Page: 040

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৪০

শ্রীমৎব্রজনাথ পাগলোপাখ্যান।

পয়ার।

সুধারস আশ্চর্য লীলার বিবরণ।
ব্রজনাথ উপাখ্যান শুন সর্বজন।।
ব্রজনাথ নামে এক প্রভুর ভকত।
বাল্য হ’তে গুরু সেবা করে অবিরত।।
গুরুপদে ছিল আর্তি দৃঢ় ভক্তি তার।
গুরুকার্য বিনে তার কার্য নাহি আর।।
জ্ঞানকাণ্ড কর্মকাণ্ড কিছু না মানিত।
জ্ঞানশূন্য ভক্তি অঙ্গ প্রেমে পুলকিত।।
সর্বদা উন্মাদ দশা চিন্তা জাগরণ।
ভাবনা জড়িমা কৃতি প্রলাপ বচন।।
গুরুপত্নী আজ্ঞা দিল কার্যান্তরে যেতে।
ব্রজ রহে জ্ঞানশূন্য গুরু আরোপেতে।।
ব্রজ তাহা নাহি জানে নাহি বাহ্যস্মৃতি।
ঠাকুরানী কহিলেন ঠাকুরে সম্প্রতি।।
আমি যাহা কহি তাহা নাহি কর গ্রাহ্য।
এ শিষ্য রাখিয়া তব হ’বে কোন কার্য।।
গৃহস্থের বাড়ী থাকে নাহি জ্ঞান বাহ্য।
মিছা এরে খেতে দেওয়া শীঘ্র কর ত্যজ্য।।
পাগলা স্বভাব ব্রজ নৈষ্ঠিক আচারে।
ঠাকুরানী সেই ভাব বুঝিতে না পারে।।
ঠাকুরানী কথা শুনি ঠাকুর ভুলিল।
ব্রজনাথে বলে যেতে ব্রজ না উঠিল।।
ব্রজভাবে মত্ত ব্রজ অঙ্গভঙ্গী করে।
নির্বোধ ভাবিল, ব্রজ ব্যঙ্গ করে মোরে।।
ক্রোধভরে ব্রজোপরে রুষিল ঠাকুর।
পাদুকা ধরিয়া দণ্ড করিল প্রচুর।।
হেন কালে ব্রজের হইল স্মৃতি জ্ঞান।
গুরু কেন দণ্ড করে না বুঝি সন্ধান।।
পায়ের খড়ম ধরি করেন প্রহার।
ব্রজ বলে কি স্বার্থক জনম আমার।।
হইয়াছে গুরু সেবা যে ত্রুটি আমার।
প্রতিশোধে করে গুরু পাদুকা প্রহার।।
দণ্ড পরিমাণে তার বেদনা যে কম।
প্রহারে ভাঙ্গিল তার হাতের খড়ম।।
ব্রজ কহে শিষ্য নহে আমি দুষ্ট ভণ্ড।
নৈলে কেন গুরু হেন করে গুরুদণ্ড।।
আমাকে মারিয়া গুরু হাতে পেল ব্যথা।
বুঝিতে না পারি আমি অপরাধ কোথা।।
কি বুঝিয়া গুরু মোরে এতেক বৈমুখ।
সে ব্রজনাথের মনে হৈল বড় দুঃখ।।
গুরু অপরাধী তার জীবনে কি ফল।
জীবন ত্যজিতে ব্রজ হইল চঞ্চল।।
মনোদুঃখে ধারা চক্ষে কাতর অন্তরে।
ধীরে ধীরে যায় ব্রজ চকের ভিতরে।।
সেই চকে আছে এক হিজলীকা বৃক্ষ।
জনরব আছে গাছে থাকে এক যক্ষ।।
একাকী পাইলে কারে করয় সংহার।
রাত্রে কেহ নাহি যায় দিনে লাগে ডর।।
আরো সেই গ্রামে ছিল শার্দূলের ভয়।
দুরন্ত সদন্ত বরা চকেতে ভ্রময়।।
হিজলীকা বৃক্ষমূলে ব্রজ বসে রয়।
নিশাকালে ব্যাঘ্র ডাকে ব্রজ ডাকে আয়।।
শার্দূল আসিয়া ব্রজনাথকে ধরিল।
অঙ্গ ঘ্রাণ ল’য়ে ব্যাঘ্র ফিরিয়া চলিল।।
দাঁতাল বরাহ আসে গণ গণ করি।
ব্রজ ডাকে আয় আয় বলে হরি হরি।।
শার্দূল না মারে মোরে তুই মোরে মার।
গুরু ত্যাগী দেহে মোর নাহি দরকার।।
শার্দূল বরাহ এসে তরাসে পালায়।
ব্রজ ভাবে খাক্ ওরা তারা নাহি খায়।।
হিংস্রক শার্দূল বরা হিংসা নাহি করে।
আশ্চর্য গণিয়া ব্রজ ভেবেছে অন্তরে।।
এবে বুঝি মৃত্যু নাই মৃত্যু আছে পাছে।
না জানি আমাতে গুরুর কোন কার্য আছে।।
তবে কেন মৃত্যু ইচ্ছা এ বড় প্রমাদ।
গুরু ঈশ্বরের কার্য কেন করি বাদ।।
আমাতে কি কার্য আছে তার মনে আছে।
বাঁচিবার চেষ্টা করি উঠি গিয়া গাছে।।
মারে কি বাঁচায় তার মনে যাহা লয়।
শ্রীগুরুর দেহ কেন আমি করি লয়।।
বৃক্ষোপরে উঠিল সে ভক্ত ব্রজনাথ।
দেখে এক মহামূর্তি হইল সাক্ষাৎ।।
বলে ব্রজা আলি কেন এই বৃক্ষপর।
আমি কাল এই বৃক্ষে মম অধিকার।।
ব্রজ বলে যেই মার সেই মোর কাল।
যাহা ইচ্ছা তাহা কর শ্রীনন্দ দুলাল।।