Page: 181

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৮১

তারক আসিয়া বাটী লোচন সম্মুখে।
জিজ্ঞাসিবে মনোভাব, কথা নাহি মুখে।।
অমনি লোচন হাসি কহিছে তারকে।
কিছু কি জিজ্ঞাসা নাকি করিবা আমাকে।।
কি কহিছে নৃত্যমণি অবলা সে নারী।
টাকা সাধিয়াছি রাধামণি দুঃখ হেরি।।
বৃদ্ধ হ’লে বেশ্যা হয় হরি পরায়ণা।
এ সময় বেশ্যাবৃত্তি তার ত’ সাজে না।।
অর্থ জন্য বেশ্যা হয় হ’য়ে দায় ঠেকা।
দুষ্ট কার্য হ’বে ত্যজ্য তাতে দেই টাকা।।
বলিয়াছি দুষ্ট কার্য তেয়াগিয়া থাক।
ভিক্ষামাগি খাওয়াইব হরি বলে ডাক।।
উদর চিন্তায় কেন কুকাজের লোভী।
হরি বলে মেগে খাব হওগো বৈষ্ণবী।।
আমি দিব চৌদ্দ টাকা তুমি কিছু দেও।
পরমার্থ তত্ত্ব নিয়া ভিক্ষা মেগে খাও।।
তুমিত মোহান্ত ভাল থাক এই দেশে।
ওরা কেন ভাল হয় না তোমার বাতাসে।।
যশাই বৈরাগীর ছেলে হ’য়েছে ঠাকুর।
তার প্রেম বন্যা এসে লাগে জয়পুর।।
তুমি জয়পুর সাধনের বাড়ী কোলা।
প্রেমভক্তি দেয় হরি করি শেষ লীলা।।
কোলা আর জয়পুর প্রেম চলাচল।
এর মধ্যে কেন থাকে দুষ্ট আর খল।।
যাহা ভাল বুঝি তাহা করিয়াছি আমি।
ভাল মন্দ বিচার করিয়া লহ তুমি।।
তুমি বহু শাস্ত্র জান পড়িয়াছ কত।
মুখস্থ করেছ চৈতন্য চরিতামৃত।।
তাহাতে যাহা লিখিল তাত প’ড়ে থাক।
মঙ্গলাচরণ পদ বিচারিয়া দেখ।।
কৃষ্ণভক্ত বাধা যত শুভাশুভ কর্ম।
সেওত জীবের এক অজ্ঞানতঃ ধর্ম।।
লজ্জ ঘৃণা অষ্টপাশ সকল উঘারি।
শুভাশুভ যত কর্ম দিতে হবে ছাড়ি।।
কৃষ্ণভক্ত হবে ত বিচার সব ফেল।
পর উপকারী হ’য়ে হরি হরি বল।।
লোচনের লীলা খেলা অলৌকিক কাজ।
রচিল তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।


হীরামন ও লোচন গোস্বামীর বাদানুবাদ

পয়ার

রাউৎখামার গ্রামে গোস্বামী লোচন।
তথায় উদয় এসে হৈল হীরামন।।
গুরুচরণ বালার প্রাঙ্গণে বসিয়া।
বকিতেছে হীরামন ক্রোধিত হইয়া।।
হীরামনে সর্বজনে দণ্ডবৎ করে।
পদধূলি কেহ তুলি লইতেছে শিরে।।
ক্রোধযুক্ত তাহাতে হইয়া হীরামন।
বকাবকি যাহা মুখে বলিছে তখন।।
রমণীর গুহ্যাস্থন অপভ্রংশ ভাবে।
উচ্চারণ করিছেন ক্রোধের প্রভাবে।।
অনেকক্ষণ হীরামন বকিতে লাগিল।
ক্রোধভরে লোচন উঠিয়া দাঁড়াইল।।
লোচন কহিছে ডেকে হারে হীরামন।
হেন বাক তোরে শিখায়েছে কোন জন।।
হরি ঠাকুরকে দেখে হইলি পাগল।
সেই নাকি তোরে শিখায়েছে এই বোল।।
কি বোল বলিয়া করেছিস ডাকাডাকি।
তুই নাকি শ্রীহরির পড়া শুকপাখী।।
যে বোল শুনালি তুই, শোন তোরে কই।
দু-টা কথা কই তোরে আর কত সই।।
উলঙ্গ হইয়া জলে ঝাঁপিলে কি হয়।
তাহাতে কাহার কোথা সাধুত্ব বাড়ায়।।
জলচর পক্ষী জল চরিয়া বেড়ায়।
মরা শব জলে ভাসে সেও সাধু হয়।।
পাগল হ’য়েছে কেন চেননা মাতুল।
কি উদ্দ্যেশে খেপাইল মাতুলের কুল।।
বিবাহ করিলি যারে তারে মা বলিলি।
শ্বশুরকে আজা বলে প্রণাম করিলি।।
রমণীর মাতা শাশুড়িকে বলে আজি।
শালাকে বলিলি মামা মনেতে কি বুঝি।।
হরিচাঁদ নাম ল’য়ে পোড়াইলি মুখ।
মাতৃকুল খেলাইয়া পাইলি কি সুখ।।
জ্ঞান মিশ্র ভক্তিযোগে হ’য়েছে অজ্ঞান।
কেন উচ্চারণ কৈলি মাতৃ গুহ্য স্থান।।
মাতৃ রজ পিতৃবীর্যে জনম সবার।
তাহা কর তুচ্ছ জ্ঞান একি অবিচার।।