Page: 197
শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৯৭
হেনকালে একজন জিজ্ঞাসে তথায়।
তারক কাহার নাম আছে কি হেথায়।।
করিতে করিব দল বায়না কারণ।
বহু পথ পরিশ্রমে করেছি ভ্রমণ।।
গোবরা কাছারী হ’তে আমি আসিয়াছি।
জয়পুর গিয়া এই সংবাদ শুনিয়াছি।।
বিবাহের সম্বন্ধ করিতে তিনজন।
এইগ্রামে তারা নাকি ক’রেছে গমন।।
ভাঙ্গুড়া গ্রামের কথা শুনিলাম তথা।
এই যায় এই যায় শুনিলাম কথা।।
অনেকের ঠাই শুনি জিজ্ঞাসা করিলে।
এই যায় এই গেল অনেকেই বলে।।
আহারাদি করিলাম মনোখালী গ্রাম।
এই মাত্র তথা হ’তে আমি আসিলাম।।
যাওয়া মাত্র বায়নার টাকা ল’য়ে হাতে।
সেই লোক বিদায় করিল তরান্বিতে।।
সেই টাকা ভাঙ্গাইয়া বাতাসা কিনিয়া।
চলিলেন চারজন একত্র হইয়া।।
শ্যামচাঁদ কাঁড়ারের বাড়ী উতরিল।
মেয়েটি দেখিব বলে আলোচনা হ’ল।।
মেয়েটি লইয়া শ্যাম আসিল বাহিরে।
মেয়েকে বলিল দণ্ডবৎ করিবারে।।
মৃত্যুঞ্জয় চরণে করিল প্রণিপাত।
পদধূলি নিল শ্রীচরণে দিয়া হাত।।
মৃত্যুঞ্জয় বলে মা মাথার বস্ত্র ফেল।
শুনিয়া মাথার বস্ত্র অমনি ফেলিল।।
মৃত্যুঞ্জয় বলে মাতা মেল দু’নয়ন।
অমনি নয়ন করিলেন উন্মিলন।।
মৃত্যুঞ্জয় বলে মাতা চুল ছেড়ে দেও।
চুলের বন্ধন ছাড়ি ঘরে চলে যাও।।
অমনি দাঁড়ায়ে চুল বন্ধন ছাড়িল।
দণ্ডবৎ করি পরে গৃহে চলে গেল।।
সীতা যেন গবাক্ষে দেখিল রামরূপ।
তারকে নিরখি সতী হইল তদ্রুপ।।
অমনি সম্বন্ধ ঠিক করিল ত্বরায়।
সেই দিন রহিলেন শ্যামের আলয়।।
জিজ্ঞাসিল মৃত্যুঞ্জয় কি লইবা পণ।
শ্যাম বলে লইব না এই মোর পণ।।
গয়াধামে যাব আমি ভেবেছিনু মনে।
এ ছেলেকে কন্যা যদি দিতে পারি দানে।।
মেয়ে দিব এই মম আকাঙ্খা কেবল।
ঘরে বসে পাই তবে গয়া গঙ্গা ফল।।
যে হইতে মাতা জন্মে আমার ভবনে।
সেই হ’তে এই আশা সদা মোর মনে।।
ঈশ্বর মনের আশা করুণ পূরণ।
বিনা পণে কন্যাধনে করিব অর্পণ।।
সম্বন্ধ নির্ণয় করি প্রভুকে বলিল।
প্রভু বলে যার তার যুগে যুগে র’ল।।
প্রভু বলে শ্যাম যদি নাহি লয় পণ।
তথাপি বত্রিশ টাকা করিও প্রেরণ।।
তারক ভেবেছে মনে উপায় কি হবে।
গৃহে নাস্তি কপর্দক কিবা পাঠাইবে।।
মহাপ্রভু বলে ব’সে কি ভাবিস একা।
বৈশাখ মাসেতে বিয়া আমি দিব টাকা।।
মাঘ মাসে হ’ল সেই কার্য নিরূপণ।
চারি মাসে হ’ল সে টাকার সংস্থাপন।।
তিন তারিখেতে তিন ভাগে টাকা দিল।
পণ নয় সাহায্য বলিয়া পাঠাইল।।
বৈশাখ মাসের শেষ আটাশে তারিখ।
বিবাহের সেই দিন হ’য়ে গেল ঠিক।।
বিবাহের দিন একদিন অগ্রে তার।
বায়না কুন্দসী গ্রামে কবি গাওয়ার।।
সেই দিন গ্রামী লোকে ফলাহার দিতে।
এক মন দধির বায়না ছিল তাতে।।
এদিকেতে স্বজাতীর একত্র ভোজন।
বাজারের নেয়ে মাঝি খা’বে সর্বজন।।
বসিলেন সর্বজন ফলাহার জন্য।
পঞ্চাশ পঞ্চান্ন জন লোক হ’ল গণ্য।।
জলপানে পরিপূর্ণ আহার হইল।
সিকি দধি মাত্র তার খরচে লাগিল।।
সেই দই চিনি খই সঙ্গেতে করিয়া।
বরযাত্রা করিলেন নৌকায় উঠিয়া।।
পথে গিয়া সেই দধি সবে মিলে খায়।
চিনি চিঁড়ে দই খই যেন তেন রয়।।
ভাঙ্গুড়া গ্রামেতে গিয়া বাসাবাড়ী করি।
সেই সব দ্রব্য খাওয়াইল সেই বাড়ী।।
এ জাতির বিবাহ পদ্ধতি ব্যবহার।
কন্যা কর্তা বাড়ী কেহ না পায় আহার।।
কন্যা গৃহীতার তথা খেতে দিতে হয়।
যে না পারে না খাওয়ায়, পারিলে খাওয়ায়।।