Page: 129

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১২৯

জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দ ময়।।
জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।


ভক্ত সরূপরায়ের বাটীতে প্রভুর গমন।

পয়ার।

পাইকডাঙ্গা নিবাসী শ্রীস্বরূপ রায়।
বড়ই সম্পত্তিশালী মান্য অতিশয়।।
দেল দোল দুর্গোৎসব ব্রত পূজা আদি।
বার মাসে বার ক্রিয়া করে নিরবধি।।
রাজসিকভাবে সব করিতেন রায়।
নিযুক্ত ছিলেন সদা অতিথি সেবায়।।
বহু দিন পরে তার হ’ল বেয়ারাম।।
ঔষধ সেবন করি না হ’ল আরাম।।
ঠাকুরের লীলাগুণ শুনে লোক ঠাই।
রায় বলে ঠাকুরের কাছে আমি যাই।।
হরিচাঁদ বলিয়া চলিল কাঁদি কাঁদি।
উপনীত হইল শ্রীধাম ওঢ়াকাঁদি।।
প্রভুর সম্মুখে গিয়া রহে দাঁড়াইয়া।
মহাপ্রভু বলে তুমি এলে কি লাগিয়া।।
তুমি হও বড় লোক রাজতুল্য ব্যক্তি।
তোমাকে বসিতে দিতে নাহি মম শক্তি।।
রায় কহে বড় লোক আমি কিসে হই।
দয়া হ’লে শ্রীচরণে দাস হ’য়ে রই।।
বসিতে চাহে না রায় বলেছে কাঁদিয়া।
ঠাকুরের পদ ধরি পড়ে লোটাইয়া।।
প্রভু বলে গৌরব এখন গেছে ঘুচে।
শ্রেষ্ঠত্ব ঘুচা’তে তোরে রোগে ধরিয়াছে।।
যাও যাও ওরে বাছা রোগ তোর নাই।
এইরূপ মন খাটি সর্বক্ষণ চাই।।
ঠাকুরে প্রণাম করি চলিল বাটীতে।
দেহ মন সমর্পিল হরির পদেতে।।
ঠাকুরের প্রিয় ভক্ত সেই হ’তে হয়।
খেতে শুতে নিরবধি হরিগুণ গায়।।
সেই হ’তে ঘুচে গেল কর্ম রাজসিক।
ভক্তির উদয় হ’ল বিশুদ্ধ সাত্ত্বিক।।
পূজাদি বৈদিক ক্রিয়া সব ছেড়ে দেয়।
সব সমর্পণ করে ঠাকুরের পায়।।
কতদিনে মনে করে কবে হেন হ’ব।
প্রভুকে বাটীতে এনে সব সমর্পিব।।
একদিন গিয়া ঠাকুরের কাছে কয়।
চল প্রভু একদিন দাসের আলয়।।
ঠাকুর বলেন আমি যাইবারে পারি।
তব গৃহে আছেন বিধবা এক নারী।।
সেই ধনী আছে জানি তব এক অন্নে।
যাইবারে নারি আমি সেই নারীর জন্যে।।
রূপবতী সেই নারী জানি ভালমতে।
শ্বেত রোগ আছে সেই নারীর অঙ্গেতে।।
তব গৃহে আছে বটে তুমি দেখ নাই।
বস্ত্রদ্বারা গুপ্ত করে ঢেকে রাখে তাই।।
সে নারীকে যদি তুই মা বলে ডাকিস।
তা’হলে আমাকে বাছা লইতে পারিস।।
আমি গেলে মা বলিয়া ডাকিতে হইবে।
ডাকামাত্র তার শ্বেত রোগ সেরে যাবে।।
হইয়াছ হরিভক্ত হ’লে রিপুজয়।
এইটুকু বাকী আছে তা’ হলেই হয়।।
ঠাকুরের পদে রায় পড়িল কাঁদিয়া।
এ হেন করুণা-সিন্ধু পেলেম আসিয়া।।
কোন দিন যাবেন তা’ দেন ঠিক করি।
সেই দিন যেতে হবে এ দাসের বাড়ী।।
ঠাকুর দিলেন তার দিন ধার্য করি।
আজ্ঞামাত্র আয়োজন করিল তাহারি।।
দেশে দেশে গ্রামে গ্রামে যত ভক্তগণ।
সব ঠাই একে বারে হ’ল নিমন্ত্রণ।।
ঠাকুর করিল যাত্রা পাইকডাঙ্গায়।
যাত্রাকালে সঙ্গে ভক্ত দেড় শত হয়।।
মৃত্যুঞ্জয় দশরথ গোস্বামী গোলোক।
আগে যায় হীরামন হইয়া পুলক।।
উপনীত হয় গিয়া গ্রাম ফুকুরায়।
অধিকারী উপাধি ঈশ্বর দেখে তায়।।
ঠাকুরের পিতৃগুরু ঈশ্বর অধিকারী।
পথ আগুলিল গিয়া করযোড় করি।।
ছেঁড়া কাঁথা দিয়া গলে দন্তে তৃণ ল’য়ে।
মুখে নাহি স্ফুরে বাক্য রহে দণ্ডাইয়ে।।
চক্ষের জলেতে বক্ষ ভাসিয়া চলিল।
দেখিয়া প্রভুর মনে দয়া উপজিল।।