Page: 062

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৬২
প্রভু প্রিয় ভক্ত রামকুমার ভকত।
তার বাড়ী যান প্রভু ভক্ত সঙ্গে কত।।
তৃতীয় প্রহর রাত্রি নাম সংকীর্ত্তন।
কীর্ত্তনান্তে করিলেন গৃহেতে গমন।।
সকল ভকতগণ বিদায় করিয়া।
গৃহে যান প্রভু রামকুমারে লইয়া।।
গোবিন্দ মতুয়া সঙ্গে হইয়া মিলন।
কীর্ত্তনের ভাব অঙ্গে আছে তিন জন।।
গোবিন্দ পিছেতে ধায় মধ্যেতে কুমার।
সকলের অগ্রেতে ঠাকুর অগ্রসর।।
গোবিন্দ নিকটবর্তী প্রভু কিছু দূরে।
হেনকালে সর্পঘাত করিল কুমারে।।
থর থর করি গাত্র কাঁপিতে লাগিল।
বলে প্রভু কাল সাপে আমারে কাটিল।।
প্রভু বলে কি সর্প তা জানিলে কেমনে।
গোক্ষুর কি কাল সাপ দেখেছ নয়নে।।
কুমার বলিল জ্যোৎস্নায় দেখা যায়।
অই সেই সর্প মোরে দংশে চ’লে যায়।।
ঠাকুর বলেন তার বুকে দিয়া কর।
গাত্র যেন কাঁপে তোর বুক ধড়ফড়।।
সর্পের দংশনে তোর কেন হ’ল ভয়।
দেখ সাপ ধরে আনি কেমনে দংশয়।।
দাঁড়া তুই আমি সেই সর্প ধরে আনি।
যার বিষ চুমুকিয়া লবে সেই ফণী।।
কহিছে রামকুমার তাহা না পারিব।
পুনঃ সাপ দেখে শঙ্কায় মরিব।।
ঠাকুর কহিছে তুই আয় মম কাছে।
দেখি তোর কোনখানে সাপে দংশিয়াছে।।
দেখাইয়া দিল ঘা ভকত মহাশয়।
দেখে দংশিয়াছে বাম পায়ের পাতায়।।
দক্ষিণ পদ অঙ্গুলি ঠাকুর তখনে।
সর্পকাটা ঘায় ছোঁয়াইল ততক্ষণে।।
সর্প কোথা বিষ কোথা কেনরে ভাবিস।
সর্পের নিকটে থাকে মানুষের বিষ।।
ব্রহ্মার কুমার দক্ষ মানুষাবতার।
সবে জানে ষাটি কন্যা জন্মিল তাহার।।
মানুষ কশ্যপ মুনি তের কন্যা লয়।
যুগ ধর্ম অষ্ট কন্যা করে পরিণয়।।
একাদশ কন্যা তার রুদ্রে বিয়া করে।
সাতাইশ কন্যা দিল নিশাকর করে।।
নবরূপ প্রজাপতি জাতিতে মানুষ।
তার কন্যা বিয়ে করে অনাদি পুরুষ।।
দক্ষপুরে সতী ত্যাগ করিল জীবন।
শব শিরে করি শিব করিল রোদন।।
নয়ন জলেতে সেই বিষ বাহিরিল।
সমুদ্র মন্থনকালে সে বিষ উঠিল।।
জাতি সর্প অনন্ত বাসুকী যারে কয়।
মানুষ কশ্যপ মুনি তার পিতা হয়।।
বাসুকী বন্ধন দড়ি তখনে হইল।
সমুদ্র মন্থনকালে বিষ উগারিল।।
বিষে বিষ মিশিল খাইল শূলপাণি।
পার্বতীর দুগ্ধপানে নির্বিষ অমনি।।
বিষহরি বিষ হরি নিল সে সময়ে।
জটাচার্ব্ব বংশে জরৎকারু করে বিয়ে।।
সেই পদ্মা বিষকর্ত্রী তার কাছে বিষ।
বিষ মানুষের নারী ভয় কি করিস।।
মহতের কোপে হয় বিষ উপার্জন।
সাপে কি করিতে পারে করিয়া দংশন।।
বিষ খাইয়াছে সর্প তোমাকে দংশিয়া।
মরিবে ও সর্প কল্য দেখিও আসিয়া।।
শেষে গিয়া বসিলেন প্রভুর শ্রীধামে।
যামিনী প্রভাত হ’ল কৃষ্ণকথা প্রেমে।।
প্রাতঃকৃত্য করি হরি কথার আলাপ।
বলে চল দেখে আসি কামড়ানে সাপ।।
ঠাকুরের সঙ্গেতে গিয়ে ভক্ত মহাশয়।
দেখে গিয়া সেইখানে সর্প মরে রয়।।
ঠাকুর বলেন সর্প বিষ খাইয়াছে।
তোর অঙ্গবিষে সর্প মরিয়া রয়েছে।।
যখন করিল কৃষ্ণ কালীয় দমন।
কৃষ্ণ অঙ্গে রাগে নাগে করিল দংশন।।
কালীয়ের ফণা ভাঙ্গি করিল দমন।
শিরে দিল পদচিহ্ন কালীয় দমন।।
সেই হ’তে গরুড়ের ভয় তার গেল।
বিনতানন্দন তারে কিছু না বলিল।।
গরুড়ে আরূঢ় হইতেন ভগবান।
সে গরুড় মুনিপত্নী বিনতাসন্তান।।
কৃষ্ণভক্ত গরুড়ের সহায় সংসারে।
সাপের কামড়ে কোথা কৃষ্ণভক্ত মরে।।
কংস যবে পুতনাকে ব্রজে পাঠাইল।
পুতনা রাক্ষসী স্তনে বিষ মাখাইল।।