Page: 221

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২২১

প্রাতেঃ রাধানগরের বাজারে উদয়।
এক হাড়ি মণ্ডা ক্রয় করিল তথায়।।
পূর্বমুখী হ’য়ে চলে ঠাকুরের বাড়ী।
হাতে যষ্টি মস্তকেতে সন্দেশের হাড়ি।।
বাবা বাবা বলে হাই ছাড়ে বার বার।
মধুমতী নদী দোঁহে হইলেন পার।।
দীর্ঘশ্বাস পরিত্যাগ সঘনে করিয়া।
চলিলেন তারাইল গ্রাম মধ্য দিয়া।।
খাগড়াবাড়ীয়া গ্রাম দক্ষিণ অংশেতে।
এক বেটা দস্যু বসে ধান্যের ভূমিতে।।
জমির টানিয়া নাড়া আলি বাঁধিতেছে।
দুজনাকে দেখে সেই আলিতে বসেছে।।
সেই দস্যু জিজ্ঞাসিল কোথায় যাইস।
মেয়ে লোক সঙ্গে করি কি জন্যে আসিস।।
একমাত্র মেয়েলোক করিয়া সঙ্গেতে।
কোথায় যাইস তোরা কোন সাহসেতে।।
জয়চাঁদ কহে আমি ওঢ়াকাঁদি যাই।
উনি মোর বড় দিদি আমি ছোট ভাই।।
এক বাবা হরিচাঁদ বাবার উদ্দেশ্যে।
ভাই বোন চলিয়াছি নির্বিকার দেশে।।
দস্যু বলে কি ঠাকুর পেয়েছিস তোরা।
মস্তকেতে হাঁড়ি তোর হাঁড়িতে কি ভরা।।
জয়চাঁদ বলে মোর হাঁড়িতে সন্দেশ।
দস্যু বলে কেন নিস করে এত ক্লেশ।।
কুপিণ্ডে যত বেটারা উঠায়েছে সুর।
যশা বৈরাগীর ছেলে হ’য়েছে ঠাকুর।।
জমিদারে দিল যার ভিটা বাড়ী বেঁচে।
সফলাডাঙ্গা ছাড়িয়া ওঢ়াকাঁদি গেছে।।
সে ঠাকুর হ’ল কিসে জাতি নমঃশূদ্র।
সেও নমঃশূদ্র বেটা তুই নমঃশূদ্র।।
সে হ’ল ঠাকুর কিসে তার বাড়ী যাস।
কিবা ঠাকুরালী তার দেখিবারে পা’স।।
সন্দেশের হাঁড়িটারে নামি’য়ে রাখিয়ে।
না খাওয়ায়ে তোদের সে দিবে খেদায়ে।।
জয়চাঁদ বলে হাঁড়ি রাখিলেই হয়।
খেতে দিক নাহি দিক তার নাহি দায়।।
খেতে পাই না পাই রাখিলে হয় হাঁড়ি।
তা বলেত খেতে যাইব না তব বাড়ী।।
দস্যু বলে আয় তবে মম বাড়ী যাই।
অতিথির ভাত সে বাড়ীতে কভু নাই।।
ওরে বেটা ভণ্ড আর না করিস ছল।
সন্দেশের হাঁড়ি লয়ে মোর বাড়ী চল।।
মোর বাড়ী নামাইলে নাহি থুব ঘরে।
আমিও খাইব আরো খাওয়াব তোরে।।
জয়চাঁদ বলে আগে ওঢ়াকাঁদি যাব।
সেখানে খেতে না পেলে তোর বাড়ী রব।।
দস্যু বলে যা চলে তোর ঠাকুরের বাড়ী।
সেবা জন্যে মিষ্টি নিস হাতে কেন লড়ি।।
সন্দেশ লইতে হয় সেবার কারণ।
লড়ি নিস কার সঙ্গে করিবারে রণ।।
এত বলি দস্যু বেটা যষ্টি কেড়ে নিল।
আইলের নিম্নভাগে গাড়িয়া থুইল।।
পাড়াইয়া দিল লড়ি মাটির তলেতে।
জয়চাঁদ বলে লাঠি নিব মাটি হ’তে।।
দস্যু বলে ভাগ্য তোর রাখিলাম লড়ি।
সন্দেশের হাঁড়ি নিব কর যদি তেড়ি।।
বল গিয়া ওঢ়াকাঁদি তোর সে ঠাকুরে।
লাঠি নিল এক বেটা না দিল আমারে।।
তাহা শুনি জয়চাঁদ কাঁদিতে কাঁদিতে।
ওঢ়াকাঁদি উপনীত বিষাদিত চিতে।।
ঠাকুর বসিয়াছেন পশ্চিমাভিমুখে।
হেনকালে জয়চাঁদ দাঁড়াল সম্মুখে।।
ঠাকুর তখন বলিলেন জয়চাঁদে।
দস্যু হাতে পড়েছিলি বিষম প্রমাদে।।
যষ্টিখানা কেড়ে নিয়ে সে থুয়েছে গেড়ে।
ভাগ্যে সন্দেশের হাঁড়ি তোরে দিল ছেড়ে।।
তাহা শুনি জয়চাঁদ কাঁদিয়া ভাসায়।
হেন অন্তর্যামী নাথ কোথা পাওয়া যায়।।
প্রভুর নিকটে রাখি সন্দেশের হাঁড়ি।
পদে পড়ি জয়চাঁদ যায় গড়াগড়ি।।
হরিচাঁদ বলে ওরে বাছা জয়চাঁদ।
ঝগড়া করিলে তোর ঘটিত প্রমাদ।।
জয় বলে রাজকার্যে যুদ্ধ করিয়াছি।
তার মত কতটারে পরাস্ত করেছি।।
পাঁচশত লোকের মহড়া একা দেই।
আমি জয় পরাজয় কা’রে দেই নাই।।
রণে যদি পাঁইতারা করি একবার।
পালাইয়া যায় লোক হাজার হাজার।।
অদ্য আমি বলহীন নহে কোন মতে।
তথাপি পরাস্ত মানি শৃগালের হাতে।।