Page: 176

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৭৬
দশদিন এক পক্ষ কিংবা মাসান্তর।
একারম্ভে থাকিয়া যাইত পুনর্বার।।
কোলাগ্রামে যাইতেন সাধনার ঘরে।
দিন দশ দ্বাদশ থাকিত তথাকারে।।
তারকের হ’ত যদি দেখিবারে মন।
কোলাগ্রামে গিয়া করিতেন দরশন।।
সাধনার বাটী ভক্তি পাইত প্রচুর।
দশ বারো দিন পর যেত জয়পুর।।
কোলাগ্রামে বসতি নামেতে আরাধন।
আরাধন দশরথ ভাই দুই জন।।
ভোলানাথ খুল্লতাত দশরথ নামে।
বড়ই সুখের বাস ছিল কোলাগ্রামে।।
তার জ্যৈষ্ঠ তনয় নামেতে নবকৃষ্ণ।
মথুরানাথ নামেতে তাহার কনিষ্ঠ।।
আরাধন পুত্র ভোলানাথ নাম ধর।
দশরথ নন্দন যাদব কোটিশ্বর।।
দশরথ গৃহিণী সে ফেলী নামে ধনী।
গোস্বামীকে বড় ভক্তি করিতেন তিনি।।
তাহাকে লোচন ডাকিতেন মা বলিয়ে।
ডাক শুনিতেন মাতা অতি হর্ষ হ’য়ে।।
যাদবের মা বলিয়া ডাকিত কখন।
জ্যেঠি বলে কখনো করিল সম্বোধন।।
শ্রীনবকৃষ্ণের চারি পুত্র দুই কন্যা।
জ্যেষ্ঠা কন্যা সাধনা সাধনে বড় ধন্যা।।
সনাতন নামে ছিল ইহাদের জ্ঞাতি।
এক বাড়ী তিন ঘর করিত বসতি।।
তিন ঘর গৃহস্থ একটি বাড়ী পর।
নাহি ভিন্ন ভাব যেন ছিল একতর।।
গণনাতে লোক ত্রিশ ঊনত্রিশ জন।
ছোট বড় নামে প্রেমে মত্ত সর্বজন।।
তার মধ্যে সাধনা নামেতে ছিল যিনি।
সাধনে তৎপরা ছিল যোগেতে যোগিনী।।
অন্নত্যাগী ফলাহারী নিদ্রা না যাইত।
শীতকালে শয্যাতে না শয়ন করিত।।
কটিবেড়া বাসমাত্র গায় নাহি দিত।
ভূমে বাস যোগাসনে যোগেতে বসিত।।
কোলাগ্রামে গোস্বামী লোচন দেব আসি।
সাধনার নিকট থাকিত অহর্নিশি।।
অমায়িক মায়া বাৎসল্যের একশেষ।
গোস্বামী সঙ্গেতে বঞ্চে নাহি কোন ক্লেশ।।
কোন কোন দিন যাইতেন ভিক্ষা জন্য।
জ্ঞান হ’ত বাড়ী যেন হইয়াছে শূন্য।।
সবে চেয়ে রহিত গোঁসাই আশা পথে।
শান্ত হ’ত গোস্বামীজী আসিলে বাটীতে।।
গৃহকার্য করে থাকে গোস্বামী আশায়।
গোঁসাই আসিলে বড় হরষিত হয়।।
পুরুষেরা কার্যন্তরে যাইত যখনে।
গোস্বামীর কাছে যাব সদা ভাবে মনে।।
দিবা ভরি কার্য করি যবে সন্ধ্যা হ’ত।
গোস্বামীর নিকটে এসে সকলে বসিত।।
প্রেমাবিষ্ট অনুক্ষণ থাকিত সবায়।
বাহ্যহারা হ’য়ে কোন নিশি গত হয়।।
এইভাবে জয়পুর থাকেন গোঁসাই।
সময় সময় যেত সাধনার ঠাই।।
যেই ভক্ত সেই হরি ভজ নিষ্ঠা করি।
নামের সহিত আছে আপনি শ্রীহরি।।
মহানন্দ চিদানন্দ রচিতে পুস্তক।
আদেশে প্রকাশে কবি বাসনা তারক।।
অবিশ্বাসী দ্বিজের ভ্রান্তি মোচন
পয়ার
মাঝে মাঝে যান প্রভু ভিক্ষা করিবারে।
ভিক্ষা করি আসিতেন বেলা দ্বিপ্রহরে।।
একজন দ্বিজ তার বাড়ী উলা গ্রাম।
গৃহস্থ ব্রাহ্মণ তিনি ষষ্ঠীচন্দ্র নাম।।
কোলাগ্রামে এসেছিল সাধনার বাটীতে।
দেখিলেন গোস্বামীকে ভকতি করিতে।।
তাহা দেখি ব্রাহ্মণের মনে হ’ল ঘৃণা।
একে যে ভকতি করে নির্বোধ সে জনা।।
অল্প বিদ্যা বুদ্ধিহীন নমঃশুদ্র জাতি।
কারে কি জানিয়া এরা করিছে ভকতি।।
সাধনার পিতাকে বলেন সে ব্রাহ্মণ।
ইহাকে ভকতি কর কিসের কারণ।।
মেয়ে তব সতী সাধ্বী যোগিনীর প্রায়।
কি লাগি দিয়াছ সপে ও টুণ্ডার পায়।।
তাহা শুনি নবকৃষ্ণ বলে ব্রাহ্মণেরে।
সাধুসেবা সবে মিলে করি হর্ষান্তরে।।
কৃষ্ণতুল্য ব্যক্তি ইনি গ্রন্থে লেখে এই।
সর্বরোগী ভোগী ত্যাগী কৃষ্ণতুল্য সেই।।