Page: 081

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৮১
জ্ঞাতি বন্ধু সব লোকে ভাবে মনে মনে।
এ বেটা সংসার কার্য তেয়াগিল কেনে।।
কেহ বলে যে দিন ঠাকুর দেখতে যায়।
সেই দিন পাগল করেছে মৃত্যুঞ্জয়।।
মৃত্যুঞ্জয় বাড়ীতে ঠাকুর এসেছিল।
মৃত্যুঞ্জয় গৃহিণী ঠাকুরে সাজাইল।।
মৃত্যুঞ্জয় এনেছিল শতদল পদ্ম।
সেই ফুলে পূজে ঠাকুরের পাদপদ্ম।।
পরমা বৈষ্ণবী সেই মৃত্যুঞ্জয় মাতা।
ঠাকুরে পূজিয়াছিল শুনিয়াছি কথা।।
সে ঠাকুরে দেখিবারে গিয়েছিল হীরে।
মূর্ছা হ’য়ে পড়েছিল দেখে সে ঠাকুরে।।
মৃত্যুঞ্জয় ওর কর্ণে দিয়েছিল হরিবোল।
সেই হ’তে হীরামন হ’য়েছে পাগল।।
রাউৎখামার গ্রামে মেতেছে সকল।
তারা সবে প্রেমে মেতে বলে হরিবোল।।
কেহ বলে দুর্লভ মধুর হরিবোল।
তবে কেন হীরামন হ’য়েছে পাগল।।
সবে মিলি দেখিয়াছি ঠাকুরের রূপ।
আমরা জানি যে তিনি স্বয়ং স্বরূপ।।
সব হরিবোলা করে সংসারের কার্য।
হীরামন কি জন্য করিল কার্য ত্যাজ্য।।
কেহ ভাল কেহ মন্দ করে কানাকানি।
যাহার যেমন মন সে কহে তেমনি।।
কেহ বলে ও দেখেছে প্রভু হরিচাঁদ।
স্বয়ং দর্শনে হ’ল কৃষ্ণ প্রেমোন্মাদ।।
হীরামন কার্য ত্যাগী দেখিয়া বিশেষ।
ঠাকুরের প্রতি কারু জন্মিল বিদ্বেষ।।
শ্রীচৈতন্য বালা হীরামনের সে খুড়া।
ঠাকুরের প্রতি দ্বেষ করে সেই বুড়া।।
শ্রীঅক্রুরচন্দ্র বালা শ্রীগুরুচরণ।
কনিষ্ঠ শ্রীকোটিশ্বর অতি সুলক্ষণ।।
ঠাকুরের প্রিয় ভক্ত তিন সহোদর।
তাহারা বলেন প্রভু স্বয়ং অবতার।।
প্রভুর সঙ্গেতে তারা ভ্রমে সর্বক্ষণ।
প্রভুর সঙ্গেতে করেন নাম সংকীর্তন।।
ভক্তি বাধ্য মহাপ্রভু সেই বাড়ী যান।
তাহারা বলেন ইনি স্বয়ং ভগবান।।
মনে নাহি কোন দ্বেষ হীরামন ব’লে।
তারা বলে বংশের ভাজন এই ছেলে।।
রত্নগর্ভে জন্মিয়াছে মহারাজ পুত্র।
এ হইতে বালাবংশ হইবে পবিত্র।।
কার্যত্যাগী হীরামন করে হরিনাম।
কতদিনে দৈবযোগে হইল ব্যারাম।।
জ্বর হ’য়ে ছ’মাস পর্যন্ত হ’ল ভোগ।
উদরে হইল প্লীহা যকৃতাদি রোগ।।
অদ্য মরে কল্য মরে প্রাণ ওষ্ঠাগত।
এই রোগে ক্রমে ক্রমে হ’ল মৃতবত।।
একদিন ডেকে বলে শ্রীচৈতন্য বালা।
পাগলারে ল’য়ে তোরা ওঢ়াকাঁদি ফেলা।।
রোগে মরে তবু বেটা ঔষধ না খায়।
আমাদের কথা নাহি শুনে দুরাশয়।।
আমাদের সংসারে কার্য নাহি করে।
আমরা কেহত’ নয় ও কার বাড়ী মরে।।
অসার সংসার বলে কেহ কারু নয়।
যত বেটা মতুয়ারা এই কথা কয়।।
মতুয়া হইল এরা কি ধন পাইয়া।
বেদবিধি না মানে ফিরিছে লাফাইয়া।।
কেবা কার, কেবা কার, কার জন্য কাঁদে।
আত্ম স্বার্থ সমর্পণ বাবা হরিচাঁদে।।
হরি বলে দিন রাতি করে সোরা সোরি।
বাবা যদি হরিচাঁদ যাক সেই বাড়ী।।
খুড়া জেঠা ভাই বন্ধু কেহ কারু নয়।
দেখি ওর কোন বাবা এখানে কুলায়।।
হয় নেও ওঢ়াকাঁদি নয় মল্লকাঁদি।
ও মরুক ম’তোরা করুক কাঁদাকাঁদি।।
হরিচাঁদ মৃত্যুঞ্জয় দোহে নাকি ব্রহ্ম।
এ মরা বাঁচাতে পারে তবে জানি মর্ম।।
মরা গরু বাঁচাইয়া জহুরি প্রকাশ।
এই মরা বাঁ’চায়ে লউক হরিদাস।।
শুনিয়া এতেক বাণী কেহ কেহ কয়।
ভাল কথা বলেছ হে বালা মহাশয়।।
উহার কারণে মায়া করা নিরর্থক।
গতপ্রাণী জন্যে আর করিও না শোক।।
ডুবু তরী যদি হরিচাঁদ করে রক্ষা।
কেমন ঠাকুর তবে বুঝিব পরীক্ষা।।
তিলক মণ্ডল ভৃত্য সেই ডেকে বলে।
পাগলারে ওঢ়াকাঁদি আমি আসি ফেলে।।
এতবলি তিলক সে সাজাইল তরী।
হীরামনে ল’য়ে গেল ওঢ়াকাঁদি বাড়ী।।