Page: 066

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৬৬
ব’লনা এমন বাণী করি তাই মানা।
তোমার এ বাক্য রাখা কিছুতে হ’বেনা।।
এত শুনি ঠাকুরাণী ছাড়ি দীর্ঘশ্বাস।
উপস্থিতা হৈলা মাতা অন্নপূর্ণা পাশ।।
কহিছে ব্রাহ্মণ কন্যা অন্নপূর্ণা ঠাঁই।
শুনগো মা তব ঠাঁই এই ভিক্ষা চাই।।
অপরাধ করিয়াছে মম পুত্রদ্বয়।
দোষ ক্ষমা করি মাগো চল নিজালয়।।
মাতা অন্নপূর্ণা বলে কি কথা বলহ।
এ কথা বলিলে হয় অনর্থ কলহ।।
দ্বিজকন্যা কহে অতি মিনতি করিয়া।
তব পুত্রগণ আসে বসতি ছাড়িয়া।।
তব পুত্রে মম পুত্র করে অপমান।
সেই রাগে তাদের ছাড়া’ল বাসস্থান।।
ধারিয়া প্রজার ধার নাহি করে শোধ।
পুত্র অপরাধী তাই করি অনুরোধ।।
এই তুচ্ছ অপরাধ মোরে কর ক্ষমা।
তব নিজ আশ্রমে এখনে চলগো মা।।
কহিছেন প্রভুমাতা হ’য়ে অসন্তোষ।
তোমার পুত্রের এইভাব, তুচ্ছ দোষ।।
এ হ’তে কি বড় দোষ আছে এ ধরায়।
এ দোষ ধরিতে ধরা স্বীকার না হয়।।
বিশ্বাস ঘাতকী দোষ শাস্ত্রে আছে দেখি।
মহাপাপী যেইজন বিশ্বাস ঘাতকী।।
অত্যাচারে ভিটাছাড়ি মনে হ’য়ে দুঃখী।
শেষে ঋণ শোধ দিলে পাপ হ’ত নাকি।।
কহিলেন দ্বিজকন্যা কটু না বলিও।
কর বা না কর ক্ষমা যা ইচ্ছা করিও।।
জন্মিয়াছি ব্রহ্মবংশে ব্রাহ্মণের কন্যে।
করিলাম অনুরোধ নিন্দহ কি জন্যে।।
বাক্য যদি নাহি মান আমি ফিরে যাই।
আমি মন্যু করিলে তাতে কি ভয় নাই।।
কহিছেন প্রভু মাতা মন্যু আর কিসে।
রাজকোপে দেশ ছাড়া কত কষ্ট শেষে।।
এক্ষণেতে মন্যু কর কিংবা দেও শাপ।
তাতে কোন তাপ নাই করি নাই পাপ।।
যে হউক সে হউক তবে আমি বলি এই।
তুমি বা কি শাপ দিবে আমি শাপ দেই।।
যেমন আমার পুত্র হ’ল দেশান্তরী।
হউক তোমার পুত্র কড়ার ভিখারী।।
মম পুত্রগণে পায় দেশ ছেড়ে ক্লেশ।
তেমন তোমার পুত্র ছাড়া হো’ক দেশ।।
এতশুনি রাজমাতা গেলেন ফিরিয়া।
অশ্রুপূর্ণা নেত্র দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়িয়া।।
কালক্রমে সেই শাপ আসিয়া ফলিল।
সেই ঠাকুরাণীর দুই পৌত্র যে ছিল।।
দু’জনার নাম হ’ল বিনোদ বিহারী।
ঋণদায়ী হইয়া গেল সে জমিদারী।।
ঘৃতকাঁদি আসিলেন হ’য়ে দেশান্তরী।
একাকী আছেন মাত্র সব গেছে মরি।।
অবশ্য মহৎ বাক্য নহে ব্যভিচারী।
অধর্ম্মের প্রাদুর্ভাব দিন দুই চারি।।
যথা ধর্ম্ম তথা জয় চরাচরে ব্যাপ্ত।
অতলে ভূতলে আর আছে স্বর্গ সপ্ত।।
অধর্ম কারণে রাজপুত্র দুই জন।
রাজ্যভ্রষ্ট তাহাও দেখিল সর্ব্বজন।।
কালক্রমে ধর্ম্মাধর্ম্মে ফলে ফলাফল।
কহিছে তারকচন্দ্র হরি হরি বল।।
ভক্তগণের মতুয়া খ্যাতি বিবরণ।
পয়ার।
ওঢ়াকাঁদি রাউৎখামার মল্লকাঁদি।
ভ্রমণ করেন হরিচাঁদ গুণনিধি।।
সঙ্গে ভক্তগণ ফিরে পরম আনন্দে।
নাম সংকীর্ত্তন গান হ’তেছে স্বচ্ছন্দে।।
নিজ গ্রামে শ্রীধামের পশ্চিম অংশেতে।
উপনীত হইলেন দাসের বাটীতে।।
একে একে বহুভক্ত আসিয়া মিলিল।
সভা করি ভক্তগণ সকলে বসিল।।
হরি কথা কৃষ্ণ কথা নামপদ গায়।
মধ্যবর্তী মহাপ্রভু বসিয়া সভায়।।
একে একে গ্রামের অনেক লোক আসি।
সভা করি বসিলেন যত গ্রামবাসী।।
পূর্বদিকে মহাপ্রভু পশ্চিমাভিমুখে।
গ্রামীলোক দক্ষিণে প্রভু বামদিকে।।
পশ্চিম দিকেতে বসি ব্রাহ্মণ মণ্ডলী।
ভক্তগণ প্রেমাবেশে করে ঢলা ঢলি।।
কিছুদূর উত্তরে বসিয়া বামাগণ।
হুলুধ্বনি দিতেছে শুনিয়া সংকীর্ত্তন।।