Page: 098

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৯৮
নয়ন মুদিয়া প্রায় অর্ধদণ্ড ছিল।
আরোপে দেখিল প্রভু তালতলায় এল।।
হর্ষোৎফুল্ল হইয়া উঠিল ঠাকুরানী।
সত্বরে আসিল যথা যোগে ননদিনী।।
কহে ডাকি সে জানকী ননদীর ঠাই।
ঠাকুর এসেছে তোর আর চিন্তা নাই।।
কতক্ষণ এইরূপে আরোপে থাকিবা।
অনুমান ছাড়ি কর বর্তমান সেবা।।
কৃষ্ণকলি হার শোভে ঠাকুরের গলে।
সুখে হাতে সৌদামিনী জলদের কোলে।।
বার বার ডাকিতেছে উঠ ঠাকুর-ঝি।
ঠাকুর ঠাকুর ল’য়ে ওই এল বুঝি।।
মৃত্যুঞ্জয় মাতা সে সুভদ্রা ঠাকুরানী।
করিছেন মালা জপ বসি একাকিনী।।
কহিছে বধূর কাছে তোরা কোহিস।
ঠাকুর এসেছে কথা কোথা কি শুনিস।।
বধূ কহে ঠাকুরানী কি কোহিব আর।
ঠাকুর-ঝি গাঁথিয়াছে মালা মনোহর।।
সেই মালা গলে কিবা সেজেছে ঠাকুরে।
অই আসিতেছে নৌকা আর নাহি দূরে।।
হেন মতে হইতেছে কথোপকথন।
মল্লকাঁদি ঘাটে নৌকা আসিল তখন।।
ভকত বৎসল হরি দ্বৈত হরি রূপে।
ইচ্ছিলেন আসিবেন জানকী সমীপে।।
অসম্ভব ক্রিয়া যত তাহাতে সম্ভব।
প্রহ্লাদে রাখিতে যথা স্তম্ভেতে উদ্ভব।।
এক কৃষ্ণ যথা নন্দ গৃহে বন্ধ রয়।
আর কৃষ্ণ কণ্ব মুনি অন্ন মেরে দেয়।।
এক মূর্তি মৃত্যুঞ্জয় নৌকাপরে থাকি।
এক মূর্তি দেখে সুখে সুভদ্রা জানকী।।
ঠাকুরের কথা শুনি সুভদ্রা জননী।
বধূকে কহিল বধূ কহিলি কি বাণী।।
জানকী দিয়াছে মালা ঠাকুরের গলে।
দেখিলি সে মালা তুই তোর ভক্তি বলে।।
তোরা দোঁহে মালা দিয়া কৈলী দেখাদেখি।
আমি অভাগিনী শুধু মালা লয়ে থাকি।।
হেনরূপ হইতেছে কথোপকথন।
উপস্থিত হরিচাঁদ হইল তখন।।
জানকী আসিয়া প্রভু পদে প্রণমিল।
কাশীমাতা গৃহে গিয়া আসন পাতিল।।
গললগ্নী কৃতবাস হইয়া তখনে।
প্রভুকে বলেন বাপ এস হে আসনে।।
শুনিয়া ঠাকুর গিয়া আসনে বসিল।
সুভদ্রা আসিয়া পদে প্রণাম করিল।।
করজোড়ে কহিলেন ঠাকুরের ঠাই।
কি দিয়া জানকী তোমা সা’জাল গোঁসাই।।
ঠাকুর কহিছে তুমি জানিলে কিরূপে।
সুভদ্রা কহিছে বধূ দেখিল আরোপে।।
বধূ কহে হরিচাঁদে সাঁজালে যতনে।
পদ্ম দিয়া পাদপদ্ম সাঁজালে না কেনে।।
বলাবলি উভয়েতে করে ঠারে ঠোরে।
তাই শুনি আমি শেষে জিজ্ঞাসি বধূরে।।
বধূ বলে জানকী যে আরোপেতে ছিল।
কৃষ্ণকলি ফুলহারে তোমারে সাঁজিল।।
এই সেই ফুলহারে সাঁজিলে গোঁসাই।
তব গলে মালা দেখি মানিলাম তাই।।
ওদিকে প্রভুকে ল’য়ে আসেন মৃত্যুঞ্জয়।
মল্লবিলে পদ্মপুষ্প দেখিবারে পায়।।
ভাবিছেন প্রভুকে লইয়া নিজ ঘরে।
এই পদ্ম ফুল দিয়া সাজা’ব ঠাকুরে।।
পদ্মবনে ফুল তোলে বসিয়া নৌকায়।
মহাপ্রভু বলে কি করিস মৃত্যুঞ্জয়।।
মনের মানসা ফুল করিয়া যতন।
চন্দন মাখিয়া ফুলে পূঁজিব চরণ।।
মৃত্যুঞ্জয় ভবনেতে বসিয়া আসনে।
অন্তর্যামী গোঁসাই ভেবেছে মনে মনে।।
কাশীমাতা হরিচাঁদে বসায়ে শয্যায়।
চরণে চন্দন দেন আনন্দ হৃদয়।।
হেনকালে মৃত্যুঞ্জয় আনিলেন ফুল।
ফুল দেখে কাশীমাতা আনন্দে আকুল।।
চন্দনে মাখিয়া পদ্ম দেন পাদপদ্মে।
তুলসীর দাম দেন তার মধ্যে মধ্যে।।
দেবী কাশী হাসি হাসি কহিছেন বাণী।
ঠাকুরের শোভা কিবা দেখে ঠাকুরানী।।
শুনিয়া সুভদ্রা মাতা একদৃষ্টে চায়।
দ্বিগুণ উজ্জ্বল শোভা দেখিবারে পায়।।
একে জানকী দত্ত আরোপের মাল।
পাদপদ্মে পদ্ম ভক্তি চন্দন মিশাল।।
স্ফটিকের উপরে যেন হীরকের চাকা।
চূড়ার উপরে যেন ময়ূরের পাখা।।