Page: 056

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৫৬

একা একা কর মাগো সংসারের কার্য।
আমাকে করগো দাসী কর না ত্যজ্য।।
তোমার নিকটে থাকি ঘুচাইব তাপ।
তুমি মম জননী ঠাকুর মম বাপ।।
শুনি লক্ষ্মীমাতা বলে ঠাকুরের ঠাই।
এসেছে মেয়েটি এরে রাখিবারে চাই।।
ঠাকুর বলেন প্রিয়ে! যে ইচ্ছা তোমার।
থাকে থাক যায় যাক যে ইচ্ছা উহার।।
দাসী বলে এসেছিত অবশ্যই থাকিব।
হেন মাতা পিতা আর কোথা গিয়া পা’ব।।
আমার বলিতে আর নাহিক জগতে।
ঠাকুরাণী মাতা মম তুমি মোর পিতে।।
মহাপ্রভু বলে তবে শান্তি দেবী ঠাই।
তোমার ইচ্ছে যেমন মম ইচ্ছা তাই।।
মেয়ে ছেলে আমি তার নাহি ধারি ধার।
রাখ বা না রাখ এরে যে ইচ্ছা তোমার।।
ঠাকুরাণী বলে পিতা বলেছে তোমায়।
আমাকে বলিয়া মাতা লোটাইল পায়।।
তাতে এত বেশী লোক নাহি তব ঘরে।
অবশ্য রাখিতে হয় শরণাগতরে।।
ঠাকুরাণী বলে বাছা তুমি মম মেয়ে।
গৃহে যাও খাও লও কাজ কর গিয়ে।।
অমনি উঠিয়া দাসী গৃহে প্রবেশিল।
কাজ করে খায় পরে কত দিন গেল।।
আপন ভাবিয়া দাসী করে প্রাণপণ।
গৃহকার্য করে যেন আপন আপন।।
এইভাবে দাসী থাকে কিছুদিন যায়।
দাসীর নিকটে মাতা নানা কথা কয়।।
শরীক বিভাগকালে যে টাকা পাইল।
ধর্ম মেয়ে কাছে মাতা সকল বলিল।।
বাহির করিল মাতা মেয়ের সাক্ষাতে।
টাকা তিনশত রাখে পুরিয়া থলিতে।।
বড় এক হাঁড়ি মাঝে টাকা রাখে সেরে।
তাহার মধ্যেতে রাখে ধান্য পূর্ণ করে।।
নীচের হাঁড়িতে টাকা তাতে ধান্য পূর্ণ পুরে।
আর দুই ভাণ্ড রাখে তাহার উপরে।।
কাজ কর্ম করে মাতা কহে নানা কথা।
কন্যার প্রতি মাতার বাড়িল মমতা।।
যে খানেতে তিনশত টাকা সেরে রাখে।
সময় সময় গিয়ে মায় ঝিয়ে দেখে।।
এইভাবে কন্যাকে রাখেন সমাদরে।
নিজের কন্যার মত মা ভাবেন তারে।।
আড়াই প্রহরকালে ভোজন করিয়ে।
বসিলেন প্রভু যত ভক্তবৃন্দ ল’য়ে।।
নামপদ গানে হৃষ্ট ইষ্ট গোষ্ঠ করে।
কন্যা গৃহে রাখি মাতা যান কার্যান্তরে।।
বেলা প্রহরেক আছে এমন সময়।
ধর্মকন্যা দাসী ছিল একা সে আলয়।।
যে হাঁড়িতে ধান্য ছিল তাহা ভূমে ঢালি।
দাসী কন্যা টাকা ঝা’ল লয়ে গেল চলি।।
ঝা’ল কোমরেতে বাঁধে এমন সময়।
লক্ষ্মীমাতা গৃহদ্বারে হ’লেন উদয়।।
মাতা ব’লে ধান্য ঢালি কি করিস ঘরে।
বলিতে বলিতে দাসী চলিল বাহিরে।।
বাহিরিতে গিয়া দাসী দ্রুত গতি ধায়।
দৌড় দিয়া পড়িল সে বাড়ীর নীচায়।।
বৃক্ষ আদি নাহি আর নাহি তৃণ বন।
বসতি বাটীর নীচে ধান্য উপার্জন।।
পালাইতে নাহি পারে বেগে চলি যায়।
দু’চারি পা যায় আর ফিরে ফিরে চায়।।
লক্ষ্মীমাতা বলে এত করিয়া মমতা।
মোরে থুয়ে টাকা ল’য়ে তুই যাস কোথা।।
আরো বেগে ধায় দাসী উত্তর না দেয়।
ঠাকুরাণী গিয়া তাহা ঠাকুরে জানায়।।
আপনি আছেন হেথা দাসী ছিল ঘরে।
আমি গিয়াছিনু মেয়ে রেখে কার্যান্তরে।।
শূন্য ঘর পেয়ে গেল টাকা ল’য়ে চলি।
ধান্যভাণ্ডে টাকা ছিল ধান্য ফেলি ঢালি।।
অই যায় চোরা কন্যা টাকা ল’য়ে যায়।
দ্রুতগতি যায় আর ফিরে ফিরে চায়।।
এই জন্য বুঝি মাতা পিতা ব’লেছিল।
তিনশত টাকা ল’য়ে অই যে চলিল।।
কেহ বলে টাকা নিল চোর ধরে আনি।
ঠাকুর বলেন নাহি বল হেন বাণী।।
পিতার থাকিলে ধন পুত্র কন্যা পায়।
ধন ধান্যে ইহা বই আর কিবা হয়।।
ছিল ধন নিল কন্যা তাতে কিবা ক্ষতি।
দেখি ধন বিনা মোর কিবা হয় গতি।।
নিজ কন্যা হ’তে আরো ধর্মকন্যা ভারি।
কন্যা নিল পিতৃধন কেবা কয় চুরি।।