Page: 220

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২২০

রামায়ণ গায়কেরা গায় রামায়ণে।
শিব শুক নারদ আদি তত্ত্ব নাহি জানে।।
তব ভৃত্য মোরা জগন্নাথ পরিবার।
নরকুলে নরাধম কি বুঝি তোমার।।
তব কৃপা জন্য ধন্য হইনু এবার।
ওঢ়াকাঁদি শ্রীধামে এ লীলার প্রচার।।
এ প্রসাদ নিলে দিলে বলিবারে মানা।
মোরা কি বলিব জানিবেক ভক্তজনা।।
অন্তরঙ্গ বহিরঙ্গ সকলে জানিবে।
এ হেন আশ্চর্য লীলা গোপনে কি র’বে।।
প্রভু বলে হয় হয় না র’বে গোপন।
গ্রন্থে তুলি ভক্তগণে করিবে কীর্তন।।
অভক্ত কি ভক্ত ইহা জানিবে বিশেষ।
জানিলে ভবানী একা ভাসাইবে দেশ।।
এত বলি পাণ্ডাদ্বয় বিদায় করিল।
পাণ্ডাদ্বয় সে প্রসাদ অনেকে বিলাল।।
ওঢ়াকাঁদি চতুষ্পার্শ্বে যত গ্রাম ছিল।
বহুদিন থেকে সে প্রসাদ বিলাল।।
কেঁদে কেঁদে বলিত প্রসাদ বিবরণ।
মাঝে মাঝে করিতেন শ্রীরূপ দর্শন।।
ধন্যা সে ভবানী দেবী পাণ্ডা দুইজন।
জয় জগন্নাথ পূর্ববঙ্গে আগমন।।
ওঢ়াকাঁদি শ্রীক্ষেত্রে একত্র এক কাজ।
রচিল তারক চন্দ্র কবি রসরাজ।।


ভক্ত জয়চাঁদ উপাখ্যান।

পয়ার।

ঠাকুরের প্রিয় ভক্ত জয়চাঁদ ঢালী।
তাহার বসতী ছিল গ্রাম ভূষাইলী।।
মধুমতী নদী তীরে ভূষাইলী গ্রাম।
পরগণে মকিমপুর জয়চাঁদ নাম।।
মকিমপুর কাছারী চাকরী ছিল তার।
কাছারীতে ভালবাসা ছিল সবাকার।।
নায়েব মহুরী কিংবা আমিন পেস্কার।
সবাই বাসেন ভাল বাক্য মানে তার।।
জমিদার যদি কোন কার্য করিতেন।
জয়চাঁদ নিকটেতে সম্মতি নিতেন।।
রাণী রাসমণি তিনি বড় দয়াময়ী।
মর্তলোকে জন্ম ভগবতী অংশ সেই।।
তাহার অধীন মকিমপুর পরগণা।
সদর কাছারী তার মকিমপুর থানা।।
আট আনা মাহিনা পাইক যত জন।
দশ টাকা ছিল জয়চাঁদের বেতন।।
আমলারা মফঃস্বলে নজর পাইত।
জয়চাঁদ যদি সেই সঙ্গেতে যাইত।।
আমলারা নজর পাইত যেই খানে।
জয়চাঁদ নজর পাইত সেই সনে।।
এই মত সম্মানিত ছিল কাছারীতে।
অধর্মের কার্য না করিত কোন মতে।।
নড়াইল নিবাসিনী ভবানী নামিনী।
রামকুমার বিশ্বাসের মধ্যমা ভগিনী।।
সেই মেয়ে আসিতেন ভূষাইল গ্রামে।
ছিলেন প্রমত্তা হরিচাঁদ নামে প্রেমে।।
তাহার নিকট শুনি হরিচাঁদ বার্তা।
জয়চাঁদ সমর্পিল মন প্রাণ আত্মা।।
জয়চাঁদে ভাই ভাই বলি ডাকিতেন।
জয়চাঁদ দিদি সম্বোধন করিতেন।।
ঠাকুরের মহিমা সে বহুত কহিল।
মন ভুলে জয়চাঁদ ভাবোন্মত্ত হ’ল।।
জয়চাঁদ কেঁদে কহে ভবানীর ঠাই।
ঠাকুর নিকটে আমি কেমনে বা যাই।।
কেমনে পাইব আমি ঠাকুরের দেখা।
ঠাকুরে না দেখে আর নাহি যায় থাকা।।
দেহ মন প্রাণ মম সকল নিয়েছে।
চর্ম চক্ষে দৃষ্টি মাত্রে বাকী রহিয়াছে।।
দেহ মাত্র রহিয়াছে পিঞ্জরের প্রায়।
মন পাখী উড়ে গেছে ঠাকুর যেথায়।।
আমি যে কি হইয়াছি বুঝা নাহি যায়।
হরিচাঁদ রূপ মম জেগেছে হৃদয়।।
ঝরে আঁখি রূপ যেন দেখি দেখা যায়।
শীঘ্র নিয়া হরিচাঁদে দেখাও আমায়।।
তাহা শুনি সে ভবানী করিল স্বীকার।
তোমারে দেখাব নিয়া ঠাকুর আমার।।
দিন করিল যাব কল্য সকালেতে।
ভবানী থাকিল জয়চাঁদের বাটীতে।।
নিশি পোহাইল দোঁহে ভাব উন্মাদেতে।
চিন্তা জাগ্রদুন্মাদে ভাবনা বিচ্ছেদেতে।।
ব্রহ্ম মুহূর্তের কালে চলে দুইজনে।
প্রেমে গদ গদ বারি বহিছে নয়নে।।