরে এন সেবাদির কার্যে।
পায়স পিষ্টক আনে ফেলারাম ভার্যে।।
সম্মুখে আনিয়া থালা ভাজা বড়া ল’য়ে।
গোস্বামীর মুখে দিল স্বহস্তে তুলিয়ে।।
দশনে চিবা’য়ে মুখে রাখে হীরামন।
বিস্তার নাহিক করে দু’পাটি দশন।।
বড়া ধরি পুনঃ দিতেছিল বদনেতে।
অমনি চপটাঘাত করিল মুখেতে।।
ফেলারাম বলেছে সৌভাগ্য বড় মোর।
অমনি মারিল মুখে দ্বিতীয় চাপড়।।
ধাইয়া চলিল প্রভু পুকুরের পাড়ে।
মৃত্যুঞ্জয় চলিলেন গোস্বামীকে ধ’রে।।
হীরামন ধরে শেষে মৃত্যুঞ্জয় কেশে।
কপালেতে দুই মুষ্ট্যাঘাত মারে রোষে।।
চক্ষের নীচায় নাসিকার দুই পার্শ্বে।
দুই ভুষা মারি ইটা ধরিলেন শেষে।।
ঠেকাইতে হীরামনে হাত তুলিলেন।
মৃত্যুঞ্জয়ে ছাড়িয়া গোস্বামী চলিলেন।।
চণ্ডী মল্লিকের ঘরে করিল শয়ন।
গোঁসাই গোঁসাই বলি চলিল মদন।।
চৌকির খামায় লগ্ন গোস্বামীর পাও।
পদ ধরি বলে প্রভু মোর পদ দাও।।
গোস্বামীর পদে মাথা যখনে নোয়ায়।
অমনি মারিল লাথি তাহার মাথায়।।
বামপার্শ্বে খাম্বা ঠেকে যেন ছে’চা হ’ল।
গোস্বামীর লাথি হেতু জীবন রহিল।।
উঠিয়া চলিল প্রভু দক্ষিণাভিমুখে।
কালীনগরের দিকে চলিলেন রুখে।।
শ্রীগৌরচাঁদের পুত্র শ্রীউমাচরণ।
বোরা জমি পরিষ্কার করে সেই জন।।
আইল উপরে বহু কাঁদা তুলিয়াছে।
সে আইল ‘পর দিয়া গোঁসাই চলিছে।।
আসিয়া উমাচরণ করে দণ্ডবৎ।
অমনি গোঁসাই শিরে করে পদাঘাত।।
মস্তক পশিল গিয়া কাদার ভিতরে।
মৃত্যুঞ্জয় গৃহে প্রভু যান ক্রোধভরে।।
গোঁসাই বসিল গিয়া রন্ধনশালায়।
ঘরের নিকটে ভয়ে কেহ নাহি যায়।।
ক্ষণে ক্ষণে মৃত্যুঞ্জয় তারকে পাঠায়।
গৃহে বসি ঝোঁকে মাত্র দেখিবারে পায়।।
হেনমতে রাত্রি গেল গোস্বামী উঠিল।
উত্তরের গৃহে এসে সকলে বসিল।।
নিশিতে স্বপনে দেখেছেন মৃত্যুঞ্জয়।
তোমাকে রাখিতে নারি গোস্বামীকে কয়।।
তোমায় চরণে যেন থাকয় ভকতি।
তোমাকে রাখিতে নাই আমার শকতি।।
স্বপ্ন শুনি হীরামন নামাইল পদ।
চলিলেন পূর্বমুখে বলি হরিচাঁদ।।
নদীর কিনারে গ্রাম কলাবাড়ী আদি।
প্রেমাকুল কূলে বসি ঝোঁকে নিরবধি।।
উত্তার নয়ন হ’য়ে বসিয়া তথায়।
পুনঃ আসিলেন মৃত্যুঞ্জয়ের আলয়।।
গোঁসাই বলেন কল্য না হ’ল রন্ধন।
রন্ধন করুক বধূ করিব ভোজন।।
ছিলাম রসই ঘরে না হইল রাঁধা।
সুস্থির হ’য়েছি অদ্য খেতে দাও দাদা।।
তাহা শুনি কাশীশ্বরী করিল রন্ধন।
গোঁসাই সুস্থির হ’য়ে করিল ভোজন।।
পুনর্বার হীরামন যাত্রা করিলেন।
তারক আসিয়া পদে প্রণাম করেন।।
ভূমিষ্ঠ হইয়া পদে করে প্রণিপাত।
গোঁসাই করিল পৃষ্ঠদেশে পদাঘাত।।
শব্দ হ’ল বিপরীত লড়ে উঠে ঘর।
পদ পড়ে পুষ্পসম পৃষ্ঠের উপর।।
বিপরীত শব্দ শুনে এল মৃত্যুঞ্জয়।
ক্রোধিত হইয়া এসে হীরামনে কয়।।
তারকে মারিলে পেয়ে কিবা অপরাধ।
সবাকার পিতা হয় এক হরিচাঁদ।।
গললগ্নী কৃতবাসে কহিছে তারক।
আমার অন্তরে বড় হয়েছে পুলক।।
এক লাথি দিয়াছেন আর লাথি দিলে।
পাইতাম শ্রীপদ তাহাতে বাদী হ’লে।।
গোস্বামীর প্রতি কেন চাহ কোপদৃষ্টে।
পদ্ম পুষ্পসম বাজিয়াছে মম পৃষ্ঠে।।