Page: 074
শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৭৪
শুনিয়া বদন বড় হরষিত হ’ল।
বলে সবে মোরে ল’য়ে ওঢ়াকাঁদি চল।।
দশরথ বলে আমি লইয়া যাইব।
ব্যাধিমুক্ত হ’লে মোরা তার দাস হ’ব।।
শয্যাগত মৃতবৎ ওষ্ঠাগত প্রাণ।
ক্ষণে ক্ষণে অচেতন ক্ষণেক অজ্ঞান।।
উত্থান শকতি নাই থাকেন শয্যায়।
তরণী সাজিয়া চলে দুই মহাশয়।।
দুই জন তরী বাহে ত্বরান্বিত হ’য়ে।
বদন রহিল সেই নৌকাপরে শুয়ে।।
দুই জন তরী বাহে হরিগুণ গায়।
অশ্রুজলে বদনের বক্ষঃ ভেসে যায়।।
মনে ভাবে যদি কিছু সময় পেতাম।
মনোসাধ মিটায়ে নিতা’ম হরিনাম।।
ভাবিতে ভাবিতে কিছু উপশম পায়।
সকাতরে ধীরে ধীরে হরিনাম লয়।।
ঠাকুরের ঘাটে নৌকা চাপিল যখন।
প্রভু করিলেন অন্তঃপুরে পলায়ন।।
বাহির বাটীতে এসে পড়িল বদন।
ধরায় শয়ন করি ক’রেছে রোদন।।
বদন রোদন করে হইয়া পতন।
দেখা দিয়ে প্রাণ রাখ শ্রীমধুসূদন।।
ক্ষণেক থাকিয়া প্রভু আসিল বাহিরে।
তর্জ্জন গর্জ্জন করে বদনের পরে।।
গালাগালি দিয়া বলে ওঠ বেটা দুষ্ট।
বল দেখি তোর কেন হ’ল এত কষ্ট।।
বেয়েছ বাঁচাড়ি নৌকা পাছা নাচাইয়া।
আড়ঙ্গ করেছ জয় বাহিছ খেলা’য়া।।
দেহ খাটাইয়া লোক ধন উপার্জ্জয়।
সেই ধন কাকেরে বকেরে কে খাওয়ায়।।
এখন সে সোর শব্দ রহিল কোথায়।
একা আসা একা যাওয়া সাথী কেবা হয়।।
বদন বলিছে প্রভু মরিয়াছি আমি।
ভগ্ন তরী ডুবে মরি কর্ণধার তুমি।।
ঠাকুর বলেন চিনে সে কাণ্ডারী ধর।
মরিলি যদ্যপি বেটা ভালো ক’রে মর।।
বদন বলেন মম ডুবু ডুবু তরী।
আর কি চিনিতে যা’ব চিনেছি কাণ্ডারী।।
বদন বলেন তরী সবে যায় বেয়ে।
ডুবাতরী যেই বাহে তারে বলি নেয়ে।।
বদন বলেন হরি পদতরী দেও।
ছাড়িলাম দেহতরী বাও বা না বাও।।
হরি হরি হরি বলি উঠিল বদন।
ধরণী লোটা’য়ে ধরে প্রভুর চরণ।।
সঙ্গে আসিয়াছে যারা রহে জোড় করে।
ঠাকুর বলে তোরা ফিরে যারে ঘরে।।
বাটী গিয়া বল সবে মরেছে বদন।
যে দারুণ পেট ব্যাথা না রবে জীবন।।
কেহ যদি থাকে সে করুক শ্রাদ্ধ আদি।
বল গিয়া বদন মরেছে ওঢ়াকাঁদি।।
মৃতদেহ এনে তোরা রাখিলি এখানে।
এখানে মরিবে ওরে কে ফেলা’বে টেনে।।
ইহা বলি তা সবারে পাঠাইল ঘরে।
পদ দিল বদনের পেটের উপরে।।
জীয়ন্তে কাহার পেটে কে করয় ছিদ্র।
পেটের ঘায়ের পর দিল পাদ পদ্ম।।
অমনি পেটের ঘা শুকাইয়া গেল।
হরি হরি হরি বলি বদন উঠিল।।
ঠাকুর বলেন তোর পেটে ছিল যেই।
দেখ বাছা তোর পেটে আছে কি না সেই।।
বদন বলেন মোর পেটে যেই ছিল।
শ্রীপদ পরশে সেই মুক্তি হয়ে গেল।।
হরি ভিন্ন বদনে বলে না অন্য বোল।
নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে হরি ব’লেছে কেবল।।
বায়ু যবে পশে তার হৃদয় মাঝেতে।
শত হরিনাম করে প্রতি নিঃশ্বাসেতে।।
বায়ু যবে বের হয় তাহার সঙ্গেতে।
পঞ্চাশৎ হরিনাম করে সে কালেতে।।
কেহ যদি কাছে এসে জিজ্ঞাসা করয়।
নাম সঙ্গে কথা কয় নামে করে লয়।।
কোনকালে নাম করা ক্ষান্ত নাহি হয়।
হাতে মুখে চোখে ঈষৎ ইঙ্গিত দেখায়।।
কেহ যদি বলে কিছু খাওরে বদন।
বলে হরি দেও হরি করিব ভোজন।।
ঠাকুর বলেন যদি বাড়ী যেতে বোল।
বলে হরি হে হরি যা’বনা হরিবোল।।
ঠাকুর বলেন তবে মম সঙ্গে আয়।
হরি হরি হরি বলি পিছে পিছে ধায়।।
বাসস্থান পূর্বদিকে ধান্যভূমি ছিল।
তার মধ্যে উচ্চ এক স্থান আছে ভাল।।