Page: 179

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৭৯

গোঁসাই বলেন ঘরে কাঁথা এস থুয়ে।
একখানি কাঁথা দেহ কিনিয়ে আনিয়ে।।
তারক বলিল কাঁথা কেহ নাহি বেচে।
গোঁসাই বলিল কায়স্থ বাটীতে আছে।।
বাটীর নিকটে তব পশ্চিম দিকেতে।
বিধবা দুইটি মেয়ে আছে সে বাড়ীতে।।
সিংহ বাটীতে গেলে কাঁথা পারিবা কিনিতে।
শুনিয়া তারক যান তাদের বাটীতে।।
জিজ্ঞাসিল কাঁথা নাকি করিবা বিক্রয়।
তাহারা বলিল খরিদ্দার পেলে হয়।।
অমনি রমণী কাঁথা করিল বাহির।
নিধার্য করিল মূল্য দুই টাকা স্থির।।
আনিয়া দিলেন টাকা গোস্বামীর স্থানে।
দুই টাকা মূল্য হ’ল বলিল তখনে।।
আইল সিংহের নারী মূল্য লইবারে।
তারক দিলেন মূল্য দুই টাকা তারে।।
গোস্বামী কহিছে কথা কাঁথাখান খুলে।
এ কাঁথার মূল্য তুমি কয় টাকা দিলে।।
সুন্দর সেলাই, নাহি এ কাঁথার তুল্য।
এ কাঁথার হইবেক চারিটাকা মূল্য।।
এ কাঁথার মূল্য হইবেক চারিটাকা।
দুই টাকা দিব কেন আমি নহে বোকা।।
স্বামীর নিকটে তবে কহে দুই নারী।
গললগ্নী কৃতবাস করজোড় করি।।
কি কারণে চারিটাকা মূল্য মোরা নিব।
লইব সাধুর টাকা পাপিনী হইব।।
তোমরা বিধবা নারী গোস্বামী কহয়।
কেহ কিছু সাহায্য করিলে ভাল হয়।।
কাঁথা মূল্য দুই টাকা কর অনুমান।
আর দুই টাকা আমি করিলাম দান।।
অবশ্য আমার বাক্য করহ গ্রহণ।
কদাপি আমার বাক্য না কর হেলন।।
সাধু বলে আমারে করহ যদি গণ্য।
বাক্য না রাখিলে হবে সাধুর অমান্য।।
চারিটাকা নিল তারা সন্তুষ্ট হইয়া।
গোস্বামী সন্তুষ্ট হ’ল চারিটাকা দিয়া।।
ভাদ্রমাসে একদিন বৈকাল বেলায়।
গোঁসাই আসিয়া ঘাটে হাঁটিয়া বেড়ায়।।
বরষার জল গেছে বাড়ীর নিকট।
জলকূল জড়াইয়া নির্মাইল ঘাট।।
কাষ্ঠবেচা নৌকা যায় লোহাগড়া হাটে।
ডাক দিয়া সেই নৌকা লাগাইল ঘাটে।।
তারক আসিল সেই কাষ্ঠ কিনিবারে।
কাষ্ঠ কিনিলেন নয় আনা ঠিক করে।।
কাষ্ঠ নামাইয়া দিল কাষ্ঠ বিক্রেতারা।
ফেদিগ্রামে বসতি মুসলমান তারা।।
নয় আনা মূল্য এনে তারক দিয়াছে।
কি কর কি কর ডেকে ঠাকুর কহিছে।।
তারক বলেছে এ কাষ্ঠের দাম দেই।
গোস্বামী বলেন তুমি কর নাকি এই।।
কত কষ্টে কাষ্ঠ বেচে হইয়া দুঃখিত।
বুঝে এর মূল্য দেওয়া তোমার উচিৎ।।
তারক কহিছে যে সময় হ’ল কেনা।
দাম ঠিক ইহার করেছি নয় আনা।।
সাধু কহে নয় আনা দিতে পারিবা না।
আর চারি আনা দিয়া দেহ তের আনা।।
মেয়ারা কহিছে মোরা বেশী কেন নিব।
নয় আনা বেচিয়াছি তাহা ল’য়ে যাব।।
লোচন কহিছে দাম নেও তের আনা।
তাহা না নিলে নিতে হবে সতর আনা।।
মেয়ারা কহিছে সাধু চরণে সেলাম।
ন’ আনার বেশী মোরা না লইব দাম।।
তারক দিলেন এক টাকা এক আনা।
মেয়ারা কহিছে তাহা নিতে পারিব না।।
তের আনা দিয়া শেষে করে সাধাসাধি।
তারা কহে বেশী নিলে হ’ব অপরাধী।।
তোমরা বলহ পাপ মোরা কহি গোনা।
মুখের যবান গেলে কিছুই থাকে না।।
দুনিয়ায় খাঁটি যার মুখের যবান।
দুনিয়ার মধ্যে সেই খাঁটি মুসলমান।।
নয় আনা নিয়া তারা অতিরিক্ত মূল্য।
কূলে ফেলে দিয়া, নৌকা ভাসাইয়া দিল।।
লোচন তারকে কহে এইত ক্ষমতা।
মূল্য দিতে পারিলে না গেল মোর কথা।।
তারক টানিয়া ধরে নৌকা মেয়াদের।
তোমরা নিলেনা মূল্য মোর কর্মফের।।
আমাদের গুরু তোমাদের মুরশিদ।
গুরু বাক্য শিরোধার্য সবার সুহৃদ।।
লয়ে যাও দোষ নাই নিজে ভেঙ্গে খাও।
অথবা ফকিরে দিয়া খয়রাৎ দেও।।