Page: 206

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২০৬
তীর্থ ভ্রমণ কারণে, গিয়াছিল বৃন্দাবনে,
হা কৃষ্ণ হা কৃষ্ণ রব মুখে।
জয় রাধা রাণী জয়, বলিত সবসময়,
জয় হরি বলে ফিকে ফিকে।।
সাধুহাটি গ্রামে ঘর, শ্রীরসিক সরকার,
তিনিও ছিলেন বৃন্দাবনে।
শ্যামকুণ্ডের নিকটে, শ্রীরাধা কুণ্ডের তটে,
দেখাদেখি হয় দুইজনে।।
দুই সাধু মেশামেশি, প্রেমরসে ভাসাভাসি,
হরি কথা প্রেমের আলাপে।
কহিছে রসিকচন্দ্র, মনেতে পরমানন্দ,
সাধু রামভরত সমীপে।।
কহ তব কোথা ধাম, কিবা জাতি কিবা নাম,
রসিকের শুনিয়া ভারতী।
বলে রামভরত নাম, উপাসনা রাম নাম,
অযোধ্যায় আমার বসতি।।
রামভরত জিজ্ঞাসে, তব ঘর কোন দেশে,
রসিক দিলেন পরিচয়।
বঙ্গদেশে মম ধাম, সাধুহাটি নামে গ্রাম,
রসিক আমার নাম হয়।।
জনম কায়স্থ কুলে, বের হই কৃষ্ণ বলে,
যদি প্রভু করিতেন দয়া।
করি তীর্থ পর্যটন, অযোধ্যাদি বৃন্দাবন,
ঘুচাইতে সংসারের মায়া।।
সাধু একথা শুনিয়া, দুই বাহু প্রসারিয়া,
জড়িয়া ধরিল রসিকেরে।
আমিও যেমন দুঃখী, তোমাকে তেমন দেখি,
বলিব কি যে দুঃখ অন্তরে।।
বাসনা হইতে বৈরাগী, হয়েছি সংসার ত্যাগী,
রামনাম করিয়া স্মরণ।
তবু মায়া ফাঁসীগুণে, সংসার বন্ধনে টানে,
ঘুচাইতে পারিনা কখন।।
রসিক কহে তখন, কিছা করেছি ভ্রমণ,
কাশী কাঞ্চি অবন্তী মথুরা।
ভ্রমি অযোধ্যা ভুবন, আইলাম বৃন্দাবন,
ভ্রম মাত্র এ ভ্রমণ করা।।
ভ্রমণেতে কার্য নাই, এবে নিজ দেশে যাই,
মনের মানুষ যেই দেশে।
করিয়া তীর্থ ভ্রমণ, করি দিক দরশন,
রাজক্রিয়া মনের হাউসে।।
শুনামাত্র এই কথা, মনের মানুষ কোথা,
রামভরত কহে কাঁদি কাঁদি।
রসিক কহিছে তায়, মম মন যে ভোলায়,
সে মানুষ আছে ওঢ়াকাঁদি।।
মম প্রাণ তার ঠাই, তবু যে ঘুরে বেড়াই,
সে কেবল মনের বিকার।
শুন হে রামভরত, গুরু করি শত শত,
সে গুরু যে নাশে অন্ধকার।।
যেখানে সেখানে যাই, স্থান মাত্র দেখি ভাই,
দেখে শুনে জন্মিয়াছে হুঁশ।
শ্রীক্ষেত্র নৈমিষবন, নবদ্বীপ বৃন্দাবন,
নরলীলা সকলি মানুষ।।
এক মানুষের খেলা, সকল মানুষ লীলা,
আছে যারা তারাও মানুষ।
কত স্থানে কত মূর্তি, মানুষ গঠিত মূর্তি,
রক্ষাকারী তারাও মানুষ।।
আমি যে মানুষ বরে, জন্মিলাম ধরাপরে,
সেই মোর মনের মানুষ।
মনের কথা যে জানে, সে মানুষ সন্নিধানে,
যাই ভাই দেখিগে মানুষ।।
সাধু কহে রসিকেরে, সে মানুষ দেখিবারে,
আমি কি যাইতে পারি সাথে।
রসিক কহিছে তারে, সে মানুষ দেখিবারে,
বিশ্বাস কি হইবে মনেতে।।
ভরত কহিছে ভাই, আর ছাড়াছাড়ি নাই,
তুমি গুরু আমি যেন শিষ্য।
আমিত যাইতে নারি, লহ মোরে সঙ্গে করি,
সে মানুষ দেখিব অবশ্য।।
আসিয়া রসিক সঙ্গে, উপনীত হ’ল বঙ্গে,
তারাইল কাছারীতে রয়।
তথা লইয়া চাকরী, সদা বলে হরি হরি,
সাধুহাটি মাঝে মাঝে যায়।।
থেকে রসিকের সঙ্গে, কৃষ্ণ কথা রসরঙ্গে,
এক একবার উঠে কাঁদি।
কেঁদে কহে রসিকেরে, দেখা’বে বলিলে মোরে,
কবে ল’য়ে যা’বে ওঢ়াকাঁদি।।
রসিক কহিছে তারে, আমি যা ভাবি অন্তরে,
ভাবিলে ঠাকুর দেখা পাই।
আমি যাব পিছুভাগে, তুমি যাও কিছু আগে,
ঠাকুর চিনিয়া লহ ভাই।।