Page: 155
শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৫৫
আমরা চলেছি হাটে হারে বেটা বোকা।
নৌকার উপরে কেন উঠিলি খামকা।।
আর একজন এক বোঝা ল’য়ে এল।
একাকী সে বোঝা সে নামা’তে নারিল।।
পাগল বলেছে রাই তুই ত’ বর্বর।
দাদার মাথার বোঝা শীঘ্র করি ধর।।
রাই এসে সেই বোঝা শীঘ্র নামাইল।
সাহা বলে তোমরা কোথায় যাবে বল।।
রাই বলে যা’ব মোরা মধুমতী পারে।
সাহা বলে উঠ দোঁহে দিব পার করে।।
সেই নৌকা পরে গিয়া উঠিল পাগল।
মুখে বলে জয় হরি গৌর হরি বল।।
পাগল বলেছে রাই হওগে কান্ডারী।
তুমি গিয়া হাল ধর আমি দাঁড় ধরি।।
সাহাজীরা বলে কেন তোমরা বাহিবে।
আমরা করিব পার বসে থাক এবে।।
পাগল তাহা না শুনি হাল গিয়া ধরে।
রাই গিয়া দাঁড় ধরে আগা নৌকা পরে।।
পাগল ধরিয়া হাল ঘুরাইছে নাও।
বলে রাই হরি বলে জোর দিয়া বাও।।
সাহাজীরা কয়জন জোরে টানে বৈঠে।
পাগল বলেছে রাই দাঁড় ধর এটে।।
অতি বেগে নৌকা চলে কান্ডারী পাগল।
কিনারের লোক দেখে বলে হরিবোল।।
জয় হরি বল মন গৌর হরি বোল।
রাম রাম মহাধ্বনি করিছে পাগল।।
এইমত পার হয় দশ বারো বার।
নদী মধ্যে নৌকা ঘুরাইছে চক্রাকার।।
সাহাজীরা বাক্য হত হ’য়েছে বিহ্বলা।
পাগল বলেছে হাটে যেতে নাই বেলা।।
এত বলি নৌকা নিল পশ্চিম কিনারে।
লম্ফ দিয়া পাগল পড়িল গিয়া তীরে।।
নৌকা বাহে সাহাজীরা হ’য়ে জ্ঞানহারা।
পাগল বলেন কোথা বেয়ে যাস তোরা।।
চৈতন্য পাইয়া সাহাজীরা করে মানা।
আমাদের ছেড়ে প্রভু যেওনা যেওনা।।
কূলে উঠে সাহাজীরা শ্রীচরণে পড়ে।
বলে প্রভু আর বার উঠ নৌকা পরে।।
হাটে না যাইব মোরা নৌকায় এসহ।
আজ নিশি আমাদের বাসায় বঞ্চহ।।
প্রভু কহে হাট কর পুনঃ যদি আসি।
তোমাদের বাসায় বঞ্চিব এক নিশি।।
সাহারা অনেক কষ্টে বাক্যে দিল সায়।
বলে প্রভু দয়া করে রেখ অই পায়।।
হাট শেষ বেলা শেষ এমন সময়।
দোকান পাতিল হাটে করিতে বিক্রয়।।
বহুতর খরিদ্দার জুটিল দোকানে।
কোন মাল কোন মূল্য কিছু নাহি শুনে।।
ওজন করিতে বসে ওজন করয়।
ক্রেতাগণ মনমত মূল্য দিয়া যায়।।
বিক্রয় করিতে মাল যত এনেছিল।
সকল বিক্রয় হ’ল কিছু না রহিল।।
অসম্ভব একই কাজ বিক্রি সব দ্রব্য।
অদ্যকার হাটে হৈল চতুর্গুণ লভ্য।।
তারা হ’ল হরি ভক্ত সাধুর সমাজ।
রচিল তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।
সংসার রঙ্গ ভূমি।
পয়ার।
আর একদিন গিয়া কার্তিকের ঘরে।
কার্ত্তিক কার্ত্তিক বলে ডাকে উচ্চৈঃস্বরে।।
অম্বিকারে বলে মাগো মোরে খেতে দেও।
কার্ত্তিক কোথায় গেছে ডাকিয়া আনাও।।
অম্বিকা বলেছে আমি কিবা খেতে দিব।
খুদ সিদ্ধ করিয়াছি কিবা খাওয়াইব।।
পাগল বলেছে মাগো খুদ কৃষ্ণ খাদ্য।
এনে দে মা শীঘ্র আমি খা’ব খুদ সিদ্ধ।।
খুদ সিদ্ধ এনে দিল পাগলের ঠাই।
খেয়ে বলে মাগো আমি বড় মিষ্ট খাই।।
পাগলের সিংহধ্বনি কার্ত্তিক শুনিল।
কিঞ্চিৎ বিলম্বে পাগলের কাছে এল।।
বলেছে কার্ত্তিক তুই থাকিস কোথায়।
কার্ত্তিক বলেন আমি ছিলাম সভায়।।
অদ্য আমি গিয়াছিনু গ্রাম্য নিমন্ত্রণে।
স্বজাতির মধ্যে আমি ছিলাম ভোজনে।।
পাগল বলে স্বজাতি তুই ক’স কারে।
চক্ষে হস্ত বুলাইয়া বলে পুনঃ যারে।।
শীঘ্র করি দেখে আয় রে বর্বর বেটা।
দেখে আয় সভাতে মানুষ আছে কেটা।।